(আজকের দিনকাল):চট্টগ্রাম দক্ষিণ জেলা আওয়ামী লীগের পূর্ণাঙ্গ কমিটিতে কারা আসছেন, তা নিয়ে অন্ধকারে সবাই। দলের সিনিয়র নেতা, মন্ত্রী, এমপি-কেউই জানেন না কাকে স্থান দেওয়া হয়েছে বা হচ্ছে। ভারপ্রাপ্ত সভাপতি মোতাহেরুল ইসলাম চৌধুরী ও সাধারণ সম্পাদক মফিজুর রহমান মিলে ৭৫ সদস্যের একটি তালিকা কেন্দ্রে জমা দিয়েছেন। কোনো কোনো ক্ষেত্রে পদ বাণিজ্য হয়েছে বলে সন্দেহ করছেন দলের সিনিয়র নেতারা। তা না হলে পূর্ণাঙ্গ তালিকা তৈরিতে কেন এমন গোপনীয়তা রক্ষা করা হলো, কারও সঙ্গে আলোচনা করা হলো না-এই প্রশ্ন তুলেছেন তারা।
এদিকে ‘মনগড়া’ তালিকা জমা দেওয়ার খবর পেয়ে একাট্টা হয়েছেন দক্ষিণ জেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সিনিয়র নেতা ও সাবেক ছাত্রনেতারা। তাদের মধ্যে ২০-৩০ জন কেন্দ্রে লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন বলে জানা গেছে। এছাড়া প্রস্তাবিত কমিটি ঠেকাতে সাবেক কয়েকজন সিনিয়র নেতা এরই মধ্যে কয়েক দফা বৈঠকও করেছেন। তাদের দাবি, বর্তমান কমিটি স্থগিত করে নতুন কমিটি ঘোষণা করা হো
। দলের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরকে অনেকে মৌখিকভাবে বিতর্কিত তালিকা জমা দেওয়ার বিষয়ে অভিযোগ করেছেন। তিনি দায়িত্বপ্রাপ্ত নেতার কাছে লিখিত অভিযোগ দেওয়ার জন্য পরামর্শ দিয়েছেন। তবে মোতাহেরুল ইসলাম চৌধুরী মঙ্গলবার বলেন, সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে আলাপ করেই তালিকা তৈরি করে তা বুধবার জমা দেওয়া হয়েছে।
জানা যায়, গত বছরের ২২ ডিসেম্বর চট্টগ্রাম দক্ষিণ জেলা আওয়ামী লীগের সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়। চট্টগ্রাম এমএ আজিজ স্টেডিয়ামের জিমনেশিয়ামে অনুষ্ঠিত ওই সম্মেলনে ভার্চুয়ালি প্রধান অতিথি হিসাবে যুক্ত হন দলের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের। ওই সম্মেলনে প্রথম অধিবেশনেই মোছলেম উদ্দিন আহমদকে সভাপতি ও মফিজুর রহমানকে সাধারণ সম্পাদক হিসাবে পুনর্বহাল করার ঘোষণা করা হয়।
একই সঙ্গে সংশ্লিষ্ট এলাকার এমপি-মন্ত্রী, সিনিয়র নেতাসহ সবার সঙ্গে আলোচনা করে পূর্ণাঙ্গ কমিটি জমা দেওয়ার নির্দেশনা দেন কেন্দ্রীয় নেতারা। এরই মধ্যে নতুন কমিটি ঘোষণার দুই মাসেরও কম সময়ে চলতি বছর ৫ ফেব্রুয়ারি দ–রারোগ্য ব্যাধিতে মারা যান মোছলেম উদ্দিন আহমদ। তার মৃত্যুর পর গত কমিটির ৩ নম্বর সহসভাপতি মোতাহেরুল ইসলাম চৌধুরীকে ভারপ্রাপ্ত সভাপতির দায়িত্ব দেওয়া হয়।
দলের সাধারণ নেতাকর্মীদের অভিযোগ, ২০০১ সালে মোছলেম উদ্দিন নৌকা প্রতীকে পটিয়া সংসদীয় আসনে নির্বাচন করেছিলেন। সেসময় মোতাহেরুল ইসলাম তার বিরুদ্ধে বিদ্রোহ করেন। এ কারণে তাকে দক্ষিণ জেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক পদ থেকে অব্যাহিত দেওয়া হয়।
দলীয় নেতাকর্মীরা বলছেন, মোতাহেরুল ইসলামকে ভারপ্রাপ্ত সভাপতির দায়িত্ব দেওয়াটাও গঠনতন্ত্রবিরোধী। বিদায়ি কমিটির কাউকে যদি ভারপ্রাপ্ত সভাপতির দায়িত্ব দেওয়া হয়, সেক্ষেত্রে এক নম্বর সহসভাপতিরই দায়িত্ব পাওয়ার কথা। দলীয় শৃঙ্খলা ভঙ্গের কারণে বহিষ্কৃত একজন নেতাকে এ দায়িত্ব দেওয়াটা সিনিয়র অনেক নেতাই মেনে নিতে পারেননি।
দক্ষিণ জেলা আওয়ামী লীগের বিদায়ি কমিটির তথ্য ও গবেষণা সম্পাদক আবদুল কাদের সুজন বলেন, সর্বশেষ সভাপতি-সাধারণ সম্পাদক মিলে ৭৫ সদস্যের জেলা কমিটির তালিকা তৈরি করেছেন অত্যন্ত গোপনে। শোনা যাচ্ছে, কোনো কোনো শিল্পপতিকে বড় পদে স্থান দেওয়া হয়েছে আর্থিক লেনদেনের মাধ্যমে। গোপনে করা ওই তালিকা বাদ দেওয়ার জন্য সিনিয়র নেতাদের অনেকেই দলের সাধারণ সম্পাদকের কাছে আবেদন জানিয়েছেন।
একই সঙ্গে পদপ্রত্যাশীদের জীবনবৃত্তান্ত জমা নিয়ে যাচাই-বাছাই করে নতুন কমিটি ঘোষণার দাবিও জানান তারা। আমরাও চাই স্বচ্ছতার মাধ্যমে সবার মতামতের ভিত্তিতে একটি শক্তিশালী কমিটি হোক। নির্বাচনের আগে যাতে দলে কোনো বিতর্ক বা দলাদলি ছড়িয়ে না পড়ে।-ডেস্ক
Leave a Reply