আজ ১লা চৈত্র, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ, ১৫ই মার্চ, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ

আমদানির আড়ালে অর্থ পাচার

(আজকের দিনকাল):শর্ত ভঙ্গ করে চীন থেকে রেডিমেড মিটার আমদানি করে খুলনার ওয়েস্ট জোন পাওয়ার ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানির (ওজোপাডিকো) দুই কর্মকর্তা অর্থ পাচারের অভিনব কৌশল বেছে নিয়েছেন। পণ্য আমদানিতে অতিরিক্ত দামের ট্যাগ বসিয়ে তারা প্রায় ৩৬ কোটি টাকা পাচার করলেও পুরো টাকা তাদের হাতে পৌঁছেনি। বিষয়টি আগেই ওজোপাডিকো কর্তৃপক্ষের নজরে পড়ে এবং বিলের টাকা আটকে দেয়।

ওজোপাডিকোর সাবেক দুই কর্মকর্তা ও চীনা কোম্পানির এক প্রতিনিধির বিরুদ্ধে মামলা করেছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। বিষয়টি নিয়ে একটি গোয়েন্দা সংস্থাও তদন্ত করছে। এদিকে, পাচার হওয়া অর্থ ফেরত এনে সরকারি কোষাগারে জমাদানের দাবি জানিয়েছেন ওজোপাডিকো কর্মকর্তারা।

ওজোপাডিকো সূত্র জানায়, বিদ্যুৎ খাতের ব্যয় সাশ্রয় করতে ২০১৮ সালে দেশে প্রিপেইড মিটার তৈরির নির্দেশনা দেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। সে সময় বাংলাদেশ স্মার্ট ইলেকট্র্যিাল কোম্পানি লিমিটেড (বিসেকো) একটি কোম্পানি প্রতিষ্ঠা করে ওজোপাডিকো। এর ৫১ শতাংশের মালিকানা নেয় ওজোপাডিকো কোম্পানি এবং ৪৯ শতাংশ চায়না হেক্সিং ইলেক্ট্রিক্যাল লিমিটেড। শুরু থেকে কয়েকজন কর্মকর্তা পরস্পর জোগসাজশে ভিত্তিহীন বাজেট তৈরি, মালামাল ক্রয়ে সরকারি নিয়ম অমান্য, স্বাক্ষর স্ক্যান করে বোর্ড সভার ভুয়া কার্যবিবরণী তৈরি, ভ্যাট ও আয়কর ফাঁকি, সার্কুলার ছাড়া নিয়োগ, ফ্যাক্টরি ও আবাসিক ভবনের ভাড়ার টাকা আত্মসাৎ, জাল স্বাক্ষরে ব্যাংক থেকে টাকা হস্তান্তরসহ লাগামহীন দুর্নীতি করে।

২০২০ সালের ২৫ অক্টোবরে প্রিমিয়ার ব্যাংকের ঢাকার গুলশান শাখায় এলসি খোলে বেসিকো। সেখানে ১ কোটি ২০ লাখ টাকা মূল্যের এমডিএম ও হেস (এইচইএস) সিস্টেম সফটওয়্যার বাবদ ১০ কোটি ৩৭ লাখ টাকা দেখানো হয়। সেক্ষেত্রে অতিরিক্ত ৯ কোটি ১৭ লাখ টাকা এলসি করে চীনে পাচার করা হয়েছে। এলসির চার নম্বরে রয়েছে- বিদেশ প্রশিক্ষণ বাবদ ২ কোটি ৯৭ লাখ টাকা। তবে আদৌ কোনো কর্মকর্তা বিদেশে প্রশিক্ষণ নেননি। এ এলসিতে বেসিকোর উপ-ব্যবস্থাপনা পরিচালক ইয়ে ওয়েনজুনের স্বাক্ষর জাল করা হয়। ৩১ মে ওজোপাডিকোর সাবেক এমডি শফিক উদ্দিন ও কোম্পানি সচিব আব্দুল মোতালেব ও হেক্সিং ইলেকট্রিক্যাল কোম্পানির কান্ট্রি রিপ্রেজেনটেটিভ ইয়ে ওয়েনজুনের বিরুদ্ধে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) অর্থ পাচারের অভিযোগে মামলা করেছে।

সূত্রটি জানায়, বিসেকোর পারফরম্যান্স ও আর্থিক অডিট নিরীক্ষা কার্যক্রম পরিচালনার জন্য ২০২১ সালের ১৩ জুন একটি কমিটি করা হয়। তিন সদস্যের কমিটির আহ্বায়ক ছিলেন ওজোপাডিকোর মহাব্যবস্থাপক (হিসাব ও অর্থ) আর কে দেবনাথ। কমিটির প্রতিবেদনে বলা হয়, বিসেকোতে অন্তত ৩৭টি বিষয়ে অনিয়ম ও জালিয়াতির ঘটনা ঘটেছে। বিষয়গুলোর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো-মিটার তৈরির জন্য এসকেডি পার্টস আমদানি করতে প্রকৃত বাজার মূল্য না দেখিয়ে তার থেকে অনেক বেশি মূল্য অর্থাৎ ৮২ দশমিক ৩৬ কোটি টাকায় এসব পার্টস আমদানির জন্য হেক্সিংয়ের সঙ্গে চুক্তি করে।

এছাড়া ২০২০ সালে ওজোপাডিকোর আওতাধীন যশোর এলাকায় ৬৯ হাজার ১৬০টি মিটার সরবরাহের অর্ডার পায় বেসিকো। এলসির মাধ্যমে ২০ লাখ ১১ হাজার ৬৬০ ডলারের বিনিময়ে চীন থেকে রেডিমেইড মিটার আমদানি করা হয়। যা পরবর্তী সময়ে মেইড ইন বাংলাদেশ লিখে চালিয়ে দেওয়া হয়। অথচ উন্মুক্ত দরপত্র পদ্ধতিতে (ওটিএম) ওই সংখ্যক মিটার কিনলে প্রায় ১৮ কোটি ৩৮ লাখ টাকা সাশ্রয় হতো।

একটি গোয়েন্দা সংস্থার তদন্ত প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়-অর্থ পাচারের জন্যই প্রথম থেকে টার্গেট করে বেসিকোর অর্থ পরিচালক আব্দুল মোতালেব এবং উপ-ব্যবস্থাপনা পরিচালক ইয়ে ওয়েনজুন ও রুলং ওয়াং। এছাড়া মিটার বিক্রিসহ নানা খাতে অনিয়মের বিষয়টি স্পষ্ট। এর সঙ্গে ওজোপাডিকোর সাবেক এমডি শফিক উদ্দিন, মোতালেব এবং চীনা নাগরিক ইয়ে ওয়েনজুন সরাসরি জড়িত।

মামলার তদন্তের বিষয়ে দুদকের তদন্ত কর্মকর্তা তরুণ কান্তি ঘোষ বলেন, প্রাথমিক সত্যতা পাওয়ায় মামলা করেছি। জালিয়াতির মাধ্যমে অর্থ ছাড়ের সব প্রক্রিয়া বন্ধে চিঠি দেওয়া হয়েছে। তদন্তের স্বার্থে এর বেশি কিছু বলা সম্ভব নয়।-যুগান্তর

Share

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

     এ ক্যাটাগরীর আরো সংবাদ