(আজকের দিনকাল):অতীতের আন্দোলন ব্যর্থ হওয়ার পেছনে ঢাকা মহানগর বিএনপিকে দায়ী করে আসছে তৃণমূল নেতাকর্মীরা। বিষয়টি গুরুত্ব দিয়ে এবার রাজধানীতে জোরদার আন্দোলন গড়ে তুলতে নানা পদক্ষেপ নিয়েছে দলটির হাইকমান্ড। চূড়ান্ত আন্দোলনের আগে সাংগঠনিক শক্তির মহড়া দিতে মাঠে নামছে মহানগরের নেতাকর্মীরা। ছয় দিনের কর্মসূচির প্রথম দিন আজ মহানগর উত্তর ও দক্ষিণের উদ্যোগে পৃথক পদযাত্রা সর্বশক্তি দিয়ে সফল করতে চান তারা।
এজন্য কয়েকদিন ধরে মহানগরের কেন্দ্রীয় নেতাদের পাশাপাশি অঙ্গ-সহযোগী সংগঠনের সঙ্গেও দফায় দফায় বৈঠক করেছেন বিএনপির দায়িত্বশীল নেতারা। সেখানে শান্তিপূর্ণ কর্মসূচি সফলে নানা দিকনিদেশনা দেওয়া হয়। এ কর্মসূচিকে তারা ‘ফাইনালের’ আগে ‘সেমিফাইনাল’ বলে আখ্যা দিয়েছেন। এতে উত্তর-দক্ষিণের কেন্দ্রসহ থানা-ওয়ার্ডের নেতারা কেউ অংশ না নিলে তার বিরুদ্ধে সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেওয়ারও নির্দেশনা রয়েছে। সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে এসব তথ্য।
গত শনিবার চার পর্বে ৮২ সাংগঠনিক জেলায় জনসমাবেশ কর্মসূচি ঘোষণা করে বিএনপি। যা শেষ হবে ২৬ মে। এর মধ্যে ঢাকা মহানগর উত্তর ও দক্ষিণ পৃথকভাবে ছয় দিনের কর্মসূচি পালন করবে। আজ মহানগর দক্ষিণের উদ্যোগে বেলা ৩টায় বাসাবো বালুর মাঠ থেকে মালিবাগ কমিউনিটি সেন্টার পর্যন্ত পদযাত্রা করবে।
এতে প্রধান অতিথি হিসাবে থাকবেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাস। একই সময়ে উত্তরের উদ্যোগে শাহজাতপুর সুবাস্তু টাওয়ারের সামনে থেকে শুরু করে মালিবাগ আবুল হোটেল পর্যন্ত পদযাত্রা বের করবে। এতে প্রধান অতিথি হিসাবে থাকবেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন।
ঢাকা মহানগর উত্তর বিএনপির সদস্য সচিব আমিনুল হক বলেন, ‘যে কোনো কর্মসূচি সফল করতে নেতাকর্মীরা প্রস্তুত রয়েছে। আমরা সফলও হবই। ইতোমধ্যে ঢাকায় পদযাত্রা, মানববন্ধন ও সমাবেশে সে প্রমাণও দিয়েছে নেতাকর্মীরা। পদযাত্রা ও জনসমাবেশের নতুন কর্মসূচিতেও অংশ নেওয়ার জন্য দলীয় নেতাকর্মীদের পাশাপাশি সাধারণ মানুষও উন্মুখ হয়ে আছে। আশা করছি, বিপুল লোকসমাগম হবে।’
ঢাকা মহানগর দক্ষিণ বিএনপির সদস্য সচিব রফিকুল আলম মজনু বলেন, ‘বিএনপির কর্মসূচির সঙ্গে সাধারণ মানুষেরই সম্পৃক্ততা অনেক বেশি। এর মধ্য দিয়ে জনগণকে এটাই বোঝাতে চাই যে, আগামী দিনে নির্দলীয় ও নিরপেক্ষ ব্যাক্তির অধীনে ছাড়া কোনো নির্বাচনে আমরা যাব না। বিগত কর্মসূচিতেও হাজার হাজার সাধারণ মানুষ অংশগ্রহণ করেছে। কারণ বিএনপির দাবির সঙ্গে সবাই একমত। দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি, বিদ্যুৎ-গ্যাসের মূল্য বৃদ্ধিসহ সরকারের সব কর্মকাণ্ডে মানুষ এখন অতিষ্ঠ। তারা ভোট দিতে পারে না। আশা করি, সব কর্মসূচি এখন দিন দিন বড় হবে।’
বিএনপির একাধিক নীতিনির্ধারক জানান, আন্দোলন-সংগ্রামের জন্য রাজধানীকে সবচেয়ে গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে। তাই এবার চূড়ান্ত আন্দোলন হবে ঢাকা ঘিরেই। সে লক্ষ্যে রাজধানীতে সংগঠনকে শক্তিশালী করতে নানামুখী উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। চলমান আন্দোলনে মহানগরীর নেতাদের কঠিন পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হতে হবে। কেননা আন্দোলনের কাঙ্ক্ষিত ফসল ঘরে তোলার বিষয়টি নির্ভর করছে ঢাকা মহানগরে আন্দোলনের ওপর।
তারা আরও বলেন, অনেকদিন ধরেই তৃণমূল নেতাদের অভিযোগ, দীর্ঘদিনের পোড়খাওয়া বেশ কজন প্রভাবশালী নেতা দায়িত্বে থাকলেও বিগত সরকারবিরোধী আন্দোলনে তেমন কার্যকর ভূমিকা দেখাতে পারেনি ঢাকা মহানগর বিএনপি। ঢাকার নেতাদের ব্যর্থতার কারণেই দেশব্যাপী জোরালো আন্দোলন হলে তার সুফল ঘরে আনা যায়নি। এ নিয়ে তৃণমূল নেতারা অসন্তুষ্ট। ফলে ঢাকা মহানগর বিএনপি নিয়ে নতুনভাবে চিন্তা করে দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান।
ত্যাগী ও পরীক্ষিত নেতাদের হাতে নেতৃত্ব দেওয়া হয়। যে কোনো সময়ের চেয়ে ঢাকা মহানগর উত্তর ও দক্ষিণ বিএনপি এখন যথেষ্ট শক্তিশালী। তবে মহানগর বিএনপির সক্ষমতা নিয়ে আরও নিশ্চিত হতে চাইছে হাইকমান্ড। তাই চূড়ান্ত আন্দোলনের আগে আরেকটি মহড়া দিয়ে পরীক্ষা নিতে চান। এজন্যই পৃথকভাবে ছয় দিনের কর্মসূচি দেওয়া হয়েছে।
সূত্রমতে, কর্মসূচি সফল করতে এবার বিএনপির সঙ্গে অঙ্গ-সহযোগী সংগঠনের সমন্বয়ের বিষয়টির ওপরও জোর দিয়েছে সাংগঠনিক দায়িত্বপ্রাপ্ত নেতারা। আজকের পদযাত্রাসহ ছয় দিনের কর্মসূচিতে নেতাকর্মীদের সর্বোচ্চ উপস্থিতি নিশ্চিত করতে অঙ্গ-সহযোগী সংগঠনের শীর্ষনেতাদের সঙ্গেও কয়েক দফা বৈঠকও করেছে মহানগরের নেতারা।
যুবদল ঢাকা মহানগর দক্ষিণের সদস্য সচিব খন্দকার এনামুল হক এনাম বলেন, ‘আমরা দীর্ঘদিন একটি অবৈধ সরকারের অধীনে আছি। নির্যাতন তো চলছেই। এখন নেতাকর্মীদের মধ্যে একটা স্পৃহা কাজ করছে যে, এবার এই সরকারকে ক্ষমতা থেকে উৎখাত করে একটা গণতান্ত্রিক সরকার এ দেশে কায়েম হবে।
মিনিমাম আমরা যেন শান্তিতে থাকতে পারি। সে কারণে নেতাকর্মীদের মধ্যে উচ্ছ্বাস অনেক বেশি। প্রস্তুতিও ব্যাপক। সরকারকে সরাতে না পারলে সাজা হবে, জেলে থাকতে হবে, নির্যাতন হবে-এসব জেনেশুনেই নেতাকর্মীরা এখন সিরিয়াস। তাই মহানগরের কর্মসূচিতে যুবদলের নেতাকর্মীদের উপস্থিতি অনেক বেশি থাকবে।’
ছাত্রদল ঢাকা মহানগর উত্তরের সাধারণ সম্পাদক মো. রাসেল বাবু বলেন, উত্তর ছাত্রদলের আওতাধীন সব ইউনিটের সর্বোচ্চসংখ্যক নেতাকর্মীর উপস্থিতি থাকবে। আমাদের সেই প্রস্তুতি রয়েছে।’
‘উচ্চ আদালতের নির্দেশনাকে অধীনস্থ আদালত এবং সরকারের অবজ্ঞা, গায়েবি মামলায় নির্বিচারে গ্রেফতার, মিথ্যা মামলা ও পুলিশি হয়রানি, দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি, বিদ্যুতের লোডশেডিং, আওয়ামী সরকারের সর্বগ্রাসী দুর্নীতির প্রতিবাদে এবং ১০ দফা দাবি বাস্তবায়নে’ ছয় দিনের কর্মসূচি দিয়েছে ঢাকা মহানগর উত্তর ও দক্ষিণ বিএনপি। আজকের পদযাত্রা ছাড়াও কর্মসূচির মধ্যে রয়েছে-১৯ মে উত্তরের উদ্যোগে শ্যামলী ক্লাব মাঠে জনসমাবেশ। দক্ষিণের উদ্যোগে ২০ মে মতিঝিলের পীরজঙ্গি মাজারের সামনে সমাবেশ।
দক্ষিণের উদ্যোগে ২৩ মে ধানমন্ডি থেকে পদযাত্রা। ওইদিন একই সময়ে উত্তরের উদ্যোগে গাবতলী থেকে শ্যামলী পর্যন্ত হবে পদযাত্রা। দক্ষিণের উদ্যোগে ২৬ মে যাত্রবাড়ীতে জনসমাবেশ এবং উত্তরের উদ্যোগে ২৭ মে উত্তরায় জনসমাবেশ।-ডেস্ক
Leave a Reply