মোঃ রাশেদুল ইসলাম,(আজকের দিনকাল): উকিলের ফিস কম দেয়াকে কেন্দ্র করে নাটোরে বিচারপ্রার্থীদের বেধরক মারধর করে আটকে রাখে আইনজীবিরা। বৃহস্পতিবার দুপুর দেড়টার দিকে নাটোর আইনজীবি সমিতির নতুন ভবন চত্তরে এই ঘটনা ঘটে।
ভুক্তভোগীরা বলেন, গ্রামের মসজিদ কমিটি গঠন কেন্দ্র করে একটা বিবাদমান ঘটনায় তাদের ছয় ভাইয়ের নামে মামলা হয়। আসমীরা ছয় ভাই বাগাতিপাড়া উপজেলার বাসিন্দা এবং তাদের মধ্যে তিন ভাই বিভিন্ন উচ্চ বিদ্যালয় এবং প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক। সেই মামলায় তারা সকলে জামিনে আছেন। বৃহস্পতিবার মামলাটির পুনরায় জামিন নিতে এলে তাদের নি্য়োগকৃত আইনজীবি এড. মো. ময়নাল ইসলাম এক হাজার টাকা ফিস চান। পরে তাঁরা পাঁচ শত টাকা দিতে চাইলে আইনজীবি উত্তেজিত হয়ে যায় এবং ফাইল ফেলে দিয়ে গালিগালাজ করতে থাকে। পরে তারা গালিগালাজের প্রতিবাদ করা মাত্র আইনজীবি ময়নালসহ আরো প্রায় ৪০-৫০জন আইনজীবি এবং আইনজীবি সহকারী (মোহরার) তাদের তিন ভাইকে বেধরক মারধর করতে থাকে।
তিন ভাই বিদ্যালয় শিক্ষক হওয়ায় তারা নাম প্রকাশ না করার অনুরোধ করে ঘটনার বর্ণনায় ছোটভাই বলেন, ‘আইনজীবি ময়নাল মামলার যাবতীয় খরচ বাদ দিয়ে ১০০০ টাকা ফিস দাবি করেন। তখন আমি বলি সব সময় তো ৫০০ টাকা দিই আজকেও ৫০০ টাকা নেন। এতে উত্তেজিত হয়ে এড. ময়নাল ইসলাম তাদের মামলার নথি ছুড়েঁ ফেলে দেন এবং অকথ্য গালিগালাজ করেন। এক পর্যায়ে উকিল বলেন তোরা বেয়াদব তোদের মামলা চালাবো না। আমি বলি আমরা শিক্ষক মানুষ টাকা লাগলে আরো দিচ্ছি তাই বলে এভাবে গালিগালাজ করবেন। আমি আইনজীবিকে বলেছি, আপিনও তো বেয়াদব। এক কথা বলতেই আনিজীবি ময়নাল এবং তার মোহরার মিজান কিলঘুষি মারতে শুরু করে। এরপর অন্যান্য আইনীজিবি এবং মোহরাররা তাদের সাথে যোগ দিয়ে মারধর করতে থাকে। পরে সেখান থেকে আমি পালিয়ে পাশে গিয়ে অন্যান্য আইনজীবিদের কাছে সাহায্য প্রার্থনা করে বলি আমার ভাইদের মেরে ফেললো আপনারা বাঁচান। কিন্তু কেউ এগিয়ে আসেনি। পরে আমি পুনরায় এগিয়ে গেলে সকলে মিলে আবার নির্বাচারে আমাকে মারতে থাকে। মনে হচ্ছিল আজকেই আমার জীবন শেষ। আমার মাথায় এতটাই মেরেছে যে এখনও মাথা ঝিম ধরে আছে।
‘কার কাছে বিচার চাইবো?’ এমন প্রশ্ন করে কান্না জড়িত কন্ঠে ভুক্তভোগী স্কুল শিক্ষক বলেন, আমরা শিক্ষিত লোক। শিক্ষকতা করি। আমাদের সাথে এমন ঘটনা ঘটবে চিন্তাও করতে পারি নি। লজ্জায় আমাদের মুখ দেখানো কঠিন হয়ে পড়েছে।
ভুক্তভোগী অপর ভাই বলেন, “আমাদের তিন ভাইয়ের নাকমুখ ফুলে গেছে। আইনজীবিদের বিরুদ্ধে যদি মামলা করি তাহলে কে আইনজীবিদের বিরুদ্ধে লড়বে বিচারই বা করবে কে? সেকারণে আল্লাহর কাছে বিচার দিয়েছি। সামান্য টাকা জন্য আমাদের নির্বিচারে মারধর করলো আইনজীবিরা। পরে বাগাতিপাড়া ইউনিয়ন পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান শরিফুল ইসলাম আমাদেরকে উদ্ধার করে নিয়ে আসে। সেখান থেকে নাটোর সদর হাসপাতালে ভর্তি হয়ে চিকিৎসা নিয়ে বাড়িতে এসেছি।
অভিযুক্ত আইনজীবি মো. ময়নাল ইসলাম বলেন, বাগাতিপাড়া উপজেলার একটা মারামারি মামলার আসামী পক্ষের আইনজীবি ছিলেন তিনি। ছয়টা আসামী জামিন করিয়েছি। বেলবন্ডসহ আনুসাঙ্গিক খরচ প্রায় ১০০০ টাকা। কিন্তু তারা আমাকে ৪০০ টাকা দিতে চায়। এতে তারা ক্ষিপ্ত হয়ে ওঠে এবং গালিগালাজ করতে থাকে। পরে অন্যান্য আইনীজীবি এবং মোহরাররা এসে তাদেরকে মারধর করে। আমি কোন মারধর করিনি। ঘটনার জন্য আমিও লজ্জিত।
নাটোর আইনজীবি সমিতির সাধারন সম্পাদক এড. মালেক শেখ বলেন, মামলার ফিস কম দেয়াকে কেন্দ্র করে আইনজীবি এবং বিচারপ্রার্থীর মধ্যে বাকবিতন্ডা হয়। এক পর্যায়ে বিচারপ্রার্থীরা আনিজীবিকে ধাক্কা দিলে উপস্থিত আইনজীবি এবং মেহরাররা তাদেরকে মারধর করে। পরে স্থানীয় জনপ্রতিনিধির জিম্মায় তাদের হস্তান্তর করা হয়।
বাগাতিপাড়া ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান শরিফুল ইসলাম শরিফ বলেন, “আমাকে লোকজন বললো আপনার এলাকায় লোকদের আইনজীবিরা মারধর করে আটকে রাখছে তাদের বাঁচান। আমি ছুটে গিয়ে তাদেরকে উদ্ধার কররে নিয়ে আসি। ভুক্তভোগীদের পরে কোন ক্ষতি হলে আইনজীবিদের কোন বিপদ হয় কিনা সেই আশংকা করে আইনজীবিরা আমার কাছ থেকে স্বাক্ষর চাইলে আমি স্বাক্ষর করে তাদের ছাড়িয়ে নিই।”
নাটোরের সচেতন নাগরিক কমিটির সভাপতি রেজাউল করিম রেজা বলেন, আইনজীবিদের হাতে বিচারপ্রার্থীরা যদি লাঞ্ছিত হওয়ার ঘটনা ঘটে সেটা খুবই দুর্ভাগ্যজনক বিষয়। আইনজীবিরা সমাজের সম্মানিত অগ্রসর জনগোষ্ঠি তাদের কাছ থেকে এমন ঘটনা কোমভাবেই কাম্য নয়। ভবিষ্যতে যেন এমন ঘটনা কখনও আর না ঘটে সেজন্য আইনজীবি সমিতির উচিত বিষয়টি তদন্ত করে কার্যকর ব্যবস্থা নেয়া।
Leave a Reply