আজ ২৭শে অগ্রহায়ণ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ, ১২ই ডিসেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ

ঈদ ভ্রমণে সুরক্ষিত থাকবেন যেভাবে

(আজকের দিনকাল):কড়া নাড়ছে মুসলমানদের অন্যতম ধর্মীয় উৎসব পবিত্র ঈদুল আজহা। ঈদে গ্রামের বাড়িতে পরিবারের সবাইকে নিয়ে এ উৎসব পালন করে আসার ঐতিহ্য রয়েছে। ঈদ উপলক্ষ্যে বাড়ি বা বিভিন্ন স্থানে বেড়াতে যেতে ভ্রমণ শুধু আরামদায়ক নয়, নিরাপদ এবং স্বাস্থ্যপদ হতে হয়। ভেবেচিন্তে ভ্রমণ না করলে বিপদ হওয়ার আশঙ্কা থাকে। বিস্তারিত লিখেছেন সিলেট এমএজি ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের নাক, কান ও গলা বিভাগের রেজিস্ট্রার ডা. মো. আব্দুল হাফিজ শাফী।

ঈদে অনেকেই বাড়ি যাওয়ার জন্য খুব ব্যস্ত হয়ে পড়েন। এ জন্য ভ্রমণের সময় সতর্ক ও সাবধান থাকতে হবে। যারা ঈদে বাড়ি যাবেন, দূরের যাত্রায় অতিরিক্ত যাত্রী নিয়ে যেসব যানবাহন চলে সচেতন ব্যক্তি হিসাবে তা অবশ্যই পরিহার করবেন। এবার ঈদ হচ্ছে গরমের মধ্যে এবং বৃষ্টির মৌসুমে। ভ্রমণের সময় প্রচণ্ড গরমে হিট স্ট্রোক হতে পারে, এ জন্য ট্রাভেল ব্যাগে পানি ও সরবত রাখতে হবে। শরীরে লবণশূন্যতা হতে পারে, তাই ভ্রমণ শুরুর আগে দু-একটা খাবার স্যালাইন সঙ্গে রাখা ভালো।

ঈদেরযাত্রায় সাবধান থাকতে হবে। যাত্রীরা অজ্ঞান পার্টির খপ্পরে পড়ে সর্বস্ব হারিয়ে বসেন, এমনকি জীবনের জন্য ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে পরে। এ ব্যাপারটি ভুলে গেলে চলবে না। যাত্রাপথে অপরিচিত কারও দেওয়া কিছু খাবেন না। কাউকে সন্দেহ হলে ভদ্রতার সঙ্গে এড়িয়ে চলবেন।

গ্রামের বাড়িতে গেলে ছোট শিশুদের দিকে বিশেষ খেয়াল রাখবেন। বাড়ির আশপাশে পুকুর-ডোবা থাকলে শিশুদের কিছুতেই একা ছাড়বেন না। বাড়ির বয়স্করা নিয়মিত যে ওষুধ সেবন করেন, তা পর্যাপ্ত পরিমাণে সঙ্গে নিন ঈদ যাত্রায়। ফাস্ট এইড ওষুধ যেমন-খাবার স্যালাইন, প্যারাসিটামল, অ্যালার্জি প্রতিরোধক ওষুধ, আমাশয় ও হজম রিলেটেড ওষুধ আগে ভাগেই সংগ্রহ করে রাখা ভালো যাতে কোনো সমস্যা হলে তার আশু সমাধান করা যায়। তবে সবার আগে প্রথমেই প্রি-জার্নি প্ল্যানিং করে নিতে হয়।

* ভ্রমণের আগে যা করতে হবে

▶ জার্নি শট না লং ডিসটেন্স হবে সেটা ভাবনায় রাখুন। সাধারণত ৪-৬ ঘণ্টার বেশি সময়ের জার্নিং লং ডিসটেন্স ধরা হয়।

▶ কী ধরনের খাবার জার্নিতে সঙ্গে নিতে হয়, পানি বা পানীয়ও কেমন হওয়া উচিত তা জেনে নিন।

▶ পোশাকের ধরন কেমন হবে।

▶ হঠাৎ বা তাৎক্ষণিক স্বাস্থ্য সমস্যা মোকাবিলায় কী করণীয়।

▶ সুখকর ভ্রমণের জন্য কী করা যায়।

▶ রোগীরা জার্নি করলে কোনো বিশেষ দিক লক্ষ্য রাখতে হয় কিনা।

এসব কিছুর সমাধান জেনেই জার্নি শুরু করতে হয়। লক্ষ্য রাখতে হবে, জার্নির স্টেস বা স্টেন যেন শারীরিক সমস্যার কারণ হয়ে না দাঁড়ায়।

* হোমমেড খাবার সঙ্গে রাখুন

জার্নির শুরুতে হালকা খাবার খেয়ে নিতে পারেন। শুকনো খাবার যেমন-প্যাকেট বিস্কুট জার্নিতে সঙ্গে নিন। যেসব ফল ছিলে খাওয়া যায়, যেমন-কমলা, কলা ইত্যাদি ভ্রমণে খাওয়া স্বাস্থ্যকর। এ থেকে জীবাণু সংক্রমণের সুযোগ কম। অন্য ফল খেলে মিনারেল ওয়াটার দিয়ে ধুয়ে নিতে হবে। ভ্রমণে রাস্তায় তৈরি খাবার একদমই খাওয়া যাবে না। আরেকটি দিক লক্ষ রাখবেন, অপরিচিতজন থেকে কোনো খাবার অবশ্যই খাবেন না। খাবারে চেতনাশক মিশিয়ে যাত্রীর মালপত্র ছিনতাইয়ের ঘটনা আমরা প্রায়ই শুনে থাকি। পাশে যে বসল, তার দিকেও লক্ষ্য রাখুন।

বাচ্চারা যে কোনো যাতায়াতে ঘন ঘন খেতে চায়। তাহলে প্যাকেটে করে চিপস, বিস্কুট নিতে পারেন। যদি ড্রিংকস খেতে চায় তবে ক্যান বা বোতলেরটা খাবে। শিশু এবং বড়রা কুলি করা, ব্রাশ করা, এমনকি মুখ ধোয়ার সময়ও মিনারেল ওয়াটার ব্যবহার করা ভালো।

* ভ্রমণে সাধারণ স্বাস্থ্য সমস্যা প্রতিরোধ

এ সময় ডিহাইড্রেশন, ট্রাভেলারস ডায়রিয়া এবং হেপাটাইটিস বা লিভারে প্রদাহ সাধারণত অপর্যাপ্ত পানি বা অনিরাপদ খাবার ও পানীয় থেকে হতে পারে। এছাড়া হার্ট ডিজিজ বা যাদের উচ্চরক্তচাপ আছে, তাদের স্ট্রেসজনিত জটিলতা হতে পারে। তাৎক্ষণিক প্রতিষেধকের জন্য কিছু ওভার দ্য কাউন্টার বা ওটিসি ড্রাগ সঙ্গে রাখতে পারেন। এগুলো হলো জ্বর ও ব্যথা কমানোর জন্য প্যারসিটামল গ্রুপ, অ্যান্টি ডায়রিয়া জাতীয় ওষুধ, ওরস্যালাইন এবং অ্যান্টি অ্যালার্জি জাতীয় ওষুধ।

* রোগীদের নিরাপদ জার্নি

প্রথমেই খেয়াল রাখতে হবে, তারা যে ওষুধগুলো নিয়মিত খাচ্ছে তা পর্যাপ্ত পরিমাণে সঙ্গে নিচ্ছে কিনা। এ ছাড়া ডাক্তারের প্রেসক্রিপশনের ফটোকপি বা তার শর্ট মেডিকেল হিস্ট্রি সঙ্গে থাকা ভালো। কোনো অসুবিধা হলে আশপাশের মানুষ এ কাগজ পড়ে রোগীকে উপকার করতে পারেন। ডায়াবেটিস, উচ্চরক্তচাপ, হার্ট ডিজিজ, বাতরোগের ওষুধ, অ্যাজমা বা অ্যালার্জির ওষুধ সঙ্গে নিতে ভুলবেন না। ইনহেলার, ইনসুলিন ইত্যাদিও সঙ্গে রাখবেন। ডায়াবেটিস রোগীরা লজেন্স, সুগার কিউব নেবেন। প্রেগনেন্ট যারা তাদের প্রথম ছয় মাস জার্নি করা মোটামুটি নিরাপদ। যাদের অ্যাবরশনের ইতিহাস আছে, তাদের গর্ভাবস্থায় জার্নি করা উচিত নয়। বিশেষ করে শেষ তিন মাস যে কোনো গর্ভবতীর জার্নি নিষেধ। যে কোনো ধরনের জার্নিতে তারা প্রচুর পানি খাবেন। প্লেনে জার্নি করলে ঘন ঘন পা মেসেজ করতে হবে, না হলে পায়ে রক্ত জমাট বেঁধে ডিপ ভেইন থ্রম্বোসিস বা ডিভিটি হতে পারে। তারা পায়ে রক্তজমা প্রতিরোধকারী মোজা পরতে পারেন। যাদের ওজন বেশি, তারাও এ কাজটি করতে পারেন।

আমাদের সচেতনতার অভাবে, সুন্দর পরিবেশ ও আনন্দঘন ঈদের দিন পশুর রক্ত ও বর্জ্য পদার্থ দিয়ে অনেকেই রাস্তাঘাট, বাসা বাড়ির চারপাশ একেবারে দুর্গন্ধযুক্ত করে ফেলি। একটু সচেতন হলে এবং উদ্যোগ নিলে আমরা পরিবেশ দূষণরোধ এবং রোগ-জীবাণুর বিস্তার এড়াতে পারি।-যুগান্তর

Share

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

     এ ক্যাটাগরীর আরো সংবাদ