(আজকের দিনকাল):নিত্যপণ্যের ঊর্ধ্বগতির কারণে ভোক্তাদের যখন দম বন্ধ হওয়ার মতো পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়েছে, তখনও নানা অজুহাতে ব্যবসায়ী সিন্ডিকেট অতিরিক্ত মুনাফা করে মানুষের দুর্ভোগ বাড়িয়ে চলেছে। বস্তুত বাজার তদারকি সংস্থাগুলোর দুর্বলতার কারণেই ব্যবসায়ী সিন্ডিকেট বেপরোয়া মুনাফা করার সুযোগ পায়। অভিযোগ রয়েছে, বাজার পর্যবেক্ষণে জড়িত অসাধু কর্মকর্তা-কর্মচারীদের সঙ্গে ব্যবসায়ী সিন্ডিকেটের যোগসাজশের কারণেই অসাধু ব্যবসায়ীরা পার পেয়ে যায়। সম্প্রতি শিল্প প্রতিমন্ত্রী কামাল আহমেদ মজুমদার এক অনুষ্ঠানে বলেছেন, আমি অনেককে দেখেছি বাজার করতে গিয়ে কাঁদছেন। গরিব মানুষের প্রতি এমন সহমর্মিতা প্রদর্শনের জন্য আমরা তাকে ধন্যবাদ জানাই। বস্তুত নিত্যপণ্যের দাম অস্বাভাবিক হারে বাড়লেও মানুষের আয় বাড়েনি। জীবনযাত্রায় বাড়তি ব্যয়ের কারণে দিশেহারা হয়ে পড়েছে মানুষ; সবচেয়ে বেশি চাপে রয়েছে সীমিত ও স্বল্প আয়ের মানুষ। সিন্ডিকেটের কারণেই যে দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি এ কথা কামাল আহমেদ মজুমদার তার বক্তব্যে উল্লেখ করেছেন। সিন্ডিকেট ভাঙার আহ্বানও জানিয়েছেন শিল্প প্রতিমন্ত্রী। এদিকে অসাধু ব্যবসায়ীদের বিরুদ্ধে সোচ্চার হওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন শিল্পমন্ত্রী নূরুল মজিদ মাহমুদ হুমায়ুন। শিল্পমন্ত্রী ও শিল্প প্রতিমন্ত্রীর এমন বক্তব্যের জন্য আমরা তাদের সাধুবাদ জানাই। একই সঙ্গে আমরা আশা করব, দেশের ব্যবসায়ী সিন্ডিকেটগুলো চিহ্নিত করার ক্ষেত্রেও তারা জোরালো ভূমিকা পালন করবেন।
করোনা মহামারি, যুদ্ধ-এসব পরিস্থিতির কারণে মূল্যবৃদ্ধি মেনে নেওয়া গেলেও সিন্ডিকেটের কারণে মূল্যবৃদ্ধি মেনে নেওয়া যায় না। চাহিদার তুলনায় সরবরাহ কম থাকলে পণ্যের মূল্যবৃদ্ধি ঘটতেই পারে। কিন্তু আমাদের দেশে এ নিয়ম খাটছে না। লক্ষ করা যায়, ভরা মৌসুমেও চালের বাজার অস্থির থাকে। সিন্ডিকেটের সদস্যরা যোগসাজশের মাধ্যমে পণ্যের দাম বাড়িয়ে দেয়। কখনো কখনো তারা তৈরি করে পণ্যের কৃত্রিম সংকট। এসব সিন্ডিকেট ভাঙা এখন জরুরি হয়ে পড়েছে। সিন্ডিকেটের কারসাজি বন্ধ করার দায়িত্ব সরকারের। অসাধু ব্যবসায়ীরা তাদের ইচ্ছামতো পণ্যের দাম বাড়াবে আর কর্তৃপক্ষ হাত গুটিয়ে বসে থাকবে, তা হতে পারে না। দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণে আমরা সরকারের জোরালো ভূমিকা দেখতে চাই। মধ্যস্বত্বভোগীর কারসাজির কারণেও নিত্যপণ্যের বাজারে অস্থিরতা তৈরি হয়। মধ্যস্বত্বভোগী ও অসাধু ব্যবসায়ীদের কারসাজির কারণে ভোক্তারা কেবল যে আর্থিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন তাই নয়; তারা মানহীন, এমনকি স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর পণ্য কিনতেও বাধ্য হচ্ছেন। বস্তুত বাজার ব্যবস্থাপনার দুর্বলতার কারণেই মধ্যস্বত্বভোগী ও অসাধু ব্যবসায়ীরা বেপরোয়া হয়ে ওঠে। এসব দুর্বলতা কাটাতে সরকারকে কার্যকর পদক্ষেপ নিতে হবে।
সরকারের পক্ষ থেকে পণ্যের দাম বেঁধে দেওয়া হলেও কেন তা কার্যকর হয় না, সে রহস্য উদ্ঘাটনে জরুরি ভিত্তিতে পদক্ষেপ নেওয়া দরকার। লক্ষ করা যায়, যখন অসাধু ব্যবসায়ীদের বিরুদ্ধে অভিযান পরিচালনা করা হয়, তখন ব্যবসায়ী সিন্ডিকেটের অপতৎপরতা আরও বেড়ে যায়, সংশ্লিষ্ট পণ্যের সংকট আরও ভয়াবহ আকার ধারণ করে। এতে ভোক্তাদের দুর্ভোগ আরও বাড়ে। বাজার তদারকি সংস্থার অসাধু কর্মকর্তা-কর্মচারীদের সঙ্গে অসাধু ব্যবসায়ীদের আঁতাতের বিষয়টি বারবার আলোচনায় আসে। কাজেই সরষের ভেতরের ভূত তাড়ানোর জন্যও কর্তৃপক্ষকে জোরালো পদক্ষেপ নিতে হবে।
Leave a Reply