(আজকের দিনকাল):দেশের ব্যাংক খাতের অন্যতম বড় সমস্যা খেলাপি ঋণ। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের এক তথ্যমতে, গত দশ বছরে দেশে খেলাপি ঋণ বেড়েছে প্রায় সাড়ে চারগুণ। খেলাপি ঋণ না কমে বরং দিনদিন বৃদ্ধি পাওয়ার অন্যতম কারণ হলো, ইচ্ছাকৃত ঋণখেলাপিদের বিরুদ্ধে কার্যকর কোনো ব্যবস্থা না নেওয়া।
এছাড়া ব্যাংকগুলোর শীর্ষ পর্যায়ে থাকা লোকজনের দুর্নীতি ও অনিয়মের কারণেও ব্যাংক খাতে খেলাপি ঋণ, অব্যবস্থাপনা, অনিয়ম-জালিয়াতি ও অর্থ আত্মসাতের ঘটনা বাড়ছে, যা কঠোরভাবে রোধ করা প্রয়োজন। এ প্রেক্ষাপটে বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর আব্দুর রউফ তালুকদার বলেছেন, খেলাপি ঋণ সমস্যা সমাধানে ব্যাংকের শীর্ষ নেতৃত্ব (এমডি) ও ব্যবস্থাপনায় যারা আছেন, তাদেরই দায়িত্ব নিতে হবে। এছাড়া খেলাপি ঋণ কমানো এবং করপোরেট সুশাসন নিশ্চিত করতে ব্যাংকিং সংস্কৃতিতে পরিবর্তন আনা প্রয়োজন বলেও মনে করেন তিনি।
এটি অস্বীকার করার উপায় নেই যে, ব্যাংক খাতে সুশাসনের অভাব রয়েছে। বিভিন্ন ব্যাংক থেকে দুর্নীতির মাধ্যমে ঋণ বিতরণের অভিযোগ দীর্ঘদিনের। রাজনৈতিক নেতা, ব্যাংকের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা এবং ঋণ গ্রহীতার পারস্পরিক যোগসাজশে দেওয়া হয় এসব ঋণ। কাজেই খেলাপি ঋণ কমাতে হলে এ দুর্নীতি রোধ করে ব্যাংকগুলোয় সুশাসন প্রতিষ্ঠা করা জরুরি। সেই সঙ্গে প্রয়োজন ইচ্ছাকৃত ঋণখেলাপিদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া।
এক্ষেত্রে প্রতিটি ব্যাংকের ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ তথা এমডি ও অন্যান্য পরিচালকের দায়িত্বের বিষয়টি অনস্বীকার্য। তবে এ ব্যাপারে ব্যাংক খাতের অভিভাবক প্রতিষ্ঠান হিসাবে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের দায়িত্বও কম নয়। বস্তুত এসব ক্ষেত্রে বাংলাদেশ ব্যাংককেই পালন করতে হবে নিয়ন্ত্রকের ভূমিকা। আমরা দেখে আসছি, ঋণখেলাপিদের বারবার ছাড় দেওয়া হচ্ছে।
এক্ষেত্রে কেন্দ্রীয় ব্যাংক থেকেই আইন শিথিল করে দেওয়া হয়। এতে দুর্নীতিবাজ ব্যাংকারদের জন্য আরও সুযোগ সৃষ্টি হয়। অথচ ব্যাংকগুলোয় কোথায় কী অনিয়ম হচ্ছে, তা দেখার দায়িত্ব কেন্দ্রীয় ব্যাংকের। সেসব অনিয়ম বন্ধ হয়ে ব্যাংকে সুশাসন প্রতিষ্ঠিত হলে খেলাপি ঋণ কমে আসতে বাধ্য।
খেলাপি ঋণের কারণে শুধু সংশ্লিষ্ট ব্যাংকগুলোই যে সমস্যায় পড়ছে তা নয়, সার্বিকভাবে দেশের অর্থনীতিই ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। এ প্রসঙ্গে সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অর্থ উপদেষ্টা ড. এবি মির্জ্জা আজিজুল ইসলামের একটি বক্তব্য প্রণিধানযোগ্য। সম্প্রতি যুগান্তরকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে তিনি বলেছেন, খেলাপি ঋণ কমাতে না পারলে অদূর ভবিষ্যতে অর্থনীতিতে বড় ধরনের সমস্যা তৈরি হবে। কাজেই খেলাপি ঋণের লাগাম টেনে ধরতে হবে যে কোনো উপায়ে।
পাশাপাশি খেলাপি ঋণ আদায়েও কঠোর হওয়া প্রয়োজন। এক্ষেত্রে আইনের প্রয়োগ নিশ্চিত করা জরুরি। প্রয়োজনে আইন আরও কঠোর করতে হবে, যেখানে ঋণখেলাপিদের চিহ্নিত করে তাদের রাষ্ট্রীয় ও সামাজিকভাবে বর্জন করার বিধান থাকবে। তাদের বিভিন্ন রাষ্ট্রীয় সুবিধা থেকে বঞ্চিত করতে হবে। বিশ্বের বিভিন্ন দেশে এমন উদাহরণ রয়েছে।
বস্তুত ঋণখেলাপিদের আষ্টেপৃষ্ঠে বাঁধতে আইন কঠোর করার পাশাপাশি তা বাস্তবায়নে সরকারের রাজনৈতিক সদিচ্ছা এবং ব্যাংকগুলোয় সুশাসন প্রতিষ্ঠার বিষয়টি গুরুত্বপূর্ণ। সরকার ও কেন্দ্রীয় ব্যাংক এ ব্যাপারে কার্যকর ভূমিকা পালন করবে, এটাই প্রত্যাশা।
Leave a Reply