আজ ২৩শে আশ্বিন, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ, ৮ই অক্টোবর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ

মার্কিন নতুন ভিসানীতি,সুষ্ঠু নির্বাচন নিশ্চিতে সুযোগ কাজে লাগাতে চায় বিএনপি

(আজকের দিনকাল):বাংলাদেশে অবাধ, সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণভাবে জাতীয় নির্বাচন নিশ্চিত করার লক্ষ্যে একটি নতুন ভিসানীতি ঘোষণা করেছে যুক্তরাষ্ট্র। নতুন নীতির আওতায় বাংলাদেশে গণতান্ত্রিক নির্বাচন প্রক্রিয়াকে বাধাগ্রস্ত করার জন্য দায়ী বা জড়িত বাংলাদেশিদের ভিসা দেবে না দেশটি। দেশের রাজনীতির অঙ্গন থেকে শুরু করে সচেতন সব মহলেই আলোচনার মূল বিষয় এ ভিসানীতি। এ নিয়ে গভীর পর্যালোচনা শুরু করেছে বিএনপির হাইকমান্ড। ইতোমধ্যে দলের নীতিনির্ধারকরা কয়েক দফা বৈঠক করেছেন। এসব বৈঠকে ভিসানীতির সুবিধা ও ঝুঁকি নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা হয়। বিএনপির একাধিক নীতিনির্ধারক  বলেন, নতুন এ ভিসানীতির ফলে সরকারসহ আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যদের মধ্যে এক ধরনের চাপ সৃষ্টি হবে। বিএনপির সামনে ঝুঁকির চেয়ে সুযোগই বেশি। রাজপথের আন্দোলনে সেই সুযোগগুলো দ্রুত কাজে লাগাতে চান তারা। এ লক্ষ্যে শিগগিরই সরকার পতনের একদফার আন্দোলনে যাওয়ার পরিকল্পনা করছে হাইকমান্ড। দলটির নীতিনির্ধারণী সূত্রে জানা গেছে এসব তথ্য।

বিএনপি নেতারা জানান, অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচনে আন্তর্জাতিক যতই চাপ আসুক কিংবা সরকার প্রতিশ্রুতি দিক নির্বাচনকালীন নিরপেক্ষ সরকারের দাবিতেই অনড় রয়েছেন তারা। এ দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত মাঠও ছাড়বেন না। তারা মনে করেন, যুক্তরাষ্ট্রসহ প্রভাবশালী দেশগুলো অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচনের ওপর জোর দিচ্ছে। মার্কিন ভিসানীতিতেও সে রকমই বলা হয়েছে। কিন্তু আগামী নির্বাচন নিয়ে সৃষ্ট সংকটের বিষয়ে কেউ কোনো কথা বলছে না। নির্বাচনটা কোন প্রক্রিয়ায় হবে সে ব্যাপারে সবাই চুপ। কিন্তু দেশের রাজনৈতিক সংকটের মূলে রয়েছে নির্বাচনকালীন সরকার। আমাদের মূল লক্ষ্য নির্বাচনকালীন নিরপেক্ষ সরকার। আন্দোলনের মাধ্যমেই সেই দাবি আদায় করতে হবে। তবে রাজপথের আন্দোলনকে কেন্দ্র করে সরকার মার্কিন ভিসানীতির ঝুঁকির মধ্যে বিএনপিকে ফেলে দিতে পারে। তাদের মতে, যুক্তরাষ্ট্র নতুন ভিসানীতিতে এটিও বলেছে, জাতীয় নির্বাচন সুষ্ঠু ও অবাধ করার ক্ষেত্রে যারাই বাধা সৃষ্টি করবে, তারাই এর আওতায় পড়বে। আন্দোলনের কর্মসূচি শান্তিপূর্ণ না থাকলে বা কোনো সহিংসতা হলে তা নির্বাচনের বাধা সৃষ্টির উপাদান হিসাবে গণ্য করতে যুক্তরাষ্ট্রকে আহ্বান জানাতে পারে সরকার।

তাই এ ঝুঁকি এড়িয়ে চলার সিদ্ধান্ত নিয়েছে দলটির হাইকমান্ড। সরকারবিরোধী আন্দোলনে সহিংসতা এড়িয়ে চলতে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। এমনকি তৃতীয় কোনো পক্ষ যাতে সহিংসতা সৃষ্টি করতে না পারে সে ব্যাপারেও সজাগ থাকতে হবে। দলটির একটি অংশ মনে করে, বিএনপির সুবিধার কথা চিন্তা করে ভিসানীতিতে পরিবর্তন আনেনি যুক্তরাষ্ট্র। ভূরাজনীতিতে দেশটির স্বার্থকে গুরুত্ব দিয়েই এ সিদ্ধান্ত নিয়েছি। তাই যে কোনো মুহূর্তে তাদের নীতির পরিবর্তনও আসতে পারে। সরকারবিরোধী আন্দোলনে এ বিষয়টিকে গুরুত্ব দিয়েই পরিকল্পনা সাজাচ্ছে দলটি।

জানতে চাইলে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, মানুষের ভোটাধিকার নিশ্চিত করার জন্য বিএনপিসহ বাংলাদেশের গণতন্ত্রপ্রিয় জনগণ দীর্ঘদিন ধরে যে দাবি জানিয়ে আসছিলেন, মার্কিন ভিসানীতিতে এর সুস্পষ্ট প্রতিফলন ঘটেছে। এরপরও বিএনপিসহ দেশের মানুষ বিশ্বাস করে, বর্তমান ফ্যাসিবাদী সরকারের অধীন কোনোভাবেই অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন সম্ভব হবে না। কেবল একটি নির্দলীয় ও নিরপেক্ষ নির্বাচনকালীন সরকারের অধীনেই তা সম্ভব। আর সে কারণেই বিএনপি দেশের সব গণতান্ত্রিক দল ও শক্তিকে সঙ্গে নিয়ে নির্দলীয় ও নিরপেক্ষ নির্বাচনকালীন সরকার আদায়ের লক্ষ্যে নিয়মতান্ত্রিক ও শান্তিপূর্ণ রাজনৈতিক কর্মসূচি পালন করে আসছে। এ দাবি আদায়ে আন্দোলন আরও বেগবান করা হবে।

তিনি বলেন, কর্মসূচি পালনে আমরা সব সময়ই সতর্ক। সহিংসতা এড়িয়ে গণতান্ত্রিকভাবে আন্দোলন করে যাচ্ছি। সরকার বারবার আমাদের সহিংসতার দিকে ঠেলে দেওয়ার চেষ্টা করছে। কিন্তু আমরা সে ফাঁদে পা দেইনি। ভবিষ্যতেও দেব না।

দলটির নেতারা মনে করেন, বর্তমান সরকার, নির্বাচন কমিশন এবং প্রশাসনের অধীনে নির্বাচন করে জয়ী হওয়া সম্ভব হবে না। পুরো প্রশাসনকে কাজে লাগিয়ে যে কোনো মূল্যে আওয়ামী লীগ আবার ক্ষমতায় আসার চেষ্টা চালাবে। তাছাড়া নির্বাচনের সূক্ষ্ম কারচুপিসহ সব টুকিটাকি বিষয়ে যুক্তরাষ্ট্রসহ প্রভাবশালী দেশগুলোর নজর রাখা সম্ভব নয়। তারা সেটা করবেও না। তাই কোনোমতে নির্বাচনের পরিবেশ সুষ্ঠু দেখিয়ে আওয়ামী লীগ জয়ী হয়ে সরকার গঠন করতে পারলে বিএনপিকে ভবিষ্যতে কড়া মাশুল দিতে হবে।

ভিসানীতির সুযোগ কাজে লাগিয়ে রাজপথের আন্দোলনের গতি বাড়াতে চায় দলটি। নীতিনির্ধারকরা মনে করছেন, মার্কিন ভিসানীতি সরকারের ওপর একটি বড় ধরনের চাপ। বিশেষ করে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী, বিচার বিভাগ, প্রশাসন, নিরাপত্তা সংশ্লিষ্ট সরকারি জনবল, সাবেক ও বর্তমান সরকারি কর্মকর্তা এবং রাজনৈতিক নেতৃত্বকে আওতাভুক্ত করার বিষয়টি তাৎপর্যপূর্ণ। এমন ঘোষণার পর নেতাকর্মীরা আন্দোলনের মাঠে নতুনভাবে উদ্দীপনা পেয়েছেন। তাদের মতে, বিএনপি নেতাকর্মীদের গ্রেফতার, মামলা-হামলাসহ পুলিশের কঠোর মনোভাবের পরিবর্তন আসবে। তাছাড়া আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীরাও মানসিকভাবে কিছুটা দুর্বল ও চাপে থাকবে। কয়েকদিন ধরে এদের বডি ল্যাংগুয়েজে ভিসানীতির প্রভাব কিছুটা হলেও ফুটে উঠেছে। গাজীপুরে নির্বাচনের দায়িত্বে থাকা সরকারি কর্মকর্তাসহ আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা সংযত ছিলেন। ভোটের মাঠে তাদের আচরণে পরিবর্তন দেখা গেছে। ভিসানীতির এ সুযোগগুলোকে কাজে লাগাতে দ্রুত সরকার পতনের একদফার কর্মসূচি দেওয়া উচিত বলে দলের বিভিন্ন পর্যায় থেকে জোরালো মত এসেছে। দলের নীতিনির্ধারকরাও এ ব্যাপারে একমত পোষণ করছেন। সরকারবিরোধী নতুন কর্মসূচি নিয়ে তারা দফায় দফায় বৈঠক করছেন। চূড়ান্তভাবে মাঠে নামার আগে আগামী কয়েক সপ্তাহ বিভাগীয় শহরে যুবদল, ছাত্রদল ও স্বেচ্ছাসেবক দলের যৌথ উদ্যোগে ‘তরুণ সমাবেশ’সহ কিছু কর্মসূচি ঘোষণা করা হতে পারে। জানতে চাইলে বিএনপির যুগ্মমহাসচিব অ্যাডভোকেট সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল বলেন, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্র্বাচন অনুষ্ঠানে কোন দেশ সরকারকে চাপ দিল তা নিয়ে ভাবছি না।

আমরা মনে করি এ সরকারের অধীনে কখনো অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন সম্ভব নয়। তারা করবেও না। তাই আগামী নির্বাচন অবশ্যই নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে হতে হবে। এর কোনো বিকল্প নেই। তিনি আরও বলেন, ভোট চুরির কারণেই মার্কিন ভিসানীতিতে পরিবর্তন আনা হয়েছে। নতুন নীতি ঘোষণার পর সরকারসহ সংশ্লিষ্টরা চাপে পড়েছে তাতে সন্দেহ নেই। তবে সরকার চাপে থাকুক কিংবা না থাকুক তা নিয়ে আমাদের মাথাব্যথা নেই। নির্বাচনকালীন নিরপেক্ষ সরকারের দাবিতে আমরা শিগগিরই আরও কঠোর কর্মসূচিতে যাচ্ছি।-যুগান্তর

Share

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

     এ ক্যাটাগরীর আরো সংবাদ