আজ ৭ই চৈত্র, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ, ২১শে মার্চ, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ

দুই প্রকল্পের উদ্বোধন আগস্টে,চট্টগ্রাম-কক্সবাজার ঢাকা-ভাঙ্গায় ট্রেন ছুটবে ১৪০ কিমি.তে

(আজকের দিনকাল):বাংলাদেশে বর্তমানে গড়ে ৬৭ কিলোমিটার গতি নিয়ে ট্রেন চলে। জরাজীর্ণ লাইন আর বৈধ-অবৈধ লেভেলক্রসিংয়ের ফাঁদে এ গতি আরও কমে আসে। অথচ ১২০ থেকে ১৩০ কিলোমিটার গতিসম্পন্ন ইঞ্জিন-কোচ রেল বহরে রয়েছে, যার সুফল পাচ্ছেন না যাত্রীরা। এবার সম্পূর্ণ নতুন রেলপথে সর্বোচ্চ গতি (১২০ থেকে ১৪০ কিমি.) নিয়ে ট্রেন চলবে। আগামী আগস্ট মাসেই চালু হচ্ছে পাহাড় ঘেরা চট্টগ্রামের দোহাজারী-কক্সবাজার এবং ঢাকা-ভাঙ্গা রেলপথ। ঢাকা-ভাঙ্গা ৮২ কিলোমিটারের মধ্যে ১৭ কিলোমিটার উড়াল রেলপথ রয়েছে। বর্তমান সরকারের ফাস্ট ট্র্যাক ১০টি বিশেষ প্রকল্পের মধ্যে রেলের এ দুটি প্রকল্প অন্যতম। প্রকল্প দুটিতে এই প্রথম আন্ডারপাস-ওভারপাস সংবলিত রেললাইন স্থাপন করা হচ্ছে। দুই প্রকল্পের প্রায় ৯৫ শতাংশ কাজ সম্পন্ন হয়েছে। সরকারের নির্দেশনা অনুযায়ী আগস্ট মাসেই দুটি রেলপথে যাত্রীবাহী ট্রেন চলাচল করবে।

এ বিষয়ে রেলপথমন্ত্রী মো. নূরুল ইসলাম সুজন বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ফাস্ট ট্র্যাক ১০ প্রকল্পের মধ্যে রেলের এ দুটি প্রকল্প অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। কক্সবাজার পর্যন্ত ট্রেন চলবে, এমনটা স্বপ্ন ছিল। ঢাকা থেকে ফরিদপুরের ভাঙ্গা হয়ে যশোর পর্যন্ত ট্রেন যাবে-২৩ জেলার জোরালো দাবি ছিল। এখন সেই স্বপ্ন বাস্তবায়ন হয়েছে। এ দুটি লাইনে আগস্ট মাসে ট্রেন চলবে। আমাদের জন্য নিশ্চয় এটি চ্যালেঞ্জের। চ্যালেঞ্জ নিয়েই আমরা এগুচ্ছি। সম্প্রতি আমি বেশ কয়েকবার এ দুটি প্রকল্প এলাকা পরির্দশন করেছি। অত্যন্ত উন্নত প্রযুক্তিতে প্রকল্প দুটি বাস্তবায়ন করা হচ্ছে। উড়াল রেলপথ দেশে এই প্রথম। পদ্মা সেতুতে রেললাইন স্থাপন করা হয়েছে গত মাসেই। ওই পথে যাত্রীবাহী ট্রেনও বেশ কয়েকবার ট্রায়াল করা হয়েছে। দুটি লাইনেই সর্বোচ্চ গতি নিয়ে চলবে ট্রেন। এ জন্য উন্নত-আধুনিক ইঞ্জিন ও কোচ রেলবহরে যুক্ত হয়েছে।

দোহাজারী-কক্সবাজারে চলবে অত্যাধুনিক ট্যুরিস্ট ট্রেন : চট্টগ্রামের দোহাজারী থেকে কক্সবাজার পর্যন্ত ১০৩ কিলোমিটার রেলপথ স্থাপন একেবারেই শেষ পর্যায়ে। পাহাড় ঘেরা এ পথে অত্যাধুনিক ট্যুরিস্ট ট্রেন চলবে। সাধারণ ট্রেনের প্রায় দ্বিগুণ জানালা থাকবে প্রতিটি কোচে। উন্নত দেশের মতো টুরিস্ট ট্রেন চালাতে ইতোমধ্যে সব ধরনের প্রস্তুতি নেওয়া হচ্ছে। ট্রেন পরিচালনার জন্য জনবল নিয়োগের যাবতীয় কার্যক্রম সম্পন্ন হচ্ছে। জনবল কাঠামো অনুমোদনের নথি ২০২১ সালের জুনে রেলপথ অধিদপ্তরের মাধ্যমে রেলপথ মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়েছে। ২০২২ সালের জুনে তা জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়। জনপ্রশাসন থেকে অনুমোদন পেলেই দ্রুততার সঙ্গে নিয়োগ কার্যক্রম শুরু হবে। এই রেললাইনের মাধ্যমে দেশের ৪৫তম জেলা হিসেবে রেল নেটওয়ার্কে যুক্ত হচ্ছে কক্সবাজার।

রেল সূত্র বলছে, শুরুতেই ঢাকা থেকে চট্টগ্রাম হয়ে কক্সবাজার পর্যন্ত ট্রেন চালানো সম্ভব হবে। ৪ থেকে ৫ জোড়া ট্রেন প্রথম পর্যায়ে চালানো হবে। চট্টগ্রাম থেকে সোয়া দু’ঘণ্টায় ট্রেন পৌঁছাবে কক্সবাজারে।

ভাড়া প্রসঙ্গে রেলের একটি সূত্র বলছে, ঢাকা-চট্টগ্রাম ভাড়া অপরিবর্তিত থাকবে। যুক্ত হবে চট্টগ্রাম-কক্সবাজারের নতুন ভাড়া। ১০০ থেকে ৫০০ টাকা ভাড়া হতে পারে। রেলের পরিকল্পনা অনুযায়ী এ পথে একটি বিশেষ ট্রেনও চালানো হবে। বিশেষ ট্রেনে সাধারণ ট্রেনের চেয়ে সুবিধা বেশি থাকবে। ভাড়া হতে পারে দ্বিগুণের চেয়েও বেশি। তবে যাত্রীদের চাহিদা অনুযায়ী চূড়ান্ত ভাড়া নির্ধারণ করা হবে।

থাকবে রেফ্রিজারেটেড ওয়াগন : এছাড়া এ পথে মাছ, শুঁটকি, লবণ ও অন্যান্য পণ্য কক্সবাজার থেকে দেশের অন্যান্য স্থানে পরিবহণের জন্য থাকবে বিশেষ রেফ্রিজারেটেড ওয়াগন সার্ভিস। আগামী দেড় বছরের মধ্যে ঢাকা-চট্টগ্রাম পুরো রেলপথ ডুয়েলগেজ-ব্রডগেজে উন্নীত করা হচ্ছে। এতে পশ্চিমাঞ্চলের সঙ্গে সরাসরি পূর্বাঞ্চলের ট্রেনও চলাচল করবে। সাধারণ যাত্রীসহ মালামাল পরিবহণ হবে উভয় অঞ্চলে।

সরেজমিন ঘুরে দেখা যায়, কক্সবাজার সমুদ্রসৈকত থেকে মাত্র আড়াই কিলোমিটার দূরে ঝিলংজা ইউনিয়নের প্রায় ২৯ একর এলাকা জুড়ে ২১৫ কোটি টাকা ব্যয়ে ঝিনুকের আদলে আন্তর্জাতিক মানের রেলওয়ে স্টেশন নির্মাণ করা হয়েছে। ৬ তলা বিশিস্ট এ স্টেশন নির্মাণের সময় চীন, বেলজিয়াম, ইংল্যান্ড, ইতালিসহ বিশ্বের বিভিন্ন আধুনিক স্টেশনের সুযোগ-সুবিধা বিবেচনায় নেওয়া হয়েছে।

রোববার বিকালে এ প্রকল্পের প্রকল্প পরিচালক প্রকৌশলী মফিজুর রহমান বলেন, আমাদের স্বপ্ন বাস্তবায়নে চ্যালেঞ্জ নিয়ে কাজ করছি। এ প্রকল্পের মেয়াদ ছিল ২০২৪ সালের জুলাই পর্যন্ত। আমরা আগস্ট মাসেই এ প্রকল্পের কাজ সম্পূর্ণ করে ট্রেন চালানোর সব পরিকল্পনা নিয়েছি। সর্বোচ্চ গতি নিয়ে এ পথে ট্রেন পরিচালনা সম্ভব হবে। এ পথে অত্যাধুনিক ট্যুরিস্ট ট্রেন চলবে। ১৫ হাজার কোটি টাকা ব্যয় লক্ষ্যমাত্রার এ প্রকল্পটি আমরা ১২ হাজার কোটি টাকায় সম্পূর্ণ করতে পারব। ৩ হাজার কোটি টাকা খরচ কম হবে-এটা আমাদের জন্য নিশ্চয় আনন্দের-গর্বের।

ঢাকা-ভাঙ্গা ট্রেনও চলবে আগস্টে : এদিকে ঢাকা থেকে যশোর পর্যন্ত ১৭২ কিলোমিটার ব্রডগেজ লাইন স্থাপনের কাজ দ্রুত গতিতে চলছে। সরকারের পরিকল্পনা অনুযায়ী, এ প্রকল্পের ঢাকা থেকে পদ্মা সেতু হয়ে ভাঙ্গা পর্যন্ত লাইন স্থাপন শেষে আগামী আগস্ট মাসেই যাত্রীবাহী ট্রেন চালানো হবে। রেলপথমন্ত্রীর প্রতিশ্রুতি অনুযায়ী ইতোমধ্যে এ পথের ভাঙ্গা থেকে পদ্মা সেতু হয়ে মাওয়া পর্যন্ত বেশ কয়েকবার যাত্রীবাহী ট্রেন ট্রায়াল করা হয়েছে। ঢাকা কমলাপুর রেলওয়ে স্টেশন থেকে গেন্ডারিয়া পর্যন্ত ৪ লাইনের রেলপথ নির্মাণ হচ্ছে। গেন্ডারিয়া থেকে কেরানীগঞ্জ পর্যন্ত প্রায় ১৭ কিলোমিটার উড়াল রেলপথ নির্মাণ কাজ ৯৫ শতাংশের উপরে সম্পন্ন হয়েছে। ঢাকা থেকে পদ্মা সেতু হয়ে ভাঙ্গা পর্যন্ত পুরো রেলপথের কোথাও লাইন সমান্তরালে লেভেলক্রসিং নেই। সব কয়টি লেভেলক্রসিং আন্ডারপাস ও ওভারপাস করা হয়েছে।

আগস্টের শুরুতে এ পথে চার জোড়া ট্রেন পরিচালনার সব ধরনের প্রস্তুতি নেওয়া হচ্ছে। ইতোমধ্যে ১১০টি ব্রডগেজ কোচ রেলবহরে যুক্ত হয়েছে। কোচগুলোর অভ্যন্তরীণ সাজসজ্জা বেশ আধুনিক। আরামদায়ক আসনগুলোতে থাকছে ফোল্ডিং ব্যবস্থা। থাকবে ল্যাপটপ ও মোবাইল চার্জ দেওয়ার ব্যবস্থাও। এছাড়া ডিজিটাল মনিটর ও ক্লোজ সার্কিট ক্যামেরা থাকছে প্রতিটি কোচে। কোচের উভয় প্রান্তে হাই এবং লো-কমোডের ব্যবস্থা থাকবে।

প্রকল্প পরিচালক প্রকৌশলী মো. আফজাল হোসেন বলেন, সরকারের নির্দেশনা অনুযায়ী আগস্ট মাসের মধ্যে এ পথে যাত্রীবাহী ট্রেন পরিচালনার জন্য ট্রেন প্রস্তুত করা হচ্ছে। এ পথে এই প্রথম উড়াল রেলপথ নির্মিত হয়েছে। একই সঙ্গে পদ্মা সেতুর দু’প্রান্তে প্রায় ৪ কিলোমিটার উড়াল রেলপথ রয়েছে। কমলাপুর রেলওয়ে স্টেশনের ৮ নম্বর প্লাটফর্ম এলাকায় নতুন করে স্টেশন নির্মাণ করা হচ্ছে। ৪ থেকে ৬টি ট্রেন স্টেশনে দাঁড়াতে পারবে। মো. আফজাল হোসেন বলেন, আগস্টে ঢাকা থেকে ভাঙ্গা পর্যন্ত ট্রেন চলার পাশাপাশি মূল প্রকল্পের কাজ চলমান থাকবে। অর্থাৎ ঢাকা থেকে যশোর পর্যন্ত লাইন স্থাপন ২০২৪ সালের জুনে সম্পন্ন হবে। এরপর ঢাকা থেকে সরাসরি যশোর পর্যন্ত চলবে ট্রেন।-যুগান্তর

Share

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

     এ ক্যাটাগরীর আরো সংবাদ