(আজকের দিনকাল):জাতীয় নির্বাচন যতই এগিয়ে আসছে রাজশাহী জেলা আওয়ামী লীগে কোন্দল ও বিভক্তি ততই বাড়ছে। জেলার ছয়টি আসনের মধ্যে পাঁচটিতে আওয়ামী লীগের সংসদ-সদস্যরা (এমপি) দলীয় নেতাকর্মীদের কঠিন বিরোধিতার মুখে পড়েছেন। প্রতিটি আসনে একাধিক নেতা দলীয় প্রার্থী হতে তৎপরতা শুরু করায় এমপিরা চ্যালেঞ্জের মুখে। দিন দিন এমপিবিরোধীদের অবস্থান শক্তিশালী হচ্ছে।
রাজশাহী-১ আসনে টানা তিনবারের এমপি ওমর ফারুক চৌধুরী দলীয় নেতাদের কুরআন ছুঁয়ে শপথ করানো, অধ্যক্ষ পেটানোসহ নানা বিতর্কিত কর্মকাণ্ডে জড়িয়েছেন। তার বিরোধিতাকারী নেতারা শক্তিশালী ঐক্য গড়ে তুলেছেন। গোদাগাড়ী-তানোর এলাকায় তার বিরুদ্ধে নিয়মিত গণসংযোগ হচ্ছে। তার বিরোধী গ্রুপে রয়েছেন-পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলমের স্ত্রী আয়েশা আকতার ডালিয়া, জেলা আওয়ামী লীগের নেতা আকতারুজ্জামান, তানোর উপজেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সভাপতি গোলাম রাব্বানী, মুন্ডুমালা পৌর মেয়র সাইদুর রহমান, গোদাগাড়ী উপজেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সভাপতি বদিউজ্জামান, তানোর পৌর মেয়র ইমরুল হক, কাঁকনহাট পৌর মেয়র ও আওয়ামী লীগের জাতীয় পরিষদের সদস্য আতাউর রহমান, জেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সহসভাপতি বদরুজ্জামান রবু মিয়া প্রমুখ।
রাজশাহী-৩ আসনে দুবারের এমপি আয়েন উদ্দিন জেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক। তার বিরুদ্ধে দলীয় নেতাকর্মীদের অভিযোগের শেষ নেই। জমি দখল থেকে নিয়োগবাণিজ্য, টেন্ডারবাণিজ্য সবই তার নেতৃত্বে হয়েছে। এ নিয়ে দলীয় নেতারা কয়েকবার সংবাদ সম্মেলন করেছেন। তার বিরুদ্ধে প্রধানমন্ত্রীর কাছে স্থানীয় নেতারা অভিযোগও করেছেন। এ আসনে জেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক আসাদুজ্জামান আসাদ মনোনয়ন চান।
রাজশাহী-৪ (বাগমারা) আসনে তিনবারের এমপি ইঞ্জিনিয়ার এনামুল হক। উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি এনামুলের বিরুদ্ধে প্রকাশ্যে মাঠে নেমেছেন দলের প্রভাবশালী নেতারা। তারা হলেন-জেলা আওয়ামী লীগের সহসভাপতি জাকিরুল ইসলাম ও অ্যাডভোকেট ইব্রাহিম হোসেন, তাহেরপুরের মেয়র ও পৌর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আবুল কালাম আজাদ, স্বেচ্ছাসেবক লীগের কেন্দ্রীয় কমিটির সাবেক সহসভাপতি পিএম শফিকুল ইসলাম প্রমুখ। ১ জুলাই বাগমারায় প্রকাশ্যে সমাবেশ করে দলীয় এমপির বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়ে আগামী নির্বাচনে তাকে প্রতিহতের ঘোষণা দিয়েছেন তারা।
রাজশাহী-৫ আসনে ২০১৮ সালে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন পেয়ে ডা. মনসুর রহমান প্রথম এমপি নির্বাচিত হন। এ আসনে দুইবারের সাবেক এমপি জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আবদুল ওয়াদুদ দারা। অনেক আগে থেকেই এ দুই নেতার সমর্থকরা বিভক্ত। আগামী নির্বাচন সামনে রেখে সেই বিভক্তি আরও বেড়েছে। পুঠিয়া ও দুর্গাপুর উপজেলায় আলাদাভাবে সব দলীয় কর্মসূচি পালন করা হয়। এমপি মনসুরের বিরুদ্ধে দুর্নীতি-অনিয়মের অভিযোগ করেছেন নেতাকর্মীরা। আগামীতে এ আসনে তাকে মনোনয়ন না দেওয়ার জন্য তারা দাবি জানিয়ে আসছেন।
রাজশাহী-৬ (বাঘা-চারঘাট) আসনের এমপি পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলম। গত কয়েকটি পৌর ও ইউনিয়ন পরিষদ (ইউপি) নির্বাচনে তার মনোনীত অধিকাংশ প্রার্থী দলের বিদ্রোহী প্রাথীর কাছে হেরে গেছেন। ফলে নিজ আসনে তার অবস্থান নড়বড়ে হয়ে পড়েছে। এমপি শাহরিয়ার আলমের বিরুদ্ধে এলাকায় আওয়ামী লীগ নেতা রায়হানুল হক ও আক্কাস আলীর নেতৃত্বে শক্তিশালী গ্রুপ গড়ে উঠেছে।
জেলাজুড়ে আওয়ামী লীগে চরম বিভক্তি ও এমপিবিরোধীদের তৎপরতা প্রসঙ্গে জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আবদুল ওয়াদুদ দারা বলেন, এমপিদের বিরোধিতাকারীরা প্রকাশ্যে কথা বলছেন। বিরোধিতাকারীদের নেতৃত্ব দিচ্ছেন জেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক আসাদুজ্জামান আসাদ। বহু চেষ্টা করেও সবাইকে আমরা ঐক্যবদ্ধ করতে পারছি না। এমনটা চলতে থাকলে দলীয় প্রার্থীরা নির্বাচনে ক্ষতিগ্রস্ত হবেন। দারা আরও বলেন, আমি যাতে আগামীতে মনোনয়ন না পাই-সেজন্য আমার বিরুদ্ধেও একটি অংশ অবস্থান নিয়েছেন।
এ বিষয়ে জেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক আসাদুজ্জামান আসাদ বলেন, বিতর্কিত কর্মকাণ্ডে কয়েকজন এমপি জনবিছিন্ন হয়ে পড়েছেন। এমনকি দলের নেতাকর্মীদের সঙ্গেও তাদের যোগাযোগ নেই। হাতেগোনা কিছু স্বজন ও সুবিধাভোগীদের নিয়ে তারা রাজনীতি করছেন। দলের যেসব নেতাকর্মী পৃথক কর্মসূচি পালন করছেন তাদের এমপিবিরোধী বলা হচ্ছে। কিন্তু বাস্তবে তারা আওয়ামী লীগের ত্যাগী নেতাকর্মী। তাদের হাতেই আওয়ামী লীগ নিরাপদ। তাদের সঙ্গেই আছেন আওয়ামী লীগের ত্যাগী কর্মী-সমর্থকরা।
Leave a Reply