সম্প্রতি আওয়ামী লীগ প্রতিনিধিদলের ভারত সফর ইস্যুতে জাতীয় নির্বাচন ঘিরে বিএনপির নানা অভিযোগের প্রেক্ষিতে ক্ষমতাসীন দলের সাধারণ সম্পাদক, সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের বিএনপির প্রতি পাল্টা প্রশ্ন ছুঁড়ে দিয়ে বলেছেন, ‘ভারত কি আমাদের ক্ষমতায় বসাবে? পঁচাত্তর পরবর্তী সময়েও তারা আমাদের কোনও বিষয় নিয়ে হস্তক্ষেপ করেনি। ২০০১ সালে আমরা নির্বাচনে হেরেছিলাম। ভারত কি আমাদের জেতাতে চেয়েছে? তারা তো কোনও হস্তক্ষেপ করেনি।’
বৃহস্পতিবার (২৬ এপ্রিল) বিকেলে ধানমন্ডিতে আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনার রাজনৈতিক কার্যালয়ে দলের সম্পাদকমণ্ডলীর বৈঠক শেষে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে তিনি এসস কথা বলেন।
ওবায়দুল কাদের বলেন, ‘বাংলাদেশের নির্বাচন হবে অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ। অতীতেও কি কখনও ভারত কাউকে ক্ষমতায় বসিয়েছে? ভারত একটি বৃহৎ গণতান্ত্রিক দেশ। মোদী সরকারের সঙ্গে নির্বাচন নিয়ে আমাদের কোনও কথা হয়নি। এটা ছিলো পার্টি টু পার্টি সংলাপ। আমাদের যতটুকু বলতে হয় বলেছি, আমরা নির্বাচনে জয়লাভ করবো। এর বাইরে কোনও কথা হয়নি। এটা কার্টেসির ব্যাপার। কিন্তু মোদী সাহেব তো কিছুই বলেননি। আমরা আমাদের সম্পর্ক কীভাবে আরও ভাল করা যায় সেসব বিষয় নিয়ে কথা বলেছি।’
মন্ত্রী বলেন, ‘আমাদের জাতীয় স্বার্থে ভারতে যখন যে সরকারই আসবে তাদের সাথে সম্পর্ক ভালো রাখতে হবে।’
আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আরও বলেন, ‘ভারতের প্রধানমন্ত্রীর সাথে ৩২ মিনিটের মতো আলোচনা হয়েছে, আন্তরিক পরিবেশে। ভারতের ক্ষমতাসীন দল যতটা সম্মান আমাদের আওয়ামী লীগ প্রতিনিধিদলকে দিয়েছে সেটার সঙ্গে আমরা কতটা প্রাসঙ্গিক, আমরা দেশের জনগণের স্বার্থকেই সবচেয়ে বেশি গুরুত্ব দিয়েছি। মোদী সাহেব আমাদের কথা মনোযোগ দিয়ে শুনেছেন।’
তিনি বলেন, ‘জনতা পার্টির সাধারণ সম্পাদক রাম মাধবকে বাংলাদেশ সফরের জন্য আমন্ত্রণ জানিয়েছি। আমরা আশা করছি তাদের সিনিয়র নেতারা বাংলাদেশ সফরে আসবেন।’
কাদের বলেন, ‘আমরা তিস্তা, রোহিঙ্গা কোনটাই বাদ দেইনি। দেশের স্বার্থে এসব কথা তুলে ধরেছি। আমরা স্পষ্ট করে বলেছি আমাদের সীমান্তকে কোনও সন্ত্রাসীগোষ্ঠীকে ব্যবহার করতে দেবো না। এ বিষয়টি ভালো করে তুলে ধরেছি।’
তিনি বলেন, ‘তিস্তার পানির জন্য আমাদের দেশে প্রচুর মানুষ হাহাকারে আছে। এ অবস্থায় ভারতের প্রধানমন্ত্রীর দৃষ্টি আকর্ষণ করেছি। আমরা বিশ্বাস করি তিস্তা চুক্তি যদি হয় তাহলে আমাদের দেশের জনগণ ইতিবাচক সাড়া ফেলবে।’
ওবায়দুল কাদের বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রী দেশে আসলেই নির্বাচন পরিচালনা কমিটির বৈঠক অনুষ্ঠিত হবে। তখন তাদের দায়িত্ব বণ্টন করে দেয়া হবে। আমরা গাজীপুর ও খুলনা সিটি করপোরেশন নির্বাচন নিয়ে আলোচনা করেছি। এখানে আমরা স্পষ্ট করে বলেছি এই দুই এলাকার যারা ঢাকায় আছেন তারাই শুধু নির্বাচনের প্রচারণায় অংশ নেবেন। অন্য এলাকার কোনও লোক ওইসব এলাকায় যাবেন না। যেন কোনও প্রকারে আচরণবিধি লঙ্ঘন না হয়। যেন ওইসব এলাকার জনমনে কোনও বিভ্রান্তি সৃষ্টি না হয়।’
তিনি বলেন, ‘গাজীপুর এবং খুলনা সিটি করপোরেশন নির্বাচনেও নির্বাচন কমিশনার স্বাধীনভাবে দায়িত্ব পালন করবেন। এখন সরকার যা যা করা দরকার তাই করবে। নির্বাচন কমিশনারকে সর্বাত্মক সহযোগিতা করা হবে।’
সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে কাদের বলেন, ‘দেশের জনগণ না চাইলে কি আমরা জোর করে ক্ষমতায় থাকবো? জোর করে ক্ষমতায় থাকা যায় না। আর কোন বিদেশী শক্তিও কাউকে ক্ষমতায় বসাতে পারে না। বিদেশীরা আমাদের শুধুমাত্র বন্ধু হতে পারে, ক্ষমতায় রাখা না রাখার মালিক জনগণ।’
বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার অসুস্থতা নিয়ে মির্জা ফখরুল ইসলামের বক্তব্যের সমালোচনা করে কাদের বলেন, ‘ফখরুল ইসলাম কোনও বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক কিনা জানতে চাই। বেগম খালেদা জিয়া কতটুকু অসুস্থ কিছুদিন আগেই মানুষ দেখেছে। এরপরও যদি জেলহাজতের ভেতরে উনি অসুস্থ হন তাহলে তাঁর সুচিকিৎসার জন্য যতটুকু করা দরকার আমরা করবো। কেউ চিকিৎসার অভাবে মারা যাক সেটা শেখ হাসিনার সরকার চায় না।’
বিএনপি’র ভারপ্রাপ্ত চেয়ারপারসন তারেক রহমানের পাসপোর্ট নিয়ে বিএনপি নেতাদের বক্তব্যের কঠোর সমালোচনা করে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক বলেন, ‘বিএনপি তারেক রহমানের পাসপোর্ট নিয়ে যা করছে! সকালে একটা বলছে বিকেল বলছে অন্যটা। খাদের কিনারায় এসে তারা লাফালাফি করছে। চিকিৎসার জন্য লন্ডনে গিয়ে এখন রাজনৈতিক আশ্রয় নিয়েছে তারেক রহমান। এখন সেটা ফাঁস হয়ে গেছে। এখন ফান্দে পড়িয়া বগা কান্দে রে!’ বিএনপি এখন পরিপূর্ণ মিথ্যাবাদী দলে পরিণত হয়েছে বলেও মন্তব্য করেন তিনি।
এ সময় উপস্থিত ছিলেন, আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুব উল আলম হানিফ, জাহাঙ্গীর কবির নানক, আব্দুর রহমান, সাংগঠনিক সম্পাদক আহমদ হোসেন, আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিম, এনামুল হক শামীম, ব্যারিস্টার মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেল, প্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদক হাছান মাহমুদ, দফতর সম্পাদক আবদুস সোবহান গোলাপ, বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিষয়ক সম্পাদক প্রকৌশলী আব্দুস সবুর, বন ও পরিবেশ বিষয়ক সম্পাদক দেলোয়ার হোসেন প্রমুখ।
Leave a Reply