(আজকের দিনকাল ):নির্বাচনি অর্থবছরে ভোটারদের সামনে জনগুরুত্বপূর্ণ দুই শতাধিক প্রকল্প তুলে ধরা হচ্ছে। ২০২৩-২৪ অর্থবছরে বৈদেশিক ঋণ পাওয়ার আশায় সর্বোচ্চসংখ্যক নতুন প্রকল্প যুক্ত করা হচ্ছে বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচিতে (এডিপি)। মহাসড়ক নির্মাণ ও সম্প্রসারণসহ এসব প্রকল্প বাস্তবায়নে ব্যয় হবে প্রায় সাড়ে ৬ লাখ কোটি টাকা। এর মধ্যে বৈদেশিক ঋণ ধরা হয়েছে ৪ লাখ ১০ হাজার ৬০০ কোটি টাকা। কিন্তু বাস্তবতা হলো-এসব প্রকল্পের জন্য সরকারের হাতে এখন কোনো অর্থের জোগান নেই। উন্নয়নযোগী সহযোগী দেশগুলোর সহজ দৃষ্টি আকর্ষণের সুবিধার্থে প্রকল্পগুলো তুলে ধরা হবে।
এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে পরিকল্পনা প্রতিমন্ত্রী ড. শামসুল আলম রোববার বলেন, এ সংক্রান্ত প্রকল্পগুলো এডিপিতে যুক্ত থাকলে সরকারের জন্য ভালো হয়। উন্নয়ন সহযোগীদের সরকারের অগ্রাধিকার প্রকল্পের নাম জানা ছাড়াও সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়গুলো বৈদেশিক অর্থ সংগ্রহ কার্যক্রম ত্বরান্বিত করতে পারে। তালিকাভুক্ত ২১৬টি উন্নয়ন প্রকল্পের মধ্যে উচ্চ অগ্রাধিকারপ্রাপ্ত প্রকল্প রয়েছে ১৭৪টি, মধ্যম অগ্রাধিকারে আছে ৩৯টি এবং নিম্ন অগ্রাধিকারে আছে ৩টি প্রকল্প। চলতি অর্থবছরের মূল এডিপিতে এ তালিকায় ছিল ১৫০টি প্রকল্প। পরে সংশোধিত এডিপিতে চারটি বেড়ে দাঁড়ায় ১৫৪টিতে। এ হিসাবে আগামী অর্থবছর বৈদেশিক ঋণনির্ভর প্রকল্প বাড়ছে ৬২টি। এ সংখ্যা ১০ বছরের মধ্যে সর্বোচ্চ।
তালিকায় সাধারণ সরকারি সেবা খাতে প্রকল্প রয়েছে ১১টি। এছাড়া জনশৃঙ্খলা ও সুরক্ষা খাতের ছয়টি, শিল্প ও অর্থনৈতিক সেবা খাতে ১৩টি, কৃষিতে ১৪টি, বিদ্যুৎ ও জ্বালানিতে ২৮টি, পরিবহণ ও যোগাযোগে ৫৪টি এবং স্থানীয় সরকার ও পল্লি উন্নয়নে ১০টি প্রকল্প রয়েছে। আরও আছে পরিবেশ-জলবায়ু পরিবর্তন এবং পানিসম্পদে নয়টি, গৃহায়ন ও কমিউনিটি সুবিধাবলিতে ৩১টি, স্বাস্থ্যে পাঁচটি, শিক্ষায় ১৮টি, বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তিতে পাঁচটি এবং সামাজিক সুরক্ষা খাতে রয়েছে ছয়টি প্রকল্প।
পলিসি রিসার্স ইনস্টিটিউটের (পিআরআই) নির্বাহী পরিচালক ড. আহসান এইচ মনসুর বলেন, এরকম প্রকল্পের তালিকা এডিপিতে যুক্ত করার ফলে উন্নয়ন সহযোগীদের জন্য কিছুটা সুবিধা হয়। তারা দেখে নিতে পারে সরকারের অগ্রাধিকার প্রকল্পের নাম। অপরদিকে আন্তর্জাতিকভাবে ঋণপ্রাপ্তির ক্ষেত্রে সরকারের পক্ষ থেকে নেগোশিয়েশনে (আলাপ-আলোচনা) সুবিধা হয়।
সূত্র জানায়, আগামী অর্থবছরের এডিপিতে যুক্ত করা তালিকায় উচ্চ অগ্রাধিকারে রয়েছে স্বাস্থ্য, জনসংখ্যা ও পুষ্টি সেক্টর কর্মসূচি। ২০২৪ সালের জুলাই থেকে ২০২৯ সালের জুনের মধ্যে এটি বাস্তবায়নের লক্ষ্য রয়েছে। কর্মসূচিটি বাস্তবায়নে মোট ব্যয় ধরা হয়েছে ২ লাখ ৭৫ হাজার ৮২৭ কোটি টাকা। এর মধ্যে বৈদেশিক ঋণ হিসাবে ধরা হয়েছে ৫৬ হাজার ৫৫৬ কোটি ১৬ লাখ টাকা। এছাড়া ঢাকা ম্যাস র্যাপিড ট্রানজিট ডেভেলপমেন্ট প্রজেক্ট (এমআরটি লাইন-৫) সাউদার্ন রুট প্রকল্প। এটি ২০২৪ সালের জানুয়ারি থেকে শুরু করে ২০৩০ সালের ডিসেম্বরের মধ্যে বাস্তবায়নের লক্ষ্য রয়েছে। প্রকল্পটির মোট ব্যয় ধরা হয়েছে ৪৮ হাজার ১২৫ কোটি টাকা। এর মধ্যে বৈদেশিক ঋণ হিসাবে ধরা হয়েছে ৩১ হাজার ৪৩১ কোটি টাকা। আরও আছে ভাঙ্গা-যশোর-বেনাপোল মহাসড়ককে চার লেনে উন্নীতকরণ প্রকল্প। এটি চলতি বছর থেকে ২০২৭ সালের ডিসেম্বরের মধ্যে বাস্তবায়নের লক্ষ্য। প্রকল্পটি বাস্তবায়নে ব্যয় ধরা হয়েছে ১৩ হাজার ৮৪১ কোটি টাকা। এর মধ্যে বৈদেশিক ঋণ হিসাবে ধরা হয়েছে ১১ হাজার ৮২ কোটি টাকা। সাসটেইনেবল অ্যান্ড ইন্টিগ্রেটে রুরাল ট্রান্সপোর্ট প্রজেক্টটি ২০২৮ সালের জুনের মধ্যে বাস্তবায়নের লক্ষ্য রয়েছে। এটি বাস্তবায়নে ব্যয় ধরা হয়েছে ১৩ হাজার কোটি টাকা। এর মধ্যে বৈদেশিক ঋণ থেকে ধরা আছে ১০ হাজার কোটি টাকা।
বৈদেশিক ঋণ পাওয়ার জন্য তালিকাভুক্ত আরও উল্লেখযোগ্য কয়েকটি প্রকল্প হচ্ছে-ভাঙ্গা জংশন (ফরিদপুর) থেকে বরিশাল হয়ে পায়রা বন্দর ও কুয়াকাটা পর্যন্ত ব্রডগেজ রেললাইন নির্মাণ। এছাড়া বাংলাদেশ রেলওয়ের জয়দেবপুর-ময়মনসিংহ-জামালপুর সেকশনে বিদ্যমান রেললাইন সমান্তরাল একটি ডুয়েলগেজ রেললাইন নির্মাণ প্রকল্প। আরও আছে কালুরঘাট কর্ণফুলী নদীর ওপর রেল কাম রোড সেতু নির্মাণ, রুরাল কানেক্টিভিটি ইমপ্রুভমেন্ট প্রজেক্ট, পার্বত্য চট্টগ্রামে টেকসই সামাজিক সেবা প্রদান, দর্শনা স্থলবন্দর উন্নয়ন এবং হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের গ্রাউন্ড হ্যান্ডলিংয়ের সক্ষমতা বৃদ্ধি প্রকল্প।-যুগান্তর
Leave a Reply