(আজকের দিনকাল):সৌদি আরবের আজওয়া সুমিষ্ট খেজুর চাষ করে সফল হয়েছেন যশোরের ঝিকরগাছা উপজেলার নির্বাসখোলা ইউনিয়নের বেড়ারো পানি গ্রামের কৃষক বাবুল হোসেন (৫০)। চার বছর আগে ইউটিউবে সৌদির আজওয়া খেজুর চাষ পদ্ধতি দেখে এই খেজুর চাষে উদ্বুদ্ধ হন তিনি। পরে কৃষক বাবুল হোসেন এক নিকট আত্মীয়ের কাছ থেকে কিছুসংখ্যক সৌদির পাকা আজওয়া খেজুর সংগ্রহ করেন। পরীক্ষামূলকভাবে খেজুরের বীজ নিজের দুই বিঘা জমিতে রোপণ করেন। গাছ বেঁচে যাওয়ায় নিজের জমিতে সৌদির খেজুরের বাণিজ্যিক চাষের স্বপ্ন দেখতে শুরু করেন বাবুল হোসেন। বর্তমানে তিনি দুই বিঘা জমিতে পাঁচ লাখ টাকা খরচ করে পাঁচ শতাধিক খেজুর গাছ রোপণ করেছেন। ইতিমধ্যে কয়েকটি গাছে ফল আসতেও শুরু করেছে। খেজুরের ব্যবসায়ীদের কাছে ফলন ধরা এক একটি খেজুর গাছের দাম উঠেছে এক লাখ টাকা করে। কৃষক বাবুল হোসেন জানান, প্রথমে ইউটিউবে সৌদির খেজুর চাষ পদ্ধতি দেখি। এরপর সৌদি প্রবাসী আমার এক নিকট আত্মীয়ের মাধ্যমে সৌদির কিছু আজওয়া খেজুর সংগ্রহ করে বীজ পরীক্ষামূলকভাবে রোপণ করি।
এরপর খেজুর গাছের চারা বড় হতে দেখে পরবর্তীতে আমি আরও চারশতাধিক বীজ রোপণ করি। বাবুল হোসেন বলেন, ইতিমধ্যে ঢাকা থেকে একজন ক্রেতা এসে বড় গাছের দাম এক লাখ টাকা বলে গেছেন। তবে আমি বিক্রি করবো না, আমি এখানে খেজুর উৎপাদন ও বাণিজ্যিকভাবে চাষ করবো।
এখানে গ্রামের আরও লোকের কর্মসংস্থান হবে। ব্যাংক বা এনজিও গাছের জন্য লোন দিতে চায় না। সেজন্য সংশ্লিষ্ট কৃষি বিভাগ যদি এগিয়ে এসে সহায়তা করে তবে যশোরের মাটিতে সৌদি খেজুরের ব্যাপক চাষ করা সম্ভব। তিনি দাবি করেন আজওয়া খেজুর গাছের পরাগায়ণ কৃষি বিভাগের থেকে করার কথা, তবে কৃষি বিভাগ তা করেনি, ফলে গাছের মৃত্যুর ঝুঁকি নিয়ে তাকেই পরাগায়ণ করতে হচ্ছে। নাভারণের বাসিন্দা আশরাফুল আলম বলেন, পার্শ্ববর্তী উপজেলায় আজওয়া খেজুরের চাষ হচ্ছে শুনে দেখতে এসেছি। আসলে যশোর জেলা খেজুর গাছের জেলা। এ জেলায় সৌদির খেজুর চাষ করা সম্ভব যদি সংশ্লিষ্ট কৃষি কর্মকর্তারা সহায়তা করেন এবং কৃষকদের পাশে থাকেন। এ ছাড়া গ্রামের বেকার যুবকেরা এ চাষে ঝুঁকলে যশোরের মাটিতে সৌদির আজওয়া খেজুরের ব্যাপক ফলনের সম্ভাবনা রয়েছে। এই চাষ ব্যাপক হারে শুরু হলে গ্রামের এক শ্রেণির মানুষের কর্মসংস্থানও সৃষ্টি হবে।
এ বিষয়ে ঝিকরগাছা উপজেলা কৃষি সমপ্রসারণ অফিসার আব্দুল্লাহ আল- মামুন বলেন, ইতিমধ্যে আমাদের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা বাবুল হোসেনের আজওয়া খেজুরের বাগান পরিদর্শন করেছেন। আমরা তাকে সার্বিক সহোযোগিতা করার জন্য চেষ্টা করছি। বিষয়টি সচিত্রভাবে আমাদের কৃষি বিভাগের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের জানানো হয়েছে। বাবুল হোসেনের দেখাদেখি অনেকেই স্বপ্ন বুনছেন যশোরের মাটিতে সৌদি খেজুরের বাণিজ্যিক চাষ করার। তবে ব্যাংক এনজিও এ খাতে লোন দিয়ে এবং সংশ্লিষ্ট কৃষি বিভাগ হস্তক্ষেপ করলে দেশের অর্থনীতিতে বড় ধরনের ভূমিকা রাখবে এ খেজুর চাষ, এমনটাই মনে করছেন কৃষি খাতে জড়িতরা। এবছর বাবুল প্রায় ৩ হাজার সৌদি আজওয়া খেজুরের বীজ রোপণ করে চারা তৈরির চেষ্টা করছেন। তিনি জানান, প্রতিটি চারা খেজুর গাছের দাম ধরা হচ্ছে ৩শ’ টাকা। এদিকে যশোরের বাঘারপাড়া ও মণিরামপুরেও পরীক্ষামূলক চাষ শুরু হয়েছে সৌদি খেজুরের।
Leave a Reply