(আজকের দিনকাল);রাজধানীসহ সারা দেশে সরকারি-বেসরকারি হাসপাতালে ডেঙ্গু রোগী বাড়ছে। ২০২২ সালের মে মাসে ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি রোগীর সংখ্যা ছিল মাত্র পাঁচ জন। আর এ বছর একই সময়ে সরকারি হিসেবে সেই সংখ্যা ১০ গুণ বেড়েছে। তবে প্রকৃত চিত্র আরো অনেক বেশি। বারবার ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হলে মৃত্যু ঝুঁকি থাকে। এডিস মশাবাহিত রোগ ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়ে দেশে গত ২৪ ঘণ্টায় একজন মারা গেছেন। এ নিয়ে এ বছর ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে ১৩ জনের মৃত্যু হলো।
বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকরা বলেন, মশা নির্মূল করা সম্ভব না। তবে নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব। প্রতি বছর যখন ডেঙ্গু ভয়াবহ রূপ নেয়, তখনই মশা মারা শুরু হয়। অযথা কোটি কোটি টাকা ব্যয় হয়। ডেঙ্গু নিয়ন্ত্রণে দীর্ঘমেয়াদি সমন্বিত পদক্ষেপ গ্রহণ করার পরামর্শ দিয়ে বিশেষজ্ঞরা বলেন, এবার এডিস মশা বেশি আক্রমণাত্মক হবে। এডিস মশার বংশবিস্তারের মধ্যে পরিবর্তন ঘটেছে। সাধারণত স্বচ্ছ পানিতে এডিস মশার জন্ম হয়। তবে নোংরা পানিতেও এডিস মশার বংশবিস্তার ঘটছে। সাধারণত জুন থেকে সেপ্টেম্বর— এই চার মাস ডেঙ্গুর প্রকোপ বেশি থাকত আগে, অক্টোবরে রোগী কমতে শুরু করত। এখন ১২ মাসই ডেঙ্গু রোগে আক্রান্ত রোগী হাসপাতালে আসছে। তবে এখন ডেঙ্গু রোগীর সংখ্যা বাড়ছে। রাজধানীতে সবচেয়ে বেশি রোগী। এছাড়া সারা দেশের শহর এলাকায়ও ডেঙ্গু রোগী বাড়ছে। গ্রামাঞ্চলেও ছড়িয়ে পড়েছে ডেঙ্গু। প্রশাসন ও জনগণসহ সবার সমন্বিত পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে এখন থেকেই। নইলে অদূর ভবিষ্যতে ডেঙ্গু ভয়াবহ রূপ নিতে পারে।
সর্বশেষ ডেঙ্গুতে আক্রান্ত মারা যাওয়া ব্যক্তি ঢাকার ইসলামী ব্যাংক হাসপাতালে চিকিৎসাধীন ছিলেন। গতকাল রবিবার স্বাস্থ্য অধিদপ্তর জানিয়েছে, শনিবার সকাল ৮টা থেকে রবিবার সকাল ৮টা পর্যন্ত ২৪ ঘণ্টায় ৩৩ জন রোগী দেশের বিভিন্ন হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন। এ নিয়ে চলতি মে মাসের ২১ দিনে হাসপাতালে ভর্তি ডেঙ্গু রোগীর সংখ্যা বেড়ে হয়েছে ৪৬১ জন। এই সংখ্যা গত তিন মাসে ডেঙ্গুতে আক্রান্ত মোট রোগীর চেয়ে বেশি। ফেব্রুয়ারি থেকে এপ্রিল পর্যন্ত ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে চিকিৎসা নিয়েছেন ৪২০ জন। গত কয়েক দিন ধরে ডেঙ্গু নিয়ে হাসপাতালে ভর্তি রোগীর সংখ্যা বাড়ছে। আগের মাসের চেয়ে বেশি সংখ্যক ব্যক্তি এ রোগ নিয়ে হাসপাতালে আসছেন। এ নিয়ে এ পর্যন্ত সারা দেশে হাসপাতালে ভর্তি হওয়া রোগীর সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১ হাজার ৪৪৭ জন। তাদের মধ্যে ঢাকায় ৮৯৪ জন এবং ঢাকার বাইরে ৫৫৩ জন ভর্তি হয়েছেন ডেঙ্গু নিয়ে। বর্তমানে বিভিন্ন হাসপাতালে ভর্তি আছেন ১৫১ জন। তাদের মধ্যে ১২৫ জন ঢাকায় এবং অন্যান্য বিভাগে ২৬ জন।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ব্যক্তিগত চিকিৎসক অধ্যাপক ডা. এ বি এম আব্দুল্লাহ বলেন, মশার সঙ্গেই আমাদের বসবাস করতে হবে। কারণ মশা নির্মূল করা সম্ভব না। তবে দীর্ঘমেয়াদি সমন্বিত পদক্ষেপ গ্রহণ করার মাধ্যমে মশা নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব। আগে স্বচ্ছ পানিতে মশা জন্মাতো। এখন নোংরা পানিতেও মশার বংশবিস্তার ঘটছে। আগে জুন-সেপ্টেম্বর মাসকে ডেঙ্গুর মৌসুম বলা হতো। এখন ১২ মাসই ডেঙ্গু রোগী হাসপাতালে এসে চিকিৎসা সেবা নিচ্ছে। বারবার ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হলে মৃত্যুর ঝুঁকি আছে। শিশুদেরই ঝুঁকি বেশি।
ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মো. নাজমুল হক বলেন, ‘প্রতিদিন হাসপাতালে ডেঙ্গু রোগী ভর্তি হচ্ছে।’ তবে শুধু এই হাসপাতাল নয়, সরকারি-বেসরকারি সব হাসপাতালে ডেঙ্গু রোগী প্রতিদিন ভর্তি হচ্ছে। বিভিন্ন হাসপাতালের কর্তৃপক্ষরা বলেন, এবার এখন থেকেই ডেঙ্গু রোগী বাড়ছে। সময় থাকতে পদক্ষেপ না নিলে ডেঙ্গুর আক্রমণ ভয়ঙ্কর হতে পারে।
ঢাকা শিশু হাসপাতালের পুষ্টি, লিভার ও পরিপাকতন্ত্র বিভাগের বিভাগীয় প্রধান ও সাবেক পরিচালক অধ্যাপক ডা. সৈয়দ সফি আহমেদ জানান, মশা মারার জন্য দীর্ঘমেয়াদি প্রকল্প হাতে নিতে হবে। যেটা পার্শ্ববর্তী দেশ ভারতে আছে। তিনি বলেন, মশা থাকবে, এটা নির্মূল করা যাবে না। তবে নিয়ন্ত্রণে রাখতে হবে।
Leave a Reply