(আজকের দিনকাল):চার বেহালার পালকি, পরনে কালো সেরওয়ানি, মাথায় পাগড়ি পরে শতাধিক বরযাত্রী নিয়ে নববধূকে নিতে যাচ্ছেন বর। চিরায়ত গ্রামবাংলার এমন হারানো ঐতিহ্য দেখতে পেয়ে এলাকার মানুষজন অবাক।
শনিবার ১ জুলাই এমন দৃশ্য দেখা গেছে কুড়িগ্রামের চিলমারী উপজেলার রমনা এলাকায়। বর জাকারিয়া সরকার স্ত্রীকে বরণ করতে এই ব্যতিক্রমী উদ্যোগ নেন। বিষয়টি এলাকাবাসীর মাঝে হইচই পড়ে যায়।
জানা যায়, বর জাকারিয়া সরকার উপজেলার রমনা মডেল ইউনিয়নের সরকারপাড়া গ্রামের ব্যবসায়ী খলিলুর রহমান সরকারের পুত্র। এক ছেলে এক মেয়ের মধ্যে জাকারিয়া বড়। তিনি জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় থেকে স্নাতকোত্তর পাশ করেছেন। বর্তমানে তিনি বাবার ব্যবসা দেখাশুনা করছেন।
কনের বাড়িও একই এলাকায়। তিনি ব্যবসায়ী আবু জেয়াদ আজাদ বিপ্লবের কন্যা ফাতেমাতুজ জোহরা পিয়া। তিনি হাজী দানেশ বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যয়নরত। শনিবার বিকালে বরযাত্রী কনের বাড়িতে গেলে রাতেই পারিবারিকভাবে তাদের বিয়ে হয়।
বিয়ের দাওয়াত খেতে যাওয়া আবু ছালেহ, শফিকুল ইসলামসহ অনেকেই জানান, পালকি একটি পুরনো ঐতিহ্য। আধুনিক এই যুগে বিয়েতে সচরাচর বাস মাইক্রোবাস, হেলিকপ্টারসহ আধুনিক বাহন দেখা যায়। কিন্তু জাকারিয়ার বিয়ে পালকিতে দেখে আমরা খুবই আনন্দিত হয়েছি। বিষয়টি সবাইকেই মুগ্ধ করেছে।
বর জাকারিয়ার গায়েহলুদ থেকে শুরু করে বিয়ের প্রত্যেকটি আনুষ্ঠানিকতাই ছিল জাঁকজমকপূর্ণ। গায়েহলুদ উপলক্ষে পুরুষদের জন্য ১৫০টি পাঞ্জাবি, নারীদের জন্য ২০০টি শাড়ি উপহার দেন তিনি।
কনের বাবা আবু জেয়াদ আজাদ বিপ্লব বলেন, আমরা একই গ্রামের বাসিন্দা। বিয়েতে পালকি থাকবে এটা দুই পরিবারের সম্মতি ছিল। পালকি গ্রাম-বাংলার একটি হারানো ঐতিহ্য। এ প্রজন্ম পালকির নাম শুনলেও চোখে দেখেনি। হারানো ঐতিহ্যকে ধরে রাখতেই আমাদের এ আয়োজন।
বর জাকারিয়া সরকার বলেন, বেশ কয়েক বছর আগে আমার দাদা ওসমান আলী সরকার মারা গেছেন। তিনি আমাকে অসম্ভব ভালোবাসতেন আদর করতেন। দাদার ইচ্ছা ছিল একমাত্র নাতির বিয়ে হবে পালকিতে করে। দাদা আজ পৃথিবীতে নাই কিন্তু তার ইচ্ছা পূরণ করতে পেরে নিজেকে ধন্য মনে হচ্ছে। তাছাড়া কালের বিবর্তনে গ্রাম-বাংলার ঐতিহ্য পালকি বিলুপ্ত হয়ে গেছে। দাদার ইচ্ছা পূরণ এবং হারানো ঐতিহ্য ফিরিয়ে আনতেই মূলত এ আয়োজন করা হয়েছে বলে যোগ করেন তিনি।
Leave a Reply