মুর্শিদাবাদ জেলার খরগ্রামের রতনপুর গ্রামে এদিন সকালে এক তৃণমূল কংগ্রেস কর্মী খুন হয়। সদর উদ্দিন শেখ নামের এক তৃণমূল কর্মীকে খুনের অভিযোগের তীর জাতীয় কংগ্রেসের বিরুদ্ধে।
মুর্শিদাবাদ জেলার বেলডাঙা থানার অন্তর্গত কাপাসডাঙ্গা ষষ্ঠীতলা এলাকায় তৃণমূল কর্মীকে খুনের অভিযোগ উঠেছে দুর্বৃত্তদের বিরুদ্ধে। নিহত তৃণমূল কর্মীর নাম বাবর আলী। জানা গেছে, ভোটের আগের দিন শুক্রবার রাতে গ্রামে একটি চায়ের দোকানে বসেছিলেন তিনি। তখনই দুষ্কৃতিরা এসে ফুলচাঁদ শেখ ও বাবর আলীকে মারধর ও ধারালো অস্ত্র দিয়ে আঘাত করে।
গুরুতর আহতাবস্থায় দু’জনকে বহরমপুরে মুর্শিদাবাদ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করানো হলে দিবাগত গভীর রাতে বাবর আলী তাকে মৃত বলে ঘোষণা করা হয়।
খুনের ঘটনা ঘটেছে কোচবিহার জেলাতেও। শুক্রবার রাতে তুফানগঞ্জ-২ ব্লকের অধীনস্ত রামপুর এলাকায় দুই তৃণমূল কর্মীর ওপর হামলার অভিযোগ উঠে দুর্বৃত্তদের বিরুদ্ধে। ওই ঘটনায় গণেশ সরকার নামে এক তৃণমূল কর্মী আহত হন। তাকে হাসপাতালে ভর্তি করা হলে রাতেই তার মৃত্যু হয়। আরেকজনের অবস্থা আশঙ্কাজনক। এই জেলাতেই রাতে এক বাম সমর্থককেও গুলি করার অভিযোগে উঠেছে, তার অবস্থাও আশঙ্কাজনক।
এছাড়াও নদীয়া, পূর্ব বর্ধমান, পূর্ব মেদিনীপুর, উত্তর ২৪ পরগনা-সহ একাধিক জেলা থেকে কোথাও রাতের অন্ধকারে ব্যালট বাক্স চুরি ও ছিনিয়ে নেওয়ার অভিযোগ, কোথাও কেন্দ্রীয় বাহিনী না থাকার কারণে ভোট বয়কটের ডাক, ভোট দিতে নিরাপত্তার অভাব বোধ করায় স্থানীয় মানুষের ভোট বয়কটের ডাক। পশ্চিম মেদিনীপুরে কোলাঘাট থানার বড়গাছিয়া ননীবালা বুথে কেন্দ্রীয় বাহিনী না থাকায় তালা মেরে ভোট বন্ধ করা-সহ একাধিক অভিযোগ সামনে এসেছে।
ভোটের দিন সকালেই মুর্শিদাবাদ জেলার সামসেরগঞ্জের শুলিতলা এলাকায় ১৬ নম্বর বুথে সানাউল শেখ নামে এক তৃণমূল কর্মীকে লক্ষ্য করে গুলি চালানোর অভিযোগ উঠেছে কংগ্রেসের বিরুদ্ধে। বর্তমানে অনুপনগর ব্লক প্রাথমিক স্বাস্থ্য কেন্দ্রে তার চিকিৎসা চলছে।
হুগলী জেলার আরামবাগের আরাণ্ডি ১ গ্রাম পঞ্চায়েতের সাতমাসা ২৭৩ বুথের স্বতন্ত্র প্রার্থী জাহানারা বেগমের এজেন্ট কায়মুদ্দিন মল্লিককে গুলি করার অভিযোগ শাসকদের বিরুদ্ধে। ঘটনায় এলাকায় ব্যাপক উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়ে।
পঞ্চায়েত নির্বাচনকে ঘিরে চরম অব্যবস্থাপনার অভিযোগে শনিবার সকালে শ্যামনগর বাসুদেবপুর মোড়ে রাজ্যপাল সিভি আনন্দ বোসের গাড়ি বহর আটকান সিপিআইএম বিজেপি প্রার্থী ও নেতাকর্মীরা। তারা কথা বলেন রাজ্যপালের সাথে। রাজ্যপালও খতিয়ে দেখার আশ্বাস দেন। এরপর তার গাড়ি বহর নদীয়ার উদ্দেশ্যে রওনা দেয়।
যদিও রাজ্যজুড়ে একের পর এক ভোট সহিংসতার ঘটনায় ইতোমধ্যেই উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন রাজ্যপাল সিভি আনন্দ বোস। ভোট সম্পর্কিত বিষয়ে সাধারণ মানুষের বিভিন্ন অভিযোগ জানতে ও সেগুলোর বিরুদ্ধে যথাযথ পদক্ষেপ গ্রহণ করতে রাজভবনে (গভর্নর হাউজ) পিসরুম চালু করেন রাজ্যপাল। পাশাপাশি গত দুই সপ্তাহ ধরে সন্ত্রাস কবলিত এলাকাগুলো পরিদর্শন করছেন তিনি। কথা বলছেন নিহত ও আহতদের পরিবারের সদস্যদের সাথে।
উল্লেখ্য, এই নির্বাচনে গোটা রাজ্যে ভোট নেওয়া হবে মোট ৭৩,৮৮৭ আসনে। এরমধ্যে রয়েছে ৩৩১৭টি গ্রাম সভার ৬৩,২২৯ আসন; ৩৪১ টি পঞ্চায়েত সমিতির ৯৭৩০ আসন; এবং ২২ জেলা পরিষদের ৯২৮ আসন।
প্রায় ২ লাখের বেশি প্রার্থীর ভাগ্য নির্ধারিত হবে। সুষ্ঠুভাবে ভোটগ্রহণের জন্য ভোটগ্রহণ কেন্দ্র থাকছে ৬১,৬৩৬টি। মোট ভোটারের সংখ্যা ৫,৬৭,২১,২৩৪।
তবে রাজ্য নির্বাচন কমিশনের নির্দেশে প্রতিটি বুথে কেন্দ্রীয় বাহিনীর জাওয়ানদের মোতায়েনের কথা থাকলেও একাধিক বুথে তাদের দেখা যায়নি। এর পরিবর্তে নজরে পড়েছে রাজ্য পুলিশ এবং সিভিক পুলিশ সদস্যদের।
২০১১ সালে পশ্চিমবঙ্গে ক্ষমতায় আসার পর গ্রামসভা নির্বাচনে এই প্রথম কঠিন প্রতিদ্বন্দ্বিতার মুখে পড়তে হচ্ছে ক্ষমতাসীন দল তৃণমূল কংগ্রেসকে। বিজেপি ছাড়াও লড়তে হচ্ছে বামফ্রন্ট ও কংগ্রেসের জোট প্রার্থীদের বিরুদ্ধে। এরই পাশাপাশি বেশ কিছু আসনে কড়া চ্যালেঞ্জ দিতে পারে ইন্ডিয়ান সেকুলার ফ্রন্ট (আইএসএফ)-এর প্রার্থীরা।
আগামী বছর ২০২৪ সালে দেশটিতে লোকসভা নির্বাচন, তার আগে এই নির্বাচন প্রতিটা রাজনৈতিক দলের কাছে অত্যন্ত তাৎপর্যপূর্ণ।
Leave a Reply