আজ ২৩শে আশ্বিন, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ, ৮ই অক্টোবর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ

পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে অনিয়ম: শিক্ষকদের নৈতিকতার অবনমন কাম্য নয়

(আজকের দিনকাল):যে কোনো দেশের বিশ্ববিদ্যালয় তথা শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান মানুষ গড়ার কারিগর হিসাবে কাজ করে থাকে। এসব প্রতিষ্ঠানে শিক্ষার মান যেমন বড় একটি নিয়ামক, তেমনই সেখানে নিয়োজিত শিক্ষক থেকে শুরু করে প্রত্যেক ব্যক্তি শিক্ষার্থীদের জন্য অনুকরণীয় ও অনুসরণীয় হয়ে থাকেন। তবে দুঃখজনক হলেও সত্য, এদেশের অনেক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানেই এই বোধ সেভাবে কাজ করে না। সম্প্রতি দেশের পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়গুলোয় বেশকিছু অনিয়ম ও আর্থিক দুর্নীতি চিহ্নিত করেছে খোদ বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন (ইউজিসি)। এসব অনিয়ম বন্ধে কমিশন পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়গুলোকে ৫৫টি নির্দেশনাও দিয়েছে বলে যুগান্তরের এক প্রতিবেদনে উঠে এসেছে। অনিয়মের উদাহরণ হিসাবে প্রতিবেদনে বলা হয়, যশোর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যের বিলাসবহুল বাংলো থাকা সত্ত্বেও তিনি নিয়মিত বাড়ি ভাড়া ভাতা নিচ্ছেন। ইউজিসির চোখে ধরা পড়ার পর বিষয়টিকে বিধিবহির্ভূত হিসাবে চিহ্নিত করেছে সংস্থাটি।

রোববার দেশের উচ্চশিক্ষার জন্য ২০২৩-২০২৪ অর্থবছরের ১২ হাজার ২৬৩ কোটি টাকার বাজেট অনুমোদন করেছে ইউজিসি, যেখানে বিভিন্ন পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে অর্থ লুটপাটের মোট ২০ খাতের তথ্যও উপস্থাপন করা হয়। এ খাতগুলো হচ্ছে-উচ্চতর স্কেলে বেতন প্রদান; বিধিবহির্ভূতভাবে পঞ্চম গ্রেডভুক্ত কর্মকর্তাকে তৃতীয় গ্রেড প্রদান; ভূতাপেক্ষ পদোন্নতি ও স্কেল প্রদান, এমনকি যোগদানের তারিখ থেকে পদোন্নতি; অননুমোদিত পদে নিয়োগ, আপগ্রেডেশন ও বেতন প্রদান; অনর্জিত ইনক্রিমেন্ট প্রদান; বেতনের বাইরে নানা নামে উপাচার্য হিসাবে অতিরিক্ত অর্থ গ্রহণ; বাংলোতে বসবাস সত্ত্বেও বাড়ি ভাড়া গ্রহণ; পূর্ণ বাড়ি দেওয়ার পরও কম নেওয়ার উদ্দেশ্যে বর্গফুটের হিসাবে ভাড়া গ্রহণ; মফস্বলের প্রতিষ্ঠানের শিক্ষক-জনবলকে সিটি করপোরেশনের হিসাবে বাড়ি ভাড়া প্রদান; এর বাইরেও সর্বোচ্চ ২০ শতাংশ হারে বাড়ি ভাড়া প্রদান; সরকারি নিয়ম লঙ্ঘন করে সেশন বেনিফিট প্রদান; পিআরএলের পরিবর্তে এলপিআর প্রদান; বিদ্যুৎ-গ্যাস বিল ভর্তুকি দেওয়া; গবেষণা-মোবাইল-টেলিফোন-ইন্টারনেট ভাতা প্রদান, নিয়মের বাইরে বই ভাতা দেওয়া; ড্রাইভারদের নবম থেকে পঞ্চম গ্রেডে বেতন দেওয়া; চুক্তিভিত্তিক নিয়োগে সরকারের আর্থিক নীতিমালা লঙ্ঘন এবং যৌথ বিমা বা কল্যাণ তহবিলে অর্থ স্থানান্তর।

ইউজিসির এক সদস্য জানিয়েছেন, গেল বছর বিশ্ববিদ্যালয়গুলোয় ৪১টি নির্দেশনা পাঠানো হলেও এবার পরিস্থিতি অনুযায়ী আরও ১৪টি যোগ করা হয়েছে। চিহ্নিত ২০টি অনিয়মের তথ্যের পাশাপাশি কোন বিশ্ববিদ্যালয় কী রকম অনিয়মে জড়িত, তাও উল্লেখ থাকবে সেখানে। অনিয়ম সম্পর্কে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিয়ে সংশ্লিষ্ট বিশ্ববিদ্যালয়কে ২০ জুনের মধ্যে ইউজিসিকে তা জানাতেও হবে। ইউজিসি মনে করে, আর্থিক অনিয়ম বন্ধে তাদের দেওয়া নির্দেশনাগুলো বাস্তবায়িত হলে দুর্নীতি কমে যাবে। তবে আমরা মনে করি, এসব নির্দেশনা কিংবা নজরদারির চেয়ে বেশি প্রয়োজন নৈতিকতা। কোনো বিশ্ববিদ্যালয়ের খোদ উপাচার্যই যখন অনিয়মকে প্রশ্রয় দেন, তখন বুঝতে হবে এ নৈতিকতার পারদ কোথায় নেমে দাঁড়িয়েছে। তাই শিক্ষকতা পেশা যে অন্যসব পেশার চেয়ে মহান ও মর্যাদাপূর্ণ, সেই বোধ জাগ্রত হওয়া সবচেয়ে জরুরি। সমাজ গড়ার কারিগরদের তাই দায়িত্ব ও কর্তব্য সম্পর্কে স্বচ্ছ ধারণা থাকতে হবে। তাহলেই উচ্চশিক্ষাদানের এসব প্রতিষ্ঠানের কর্তাব্যক্তিদের মধ্যে এ ধরনের দুর্নীতির প্রবণতা হ্রাস পাবে

Share

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

     এ ক্যাটাগরীর আরো সংবাদ