(আজকের দিনকাল):কয়লা সংকটে বন্ধ হচ্ছে পায়রা তাপবিদ্যুৎকেন্দ্র। গত দুদিন ধরে কেন্দ্রটির একটি ইউনিট বন্ধ হয়ে গেছে। আগামী ৩ জুন থেকে দ্বিতীয় ইউনিটের উৎপাদনও পুরোপুরি বন্ধ হয়ে যাবে বলে জানিয়েছেন বাংলাদেশ-চায়না পাওয়ার কোম্পানির ব্যবস্থাপনা পরিচালক এমএ খোরশেদুল আলম। এতে প্রায় সাড়ে ১২শ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন কমে যাবে। শুধু পায়রা নয়, জ্বালানি সংকটের কারণে এই মুহূর্তে ৫৮টি বিদ্যুৎকেন্দ্র বন্ধ আছে। এছাড়া কারিগরি সমস্যার কারণে ৩১টি আর রক্ষণাবেক্ষণে বন্ধ আছে ১৫টি বিদ্যুৎকেন্দ্র। এ অবস্থায় গড়ে বিদ্যুৎ উৎপাদন নেমে এসেছে ৯ থেকে ১৪ হাজার মেগাওয়াটের মধ্যে। সরকারি হিসাবে এখন গড়ে বিদ্যুতের চাহিদা ১৮ থেকে ১৯ হাজার মেগাওয়াট। ফলে ফের লোডশেডিং বাড়ার আশঙ্কা করছেন বিশেষজ্ঞরা।
বাংলাদেশ-চায়না পাওয়ার কোম্পানির ব্যবস্থাপনা পরিচালক এমএ খোরশেদুল আলম বলেন, ডলার সংকটের কারণে মূলত কয়লা আমদানি করা যাচ্ছে না। এর ফলে উৎপাদন ব্যাহত হচ্ছে।
জানা গেছে, ডলার সংকটের কারণে দীর্ঘদিন ধরে আমদানি করা কয়লার বিল পরিশোধ করতে পারছিল না পায়রা বিদ্যুৎকেন্দ্রটি। বড় অঙ্কের বকেয়া জমে যাওয়ায় কয়লা সরবরাহ বন্ধ করে দেওয়ার হুমকি দিয়ে কিছু দিন আগে চিঠি দিয়েছিল সরবরাহকারী বিদেশি একটি প্রতিষ্ঠান। গত এপ্রিলে বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজসম্পদ মন্ত্রণালয়কে হুমকির বিষয়টি জানিয়েছিল বিসিপিসিএল। অনুলিপি অর্থ বিভাগের সিনিয়র সচিব, বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডের চেয়ারম্যান এবং বাংলাদেশ ব্যাংকের ডেপুটি গভর্নরকেও দেওয়া হয়েছিল।
বকেয়া দ্রুত পরিশোধ করা অত্যন্ত জরুরি উল্লেখ করে ওই চিঠিতে বলা হয়েছিল, ‘অন্যথায় বিদ্যুৎ উৎপাদন বন্ধ হয়ে গ্রীষ্ম ও সেচ মৌসুমে ব্যাপকভাবে লোডশেডিংয়ের কারণে জাতীয় অর্থনীতি হুমকির সম্মুখীন হবে।’ জানা গেছে, পূর্ণ সক্ষমতায় বিদ্যুৎ উৎপাদনে পায়রা বিদ্যুৎকেন্দ্রের দৈনিক প্রয়োজন ১২ হাজার টন কয়লার। প্রতি মাসে যার পরিমাণ দাঁড়ায় তিন লাখ ৬০ হাজার টন। কেন্দ্রটিতে কয়লা সরবরাহ করে ইন্দোনেশিয়ান কোম্পানি পিটি বায়ান রিসোর্স টিবিক। তবে, অর্থ পরিশোধ না করায় কোম্পানিটিও আর কয়লা সরবরাহ করবে না বলে জানিয়ে দিয়েছে। অপর দিকে কয়লা সরবরাহ করে বকেয়া পাওনা পরিশোধ না করায় সিএমসির ওপর কয়লা আমদানির নিষেধাজ্ঞা জারি করেছে চীনের বৈদেশিক মুদ্রা নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষ।
তবে বাংলাদেশ-চায়না পাওয়ার কোম্পানির এক কর্মকর্তা বলেন, অল্প কিছু কয়লা আসার সম্ভাবনা আছে। সে কয়লা আনার জন্য যদি ১ জুন এলসি খোলা হয় সেগুলো আসতে কমপক্ষে ২৫ দিন লেগে যাবে। সরকার ১০০ মিলিয়ন মার্কিন ডলারের ব্যবস্থা করেছে। এর মধ্যে ৫৮ মিলিয়ন পাওয়া গেছে। বাংলাদেশ ব্যাংক বলেছে, ৩১ মে’র মধ্যে ৪২ মিলিয়ন দিয়ে দেবে। এপ্রিল পর্যন্ত সিএমপির কাছে বকেয়া আছে ৩৩৫ মিলিয়ন ডলার। সিএমসি জানিয়েছে, ৩১ মে’র মধ্যে ৪২ মিলিয়ন পেমেন্ট করলে তারা এলসি খুলবে।
বিদ্যুৎ বিভাগ বলছে, সম্প্রতি জ্বালানি সংকটে দেশে শুরু হওয়া লোডশেডিং সামাল দিতে পায়রা বিদ্যুৎকেন্দ্রের গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা ছিল। রমজান মাসজুড়ে লোডশেডিং নিয়ন্ত্রণে এই কেন্দ্রের ওপর বিশেষভাবে নির্ভরশীল ছিল বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড (পিডিবি)।
পিডিবি সূত্রে জানা গেছে, দেশে মোট বিদ্যুৎকেন্দ্রের সংখ্যা ১৩৩টি। এর মধ্যে গ্যাসভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্র ৫৭টি, তেলভিত্তিক ৬৭টি, কয়লাভিত্তিক তিনটি, নবায়নযোগ্য ছয়টি। এগুলোর মাধ্যমে মোট বিদ্যুৎ উৎপাদন হয় ১৯ হাজার ৫০০ মেগাওয়াট। কিন্তু ডলার সংকটের কারণে জ্বালানি সরবরাহ করতে না পারায় মোট ৮৫টি বিদ্যুৎকেন্দ্র বন্ধ রয়েছে। এছাড়া কারিগরি ত্রুটি, রক্ষণাবেক্ষণ ও অন্যান্য কারণে ৩৪১৪ মেগাওয়াট উৎপাদন ঘাটতি রয়েছে। এ অবস্থায় আগামী মাস থেকে ফের লোডশেডিং বাড়তে পারে বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা।
বিদ্যুৎ জ্বালানি ও খনিজসম্পদ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ বলেন, বৈশ্বিক প্রেক্ষাপট বিদ্যুৎ ও জ্বালানি খাতকে বড় ধরনের চ্যালেঞ্জের মধ্যে ফেলেছে। সঞ্চালন ও বিতরণ ব্যবস্থা পরিকল্পনা মাফিক চললেও প্রাথমিক জ্বালানির ধারাবাহিক সরবরাহ চ্যালেঞ্জে পড়েছে। তবে তিনি বলেন, আগামী দুই বছরে আরও ২০০০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ নবায়নযোগ্য উৎস হতে উৎপাদন করা হবে। নেপাল থেকে বিদ্যুৎ আসবে। গভীর সমুদ্রে অনুসন্ধান কার্যক্রম বাড়ানো হচ্ছে। পিএসসি হালনাগাদ ও আকর্ষণীয় করা হচ্ছে। ট্রান্সমিশন বেসরকারি খাতে দেওয়া হচ্ছে। বিতরণ ব্যবস্থা আধুনিকায়ন করা হচ্ছে। তিনি বলেন, গ্যাস অনুসন্ধান কার্যক্রম বাড়ানো হচ্ছে, আশা করি আরও গ্যাস পাওয়া যাবে। ভোলার গ্যাস মূলধারায় আনার প্রচেষ্টা অব্যাহত রয়েছে। এতে বিদ্যুৎ সরবরাহ বাড়লে লোডশেডিং নিয়ন্ত্রণে রাখা সম্ভব হবে।-যুগান্তর
Leave a Reply