(আজকের দিনকাল):একটি দৈনিক পত্রিকায় সংবাদ প্রকাশের পর বাংলাদেশ রোড ট্রান্সপোর্ট অথরিটি (বিআরটিএ) কক্সবাজার জেলা কার্যালয়ের সাবেক সহকারি মোটরযান পরিদর্শক (বর্তমানে নোয়াখালীতে কর্মরত) আরিফুল ইসলামের নানা অনিয়ম ও দুর্নীতি নিয়ে অনুসন্ধান শুরু করেছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)।
অনুসন্ধানের শুরুতেই ডাচ বাংলা ব্যাংকের কক্সবাজার শাখায় একটি অ্যাকাউন্টে দুই কোটি টাকার সন্ধান পাওয়া গেছে। তার মধ্যে বর্তমান থাকা এক কোটি ৪৯ লাখ ৪৮ হাজার ৬০৭ টাকা জব্দ করা হয়েছে। এছাড়াও কক্সবাজার জেলায় বিভিন্ন এলাকায় তার নামে-বেনামে থাকা বিপুল পরিমাণ সম্পদের তথ্য পেয়েছে দুদক।
দুদক জানিয়েছে, অনুসন্ধান কর্মকর্তার আবেদনের প্রেক্ষিতে কক্সবাজার সিনিয়র দায়রা জজ মোহাম্মদ ইসমাইল বিআরটিএর সহকারী মোটরযান পরিদর্শক আরিফুল ইসলামের অ্যাকাউন্টে থাকা এক কোটি ৪৯ লাখ ৪৮ হাজার ৬০৭ টাকা জব্দের নির্দেশ দিয়েছেন। গত ২৫ মে এ নির্দেশনা দেন। ২৫ মে নির্দেশনা দিলেও শনিবার (২৮ মে) আদালতের নির্দেশনার চিঠিটি হাতে পেয়েছেন বলে নিশ্চিত করেছেন ডাচ বাংলা ব্যাংক কক্সবাজার শাখার ব্যবস্থাপক মো. সাজ্জাদ শাহ আলম।
এর আগে গত বছরের ১৩ অক্টোবর দৈনিক পত্রিকায় প্রিন্ট ও অনলাইন ভার্সণে কক্সবাজার বিআরটিএ পরিদর্শক ঘুস নেন ব্যাংক অ্যাকাউন্টে শিরোনামে একটি অনুসন্ধান সংবাদ প্রকাশ করা হয়। এরপর তাকে নোয়াখালীতে বদলী করা হয়। অন্যদিকে তার বিরুদ্ধে উঠা সব অভিযোগ অনুসন্ধানের জন্য তদন্ত কর্মকর্তা নিয়োগ করে দুদক।
আদালত থেকে ব্যাংকে পাঠানো চিঠিতে বলা হয়েছে, বিআরটিএর সহকারী মোটরযান পরিদর্শক আরিফুল ইসলামের বিরুদ্ধে ব্যাংকের মাধ্যমে ঘুস লেনদেন ও অবৈধ সম্পদ অর্জন দুদক অনুসন্ধান করছে। অনুসন্ধান কর্মকর্তা রেকর্ডপত্র পর্যালোচনায় আরিফুল ইসলামের মালিকানাধীন প্রতিষ্ঠান ‘মেসার্স ঘাসফুল ট্রেডার্স’ এর নামে ডাচ বাংলা ব্যাংক কক্সবাজার শাখায় একটি হিসাব নাম্বারে দুই কোটি ২০ লাখ ৬৬ হাজার ৯৬৪ টাকা জমা হয়। এরমধ্যে বর্তমানে এক কোটি ৪৯ লাখ ৪৮ হাজার ৬০৭ টাকা রয়েছে। দুদকের অনুসন্ধানকালে আরিফুল ইসলাম ব্যাংকে এ টাকা লেনদেনের সন্তোষ জনক কোন জবাব দিতে পারে নাই এবং এই টাকার বৈধ কোন উৎসও দেখাতে পারে নাই। এ সংক্রান্ত বাংলাদেশ ব্যাংক গোয়েন্দা প্রতিবেদন পর্যালোচনায় হিসাবটিতে আরিফুল ইসলামের ঘুষের অর্থ লেনদেন হয়েছে এবং এ অপরাধ মানি লন্ডারিং প্রতিরোধ আইন, ২০১২ এর সম্পৃক্ত অপরাধের পর্যায়ভুক্ত বলে মতামত দিয়েছে।
চিঠিতে আরও বলা হয়েছে, আরিফুল ইসলামের এ টাকা অন্য জায়গায় স্থানান্তর ও হস্তান্তর করলে রাষ্ট্রের ক্ষতি হবে বলে অনুসন্ধান কর্মকর্তা যে আবেদন করেছেন তা মঞ্জুর করে তার ব্যাংক হিসাবটি অবরুদ্ধ করা হয়েছে।
বিষয়টি নিশ্চিত করে দুদক কক্সবাজার সমন্বিত জেলা কার্যালয়ের সহকারি পরিচালক মো. নাছরুল্লাহ বলেন,’আদালতের নির্দেশে টাকাগুলো জব্দ করা হয়েছে এবং আরিফুল ইসলামের বিষয়ে অনুসন্ধান চলছে।
জানা যায়, ঘুস ছাড়া কোনো কাজই হয় না বাংলাদেশ রোড ট্রান্সপোর্ট অথরিটি (বিআরটিএ) কক্সবাজার জেলা অফিসে। অভিযোগ রয়েছে, মোটরযান নিবন্ধন, ড্রাইভিং লাইসেন্স, মালিকানা বদলি ও ফিটনেস নবায়ন করতে দালাল চক্র ও অফিস সহকারীদের চাহিদা অনুযায়ী টাকা পরিশোধ না করলেই হয়রানির শেষ থাকে না গ্রাহকদের। ঘুসের টাকা ঠিকঠাক না পেলে ফাইলে ভুল আছে জানিয়ে ফেরত দেওয়া হয় কাগজপত্র। বিআরটিএ অফিসের নির্দিষ্ট দালালের মাধ্যমে কাজ না করলে ঘুরতে হয় মাসের পর মাস, পার হয় বছরও। আবার ঘুসের পরিমাণও নির্ধারণ করা হয় কাজের ধরনের ওপর নির্ভর করে। সেটা নির্ধারণ করতেন আরিফুল ইসলাম। এ অফিসে অনিয়ম ও দুর্নীতি যেন নিয়ম হয়ে দাঁড়িয়েছে এমনটাই অভিযোগ সেবা প্রত্যাশীদের।
বিষয়টি জানার জন্য বিআরটিএর সহকারী মোটরযান পরিদর্শক আরিফুল ইসলামের মোবাইলে একাধিক বার ফোন করা হলেও রিসিভ না করায় বক্তব্য নেওয়া সম্ভব হয়নি।
Leave a Reply