নুর আলম সিদ্দিক, (আজকের দিনকাল ):প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আজ রাজধানীর আশকোনা এলাকার হাজী ক্যাম্পে হজ কর্মসূচি-২০২৩ (১৪৪৪ হিজরি) উদ্বোধন করেছেন।
হজ কর্মসূচির উদ্বোধন করে প্রধানমন্ত্রী বাংলাদেশের জনগণের জন্য হজযাত্রীদের কাছে দোয়া চেয়েছেন যাতে দেশের মানুষের ভাগ্য নিয়ে কেউ ছিনিমিনি খেলতে না পারেদ।
প্রথম হজ ফ্লাইটটি শনিবার বেলা ২টা ৪৫ মিনিটে হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে সৌদি আরবের উদ্দেশে ছেড়ে যাওয়ার কথা রয়েছে।
এ বছর বাংলাদেশ থেকে মোট ১ লাখ ২২ হাজার ২২১ জন হজযাত্রী পবিত্র হজ পালন করতে যাচ্ছেন। কভিড-১৯ বিধিনিষেধের কারণে গত বছর বাংলাদেশ থেকে হজযাত্রীর সংখ্যা ছিল ৫৭,৫৮৫।
কভিড-১৯ মহামারীর আগে ২০১৯ সালে বাংলাদেশ থেকে ১২৭,১৯৮ জন হজ পালন করেছিলেন।
চাঁদ দেখা সাপেক্ষে ২৭ জুন হজ অনুষ্ঠিত হবে বলে আশা করা হচ্ছে।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘জাতির পিতা সরকারে এসেই হজ ব্যবস্থা যেন সুষ্ঠুভাবে হয় তার ব্যবস্থা নেন। তখন যুদ্ধবিধ্বস্ত দেশ। একটা টাকা রিজার্ভ মানি নেই। কারেন্সি নোট নেই। গোলায় খাবার নেই। এর মাঝে মানুষ যাতে অল্প খরচে হজ করতে যেতে পারেন সেই ব্যবস্থা তিনি নিয়েছিলেন। হিজবুল বাহার নামে একটি জাহাজ ক্রয় করে হজের ব্যবস্থা করেছিলেন।’
শেখ হাসিনা বলেন, ‘স্বাধীনতার পরপরই বঙ্গবন্ধু সৌদির বাদশাহর কাছে অনুরোধ করেছিলেন যাতে আমাদের দেশের মানুষ হজে যেতে পারেন। সৌদির বাদশাহও সেই ব্যবস্থা করে দিয়েছিলেন। অল্প খরচে হজে পাঠানোর ব্যবস্থা বঙ্গবন্ধু করে দিয়েছিলেন। ৭৫ পরে জিয়াউর রহমান ক্ষমতায় এসে সেই জাহাজটিটিকে প্রমোদতরীতে পরিণত করে। তখন হজ যাত্রা হতো না। এটা দুঃখজনক।’
তিনি বলেন, জাতির পিতা ছিলেন খাঁটি মুসলমান। মাত্র সাড়ে তিন বছরের সরকারে তিনি ইসলামের উন্নয়নে ব্যাপক পদক্ষেপ নেন। জাতির পিতা মুসলিম বিশ্বসহ আরব দেশগুলোর সাথে সুসম্পর্ক স্থাপন করেন। ১৯৭৩ সালে আরব-ইসরাইল যুদ্ধে বঙ্গবন্ধু আরব বিশ্বের পক্ষে সমর্থন ব্যক্ত করেন এবং সাহায্য পাঠান। যে মদের লাইসেন্স বঙ্গবন্ধু বন্ধ করে দিয়েছিলেন তা জিয়ার আমলে উন্মুক্ত করে দেওয়া হয়।
তিনি আরও বলেন, জাতির পিতা ইসলামের নামে স্বার্থন্বেষী মহলের বিরুদ্ধে সবসময়ই সোচ্চার ছিলেন। ১৯৭০ সালের সাধারণ নির্বাচনের আগে এক ঐতিহাসিক বেতার ভাষণে বঙ্গবন্ধু বলেছিলেন, আমরা ইনসাফের ইসলামে বিশ্বাসী। আমাদের ইসলাম হযরত নবী করীম (স.)-এর ইসলাম, যে ইসলাম জগতবাসীকে শিক্ষা দিয়েছে ন্যায় ও সুবিচারের অমোঘ মন্ত্র।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, অতীতে হজ পালনে দুর্ভোগ, হজের অব্যবস্থাপনা, মধ্যস্বত্বভোগীদের দৌরাত্ম্য, হজযাত্রীদের হয়রানি, ভিসা জটিলতা, ফ্লাইট বিপর্যয় ইত্যাদি সমস্যা ছিল নিত্য-নৈমিত্তিক। আমরা এ সমস্যা দূর করতে ই-হজ ব্যবস্থাপনা প্রবর্তন করেছি। ই-হজ ব্যবস্থাপনার আওতায় হজযাত্রীদের প্রাক-নিবন্ধন, নিবন্ধন, রিফান্ড, মক্কা রোড সার্ভিস, ই-হেলথ, ই-ভিসা, ফ্লাইট, হেল্পডেস্ক, কল সেন্টার, মোবাইল অ্যাপ, এজেন্সি প্রোফাইল ব্যবস্থাপনাসহ বিভিন্ন কার্যক্রম সম্পাদিত হয়েছে। ২০২২ সালে বাংলাদেশের হজ ব্যবস্থাপনা বিশ্বব্যাপী প্রশংসিত হয়েছে।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘প্রযুক্তির সাথে কাবার পথে’প্রতিপাদ্য ধারণ করে ডিজিটাল হজ ব্যবস্থাপনার উদ্যোগ নেওয়ার ফলে সেবা প্রদানকারী ও গ্রহণকারীর সঙ্গে সরাসরি ডিজিটাল সম্পর্ক স্থাপিত হয়েছে। মধ্যসত্ত্বভোগী-প্রতারক চক্রের দৌরাত্ম্য হ্রাস পেয়েছে। আমরা জনগণকে সময়োচিত, দায়িত্বশীল, স্বচ্ছ ও জবাবদিহিমূলক হজ ব্যবস্থাপনা উপহার দিতে পেরেছি।
তিনি বলেন, হজযাত্রীদের স্বাস্থ্য নিরাপত্তা নিশ্চিতে আমরা ই-হেলথ প্রোফাইল প্রবর্তন করেছি। সৌদি আরবে অসুস্থ হজযাত্রীদের সুশৃঙ্খলভাবে সেবা প্রদানে কিউ ব্যবস্থাপনা সিস্টেম চালু করা হয়েছে। হজযাত্রীরা কোনো প্রকার ভোগান্তি ছাড়াই সৌদি ই-ভিসা সিস্টেমের মাধ্যমে ভিসার আবেদন করে ভিসা সংগ্রহ করতে পারছেন।
ধর্ম প্রতিমন্ত্রী ফরিদুল হক খানের সভাপতিত্বে উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন- বেসরকারী বিমান পরিবহণ ও পর্যটন প্রতিমন্ত্রী মাহবুব আলী, সংসদ সদস্য হাবিব হাছান, ধর্ম বিষয়ক সচিক কাজী এনামুল হাসান এনডিসি, ঢাকায় নিযুক্ত সৌদি রাষ্ট্রদূত ঈসা বিন ইউসুফ আল দুহাইলান, হজ এজেন্সিস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (হাব) সভাপতি এম শাহাদাত হোসাইন তসলিম প্রমুখ।
Leave a Reply