আজ ২১শে আশ্বিন, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ, ৬ই অক্টোবর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ

একই পরিবারের ৫ জনসহ ৭ জনের দাফন সম্পন্ন, বাকরুদ্ধ স্বজনরা

(আজকের দিনকাল):যশোর-মাগুরা মহাসড়কের যশোর সদর উপজেলার লেবুতলা এলাকায় যাত্রীবাহী বাসচাপায় নিহত সাতজনের দাফন সম্পন্ন হয়েছে। এরমধ্যে একই পরিবারের পাঁচ জন ছিলেন।

বাঘারপাড়ার যাদবপুরে স্থানীয় একটি বিদ্যালয় মাঠে তিনজন, সেকেন্দারপুর গ্রামে দুজন আর মথুরাপুর গ্রামে একজন এবং সদরের সুলতানপুরে একজনের জানাজা শেষে পারিবারিক কবরস্থানে তাদের দাফন করা হয়।

এর আগে শুক্রবার সন্ধ্যায় লেবুতলা ইউনিয়নে বাসচাপায় এ দুর্ঘটনা ঘটে।

জানা গেছে, জানাজায় অংশ নেন হাজারও মানুষ। একসঙ্গে এতগুলো প্রাণ ঝরে যাওয়ায় এলাকাজুড়ে শোকের ছায়া নেমে এসেছে। পাশাপাশি নিহতদের পরিবারে বিরাজ করছে সুনসান নীরবতা। শোকে বাকরুদ্ধ স্বজনরা। আহাজারিতে ভারি হয়ে গেছে যশোরের চার গ্রামের বাতাস। পরিবারের সদস্যদের কারও মুখে কথা নেই, সবাই যেন পাথর হয়ে গেছেন।

নিহতদের মধ্যে তিন শিশুসহ নারীও রয়েছে। এর মধ্যে যাদবপুরে একই পরিবারে রয়েছে পাঁচজন। আহতাবস্থায় চিকিৎসাধীন আছেন দুজন।

নিহতরা হলেন— যাদবপুর গ্রামের হেলাল মুন্সির দুই যমজ ছেলে হাসান ও হোসাইন (২), হেলাল মুন্সির শাশুড়ি মাহিমা (৪৩), খালা শ্বাশুড়ি রাহিমা খাতুন ও তার মেয়ে জেবা (৮), মথুরাপুর গ্রামের ওবায়দুর রহমানের ছেলে ইজিবাইক চালক মুসা (২৭), সদর উপজেলা সুলতানপুর গ্রামের সাইফুল ইসলামের ছেলে ইমরান হোসেন (২৬)।

শনিবার সকালে বাঘারপাড়ার যাদবপুরে নিহতদের বাড়ি গিয়ে দেখা গেছে, শোকস্তব্ধ গোটা এলাকা। বিভিন্ন শ্রেণিপেশার মানুষ সান্ত্বনা দিতে এসে অশ্রুসিক্ত হয়েছেন।

কাঁদতে কাঁদতে হেলাল মুন্সী বলেন, কত সাজানো সংসার ছিল আমার। হাসিখুশির সংসার। একটা দুর্ঘটনায় সব শেষ। আমার কলিজার দুই হাসান-হোসেন কই, তাদের ছেড়ে আমি কীভাবে থাকব। হাসপাতালে আমার জান্নাতের বাগানের টুকরা মেয়েটা আর বউটা মৃত্যুর সঙ্গে পাঞ্জা লড়ছে। কি হবে আমার। যাদের সুখের জন্য আজ গ্রাম ছেড়ে ঢাকাতে কাজ করি; তারাই আজ নেই।

আহত সোনিয়ার চাচা ছোটন হোসেন বলেন, খাদিজার গলায় টনসিলের সমস্যা ছিল। এটি অপারেশনের জন্য শুক্রবার বিকালে তারা বাড়ি থেকে ইজিবাইকে যশোরের একটি ক্লিনিকে যাচ্ছিল। পথিমধ্যে লেবুতলা এলাকায় বিপরীত দিক থেকে আসা বেপরোয়া একটি বাস তাদের চাপা দিয়ে কিছু দূর সামনে নিয়ে যায়। এতে আমাদের পরিবারের পাঁচজন মারা যান। এ ছাড়া আমার ভাইঝি সোনিয়া ও তার মেয়ে খাদিজা গুরুতর আহত হয়।

অবস্থার অবনতি হওয়ায় গতকাল রাতেই সোনিয়াকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়েছে। খাদিজা যশোর জেনারেল হাসপাতালে চিকিৎসাধীন।

জহুরপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আসাদুজ্জামান মিন্টু বলেন, এই ইউনিয়নে এমন হৃদয়বিদারক দুর্ঘটনা এর আগে কখনো ঘটেনি। একই পরিবারে পাঁচজনসহ সাতজন মারা যাওয়াতে ইউনিয়নজুড়েই শোকের ছাঁয়া নেমে এসেছে। আসলেই প্রতিদিনই ছোটবড় দুর্ঘটনা ঘটনার সঙ্গে জড়িত ড্রাইভাররা হলেও আইনের ফাঁকে তারা পার পেয়ে যাচ্ছেন। আশা করি, এ ঘটনায় জড়িত ড্রাইভারের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেবে প্রশাসন।

তিনি আরও বলেন, নিহত ও আহতদের সব ধরনের সহযোগিতার আশ্বাস দিয়েছে উপজেলা প্রশাসন। একই সঙ্গে আমার ব্যক্তিগতও যত সহযোগিতা দরকার সেটা করা হবে।

জেলা প্রশাসক তমিজুল ইসলাম খান বলেন, নিহতদের দাফন ও আহতদের চিকিৎসার ব্যয়ভার বহন করা হবে।

Share

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

     এ ক্যাটাগরীর আরো সংবাদ