(আজকের দিনকাল):ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন এলাকায় অবৈধভাবে চলছে লক্ষাধিক ব্যাটারিচালিত রিকশা ও ইজি বাইক। দশটি চক্রের নিয়ন্ত্রণে চলা এসব যান থেকে মাসে কোটি টাকা চাঁদা আদায় করা হয়। আর এই চাঁদার ভাগ পান স্থানীয় কতিপয় পুলিশ সদস্য ও রাজনৈতিক নেতা। এভাবেই চলছে বছরের পর বছর।
সূত্র জানায়, লক্ষাধিক রিকশার ব্যাটারি চার্জ করতে দক্ষিণ সিটির জন্য বরাদ্দ করা বিদ্যুতের একটি বড় অংশ খরচ হয়ে যায়। ফলে বিভিন্ন এলাকায় দিনে-রাতে কয়েকবার লোডশেডিং করতে হচ্ছে। এলাকাগুলোর মধ্যে অন্যতম হলো-ডিএমপির মুগদা, খিলগাঁও, হাজারীবাগ, চকবাজার, কামরাঙ্গীরচর, শ্যামপুর ও কদমতলী।
এসব এলাকায় লোডশেডিংয়ের সঙ্গে রয়েছে ডেঙ্গু মশার উৎপাত। সিটি করপোরেশনের কর্মীরা ওষুধ ছিটালেও তা অপ্রতুল। তাই সন্ধ্যা হলেই মশার তীব্রতা বেড়ে যায়।
রাজধানীর কামরাঙ্গীরচরের আলী নগরের বাসিন্দা আসলামুল হক বলেন, একদিকে মানুষ মশায় অতিষ্ঠ। অন্যদিকে লোডশেডিং। সবমিলে জনজীবনে নাভিশ্বাস উঠেছে। তিনি বলেন, অধিকাংশ বিদ্যুৎ গিলে খাচ্ছে অবৈধ ব্যাটারিচালিত যানবাহন। প্রতিটি ২০ এমপিআর ব্যাটারি চার্জ করতে ৩ ইউনিট বিদ্যুৎ খরচ হয়। প্রতিটি রিকশায় থাকা ৪টি ব্যাটারি দিনে দুবার চার্জ দিতে ২৪ ইউনিট বিদ্যুৎ খরচ হয়। সেই হিসাবে ১ লাখ রিকশায় দৈনিক অন্তত ২৪ মেগাওয়াট বিদ্যুতের প্রয়োজন হয়। ওই বিদ্যুৎ সাধারণ মানুষের মাঝে বিতরণ করলে মানুষের কষ্ট কিছুটা লাগব হতো।
অনুসন্ধানে জানা যায়, নম্বর প্লেট ব্যবসায়ী নামক এক শ্রেণির চাঁদাবাজ, কতিপয় ছাত্র নেতার পরিচয়ে একটি চক্র এবং কিছু পুলিশ সদস্যের সহায়তার দীর্ঘদিন ধরে অবৈধ যানবাহন নগরীর পাড়া-মহল্লার পাশাপাশি বড় সড়কে দাপিয়ে বেড়াচ্ছে। লালবাগ কেল্লার মোড় এলাকার ছাত্রলীগ নেতা পরিচয়ধারী ফয়সাল এবং চকবাজারের শান্ত লালবাগ ও চকবাজার থানা এলাকায় কয়েক হাজার ব্যাটারিচালিত রিকশা নিয়ন্ত্রণ করছেন। এছাড়া গেন্ডারিয়ার সেভেন স্টার গ্রুপের নিয়ন্ত্রক নীরব ছাত্রলীগের সাবেক নেতা পরিচয় দিয়ে হাজার খানেক অবৈধ রিকশা নিয়ন্ত্রণ করছেন। মীর হাজির বাগ এলাকায় অন্তু বাহিনী, টাইগার বাহিনী এবং সাংবাদিক নামধারী মাসুদ ও নাসির বাহিনী অন্তত তিন হাজার ব্যাটারিচালিত রিকশা নিয়ন্ত্রণ করছে।
অন্যদিকে কেরানীগঞ্জের হিজলা সোহাগ ও গেন্ডারিয়ার আরমানের বাহিনী সংবাদিক পরিচয় দিয়ে বাংলা ‘স’ সংকেত লেখা টোকেন বিক্রি করছে। ওই টোকেন নিয়ে অন্তত ১০ হাজার অবৈধ ব্যাটারিচালিত রিকশা চলাচল করে। এই বাহিনীর কাছ থেকে সাব-ডিলার হিসাবে যাত্রাবাড়ীর কতুবখালী এলাকার সাখাওয়াত মোল্লা, উজ্জল, কাদের; শেখদীর নেট ব্যবসায়ী ইমরান, আনোয়ার; ধোলাই পাড়ের দৃপ্তি গলির ল্যাংড়া হাসান; ধনিয়া বাজারের মাইনু, লাদেন, সিরাজ; ২৪ ফুট সড়কের জাফর, সুদী সামছু, শাকিল; বেড়া মসজিদ এলাকার খাটো মনির অবৈধ অটোরিকশা নিয়ন্ত্রণ করেন।
এছাড়া কামরাঙ্গীরচর এলাকায় মিম নামে এক নারী টোকেন বিক্রি করেন বলে অভিযোগ রয়েছে। গেন্ডারিয়ার ঢালকা নগরের দাদন বাহিনী ইলিশ ও জোড়া কবুতর প্রতীকে কার্ড বানিয়েছে। এই বাহিনীর সেকেন্ড ইন কমান্ড বাবুল, আনোয়ারের কাছ থেকে টোকেন নিয়ে জুরাইন বৌবাজারের শাহীন, মিল্টন, আবুল হোসেন, আলমবাগের কসাই মনি, শ্যামপুরের শাহাবুদ্দিন, ইদ্রিস; বরইতলার জামাল; ২৪ ফুট সড়কের বামনা মনির; নামা শ্যামপুরের মাসুম; মেরাজনগরের মমিন; মোহাম্মদ বাগের ল্যাংরা মাসুম; দনিয়া ক্লাবের জামাল; উদার বাজারের হিরো, মুক্তার এবং গেন্ডারিয়ার নূরু টোকেন বাণিজ্য করছেন। এ বাহিনীর টোকেনে প্রায় ১৬ হাজার রিকশা চলাচল করে। আর রাজধানীর মুগদা থানা এলাকায় টোকেন বাণিজ্য করে আলাউদ্দিন বাহিনী। এই বাহিনীর রয়েছে নিজস্ব টর্চারসেল। কোনো রিকশার মালিক তাদের কাছ থেকে টোকেন নিতে অস্বীকার করলে তাকে টর্চার সেলে নিয়ে মারধর করা হয়।
সূত্র জানায়, ব্যাটারিচালিত রিকশার প্রতিটি টোকেনের জন্য মাসিক তিন হাজার টাকা করে আদায় করা হয়। বিশেষ প্রতীকের এসব টোকেন প্রতি মাসেই পরিবর্তন করে সরবরাহ করা হয়। ওইসব টোকেনধারী রিকশাকে ট্রাফিক পুলিশ ও থানা পুলিশ ছেড়ে দেয়। ফলে স্বাচ্ছন্দ্যে চলাচল করতে পারে অবৈধ রিকশা। টোকেন বিক্রির টাকার ভাগ যায় স্থানীয় মাস্তান ও পুলিশের পকেটে।
এ বিষয়ে ডিএমপির ট্রাফিক বিভাগের মতিঝিল জোনের উপ-পুলিশ কমিশনার মইনুল হাসান অবৈধ রিকশা চলাচলের বিষয়টি স্বীকার করে বলেন, আমরা কোনো ব্যাটারিচালিত রিকশাকে মহাসড়ক অথবা শহরে প্রবেশ করতে দিচ্ছি না। তাদের বিরুদ্ধে প্রায়ই ব্যবস্থা নেওয়া হয়। অবৈধ ব্যাটারিচালিত রিকশার বিরুদ্ধে আমাদের অভিযান অব্যাহত থাকবে।-যুগান্তর
Leave a Reply