আজ ২৮শে অগ্রহায়ণ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ, ১৩ই ডিসেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ

গাজীপুর সিটিতে ভোট আজ,কে হচ্ছেন নগর অভিভাবক

(আজকের দিনকাল):গাজীপুর সিটি করপোরেশন (গাসিক) নির্বাচন আজ। আজকের ভোটেই জানা যাবে কে হচ্ছেন নগরপিতা।

আওয়ামী লীগের প্রার্থী অ্যাডভোকেট মো. আজমত উল্লা খান না সাবেক মেয়র মো. জাহাঙ্গীর আলমের মা জায়েদা খাতুন।

জাতীয় পার্টির এমএম নিয়াজ উদ্দিনসহ মোট আটজন মেয়রপ্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। তবে মূলত দুজনকে ঘিরেই নগরজুড়ে আলোচনা।

শেষ হাসি কে হাসবেন-ব্যালটেই তা নির্ধারণ হবে। বহুল আলোচিত এ নির্বাচনে আজ সকাল ৮টা থেকে বিকাল ৪টা পর্যন্ত চলবে টানা ভোটগ্রহণ।

আজকের দিনটি ঘিরে গাজীপুরে ভোটারদের মধ্যে যেমন উৎসাহ আছে, তেমনই শঙ্কাও বিরাজ করছে। ভোট উপলক্ষ্যে গাজীপুর সিটি করপোরেশন এলাকায় সাধারণ ছুটি ঘোষণা করা হয়েছে। যানবাহন চলাচলের ওপর আরোপ করা হয়েছে বিধিনিষেধ।

নির্বাচনে জয়ের বিষয়ে আশা প্রকাশ করেছেন আজমত উল্লা খান ও জায়েদা খাতুন। বুধবার নিজ বাসায় আজমত উল্লা খান বলেছেন, ‘মানুষের গণজোয়ার দেখে মনে হয়েছে উৎসবমুখর পরিবেশে ভোট হবে।

জয়ের ব্যাপারে আমি শতভাগ আশাবাদী।’ অপরদিকে জায়েদা খাতুন জানান, সব কেন্দ্রে নির্বাচনি এজেন্ট দিয়েছেন। বাধা এলেও ভোটারদের কেন্দ্রে যাওয়া এবং বাধা দিলে প্রতিবাদ করার আহ্বান জানান তিনি।

ইসি জানিয়েছে, নির্বাচনের প্রস্তুতি শেষ হয়েছে। বুধবারই সব কেন্দ্রে পাঠানো হয়েছে নির্বাচনি সরঞ্জাম। ভোটের নিরাপত্তায় পাঁচ স্তরে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্য মোতায়েন করা হয়েছে। নির্বাচনি এলাকায় রয়েছেন পুলিশ, বিজিবি, র‌্যাব ও আনসারের ১৩ হাজার সদস্য। সুষ্ঠু ভোটগ্রহণে কঠোর অবস্থানে ইসি ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। সব কেন্দ্রে বসানো হয়েছে সিসি ক্যামেরা। গাজীপুর সিটি করপোরেশনে এই প্রথম সব কেন্দ্রে ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিনের (ইভিএম) মাধ্যমে ভোটগ্রহণ হবে। নির্বাচনে মেয়র পদে আটজন ছাড়াও ৫৬টি ওয়ার্ডে ২৪৫ জন এবং সংরক্ষিত ১৯টি ওয়ার্ডে ৭৮ জন প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন।

নির্বাচন কমিশন ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর মতে, সুষ্ঠু নির্বাচনের স্বার্থে সব ধরনের পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে। ‘নৌকা ছাড়া কাউকে ভোটকেন্দ্রে আসতে দিবেন না’-এমন বক্তব্য দিয়ে ভোটারদের ভয়ভীতি দেখানোর অভিযোগে ৪০নং ওয়ার্ডের কাউন্সিলর প্রার্থী আজিজুর রহমানের প্রার্থিতা বুধবার বাতিল করে দিয়েছে নির্বাচন কমিশন (ইসি)। এদিন নির্বাচন কমিশনার রাশেদা সুলাতানা নিজেই নির্বাচনি এলাকার বিভিন্ন কেন্দ্র পরিদর্শন করেন।

ম্যাজিস্ট্রেটদের সঙ্গে বৈঠক করে আচরণবিধি এবং নির্বাচন বিধিমালা প্রতিপালনে কঠোর থাকার নির্দেশনা দিয়েছেন। রাশেদা সুলতানা বলেন, সুষ্ঠু ও সুন্দর পরিবেশে ভোটগ্রহণ হবে। সব ভোটার নির্বিঘ্নে তাদের ভোটাধিকার প্রয়োগ করতে পারবেন।

ভোটকেন্দ্রে থাকা সিসি ক্যামেরা দিয়ে নির্বাচন কমিশন সরাসরি ভোটগ্রহণ পর্যবেক্ষণ করবে বলেও জানান তিনি।

৫ এপ্রিল গাজীপুর সিটি করপোরেশন নির্বাচনের তফশিল ঘোষণা করে নির্বাচন কমিশন। ৯ মে থেকে প্রচার শুরু হয়ে চলে মঙ্গলবার মধ্যরাত পর্যন্ত।

স্থানীয়দের সঙ্গে আলাপ করে জানা যায়, এ সময়ে গাজীপুরে বড় ধরনের সহিংস ঘটনা ঘটেনি। প্রচারে বাধা দেওয়া ও হামলাসহ বিচ্ছিন্ন কিছু ঘটনা ঘটেছে। দলীয় মনোনয়ন না পেলেও সাবেক মেয়র মো. জাহাঙ্গীর আলমের প্রার্থী হওয়া এবং ঋণখেলাপির দায়ে তা বাতিলের ঘটনা বেশ আলোচনা তৈরি করে।

জাহাঙ্গীর আলমের মা প্রার্থী হওয়ার বিষয়টিও নগরবাসীকে বিস্মিত করে। তবে শেষ পর্যন্ত তিনি মাঠে থাকায় আওয়ামী লীগের প্রার্থী আজমত উল্লার প্রতিদ্বন্দ্বী হিসাবে জায়েদা খাতুনের নাম আসছে ঘুরেফিরে।

যদিও মেয়র পদে আরও রয়েছেন জাতীয় পার্টির এমএম নিয়াজ উদ্দিন, ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের গাজী আতাউর রহমান, জাকের পার্টির মো. রাজু আহাম্মেদ, গণফ্রন্টের আতিকুল ইসলাম, স্বতন্ত্র প্রার্থী বিএনপি নেতার ছেলে সরকার শাহনূর ইসলাম রনি ও মো. হারুন অর রশীদ।

এ নির্বাচন বর্জন করেছে বিএনপি। তবে দলটির ২৯ জন নেতা কাউন্সিলর পদে নির্বাচন করছেন। ইতোমধ্যে ১৫ নম্বর ওয়ার্ডে ফয়সাল আহমেদ সরকার বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় কাউন্সিলরও নির্বাচিত হয়েছেন।

সরেজমিন দেখা যায়, বুধবার কেন্দ্রে কেন্দ্রে নির্বাচনি সরঞ্জাম পাঠানো হয়েছে। সড়কে সড়কে পোস্টারে ছেয়ে ফেলেছেন প্রার্থীরা। মেয়রের চেয়ে কাউন্সিলর প্রার্থীদের তৎপরতা ছিল চোখে পড়ার মতো। প্রধান সড়ক ছাড়াও অলিগলিতে পুলিশ, র‌্যাব ও বিজিবির গাড়ি টহল দিতে দেখা গেছে।

মোবাইল কোর্টের কার্যক্রমও ছিল চোখে পড়ার মতো। চায়ের আড্ডা, বাসস্ট্যান্ড, হাটবাজারগুলোয় ছিল নির্বাচনি জমজমাট আলোচনা।

এদিন গাজীপুর মহানগরের পৃথক ৫টি আঞ্চলিক কেন্দ্র থেকে নির্বাচনি সরঞ্জাম বিতরণ করা হয়। ধীরাশ্রম জিকে হাইস্কুল অ্যান্ড কলেজ থেকে ১২০টি, চান্দনা উচ্চবিদ্যালয় অ্যান্ড স্কুল থেকে ১১৫টি, দারুস সালাম মাদ্রাসা থেকে ৫৮টি, আজিম উদ্দিন স্কুল অ্যান্ড কলেজ থেকে ৬৮টি এবং জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ১১৯টি কেন্দ্রের নির্বাচনি সরঞ্জাম বিতরণ করা হয়। ১৯৫নং কেন্দ্রের প্রিসাইডিং অফিসার রেজাউল করিম বলেন, আমরা ইভিএম মেশিনসহ নির্বাচনি অন্যান্য সরঞ্জাম বুঝে নিয়েছি। কেন্দ্রে পৌঁছে ইভিএম মেশিন চালিয়ে দেখব। যদি কোনো সমস্যা হয়, তাহলে সঙ্গে সঙ্গে রিটার্নিং কর্মকর্তাকে জানাব।

ভোটের আগের কাউন্সিলর প্রার্থীর প্রার্থিতা বাতিল : নগরীর ৪০ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর প্রার্থী আজিজুর রহমানের প্রার্থিতা বাতিল করেছে নির্বাচন কমিশন। ২২ মে সন্ধ্যা ৭টায় গাজীপুর সিটির ৪০নং ওয়ার্ডের পূবাইল এলাকার কলের বাজার নামক স্থানে জনসভায় তিনি ‘নৌকা ছাড়া কাউকে ভোটকেন্দ্রে আসতে দিবেন না’ বলে বক্তব্য দেন।

এ বক্তব্যের মাধ্যমে তিনি নির্বাচনি এলাকায় ত্রাস সৃষ্টি ও ভীতি প্রদর্শন করেছেন বলে জানিয়েছে নির্বাচন কমিশন। যদিও বুধবার তিনি ইসিতে গিয়ে শুনানিতে এ ঘটনায় দোষ স্বীকার করে ক্ষমা চান।

তার প্রার্থিতা বাতিলের বিষয়ে নির্বাচন কমিশনের সচিব জাহাংগীর আলম সাংবাদিকদের বলেন, বেআইনি মিছিল, জনসভা এবং ত্রাস ও ভীতিমূলক বক্তব্য প্রদানের মাধ্যমে আচরণবিধি ভঙ্গের দায়ে তার প্রার্থিতা বাতিল করা হয়েছে। তার ক্ষমার আবেদন গ্রহণযোগ্য নয় বলে কমিশন সিদ্ধান্ত দিয়েছে।

একনজরে গাজীপুর সিটি করপোরেশন নির্বাচন : গাজীপুর সিটি করপোরেশন নির্বাচনে মেয়র পদে আটজন প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। ৫৭টি সাধারণ ওয়ার্ডে ২৪৫ জন এবং ১৯টি সংরক্ষিত ওয়ার্ডে ৭৮ জন প্রতিদ্বন্দ্বিতায় রয়েছেন। সবমিলিয়ে ৩৩১ জন রয়েছেন চূড়ান্ত প্রতিদ্বন্দ্বিতায়। ১৫ নম্বর ওয়ার্ডে ফয়সাল আহমেদ সরকার বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় কাউন্সিলর নির্বাচিত হয়েছেন।

গাজীপুর সিটি করপোরেশন নির্বাচনে ভোটকেন্দ্রের সংখ্যা ৪৮০টি এবং ভোটকক্ষ ৩৪৯৭টি। মোট ভোটার ১১ লাখ ৭৯ হাজার ৪৭৬ জন। তাদের মধ্যে পুরুষ ৫ লাখ ৯২ হাজার ৭৬২, নারী ৫ লাখ ৮৬ হাজার ৬৯৬ এবং তৃতীয় লিঙ্গের ১৮ জন।

নির্বাচনে ভোটগ্রহণ কর্মকর্তা ১০ হাজার ৯৭০ জন। প্রিসাইডিং অফিসার ৪৮০, সহকারী প্রিসাইডিং অফিসার ৩৪৯৭ এবং পোলিং অফিসার ৬৯৯৪ জন।

Share

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

     এ ক্যাটাগরীর আরো সংবাদ