(আজকের দিনকাল):চিকিৎসাধীন নারায়ণগঞ্জের সিদ্ধিরগঞ্জে প্রো-অ্যাক্টিভ মেডিকেল কলেজ অ্যান্ড হাসপাতালের ডাক্তারের বিরুদ্ধে নবজাতক শিশুর নাকের পর্দা (নাকের দুই ফুটোর মাঝের অংশ) ছিঁড়ে ফেলার অভিযোগ করেছেন রোগীর স্বজনরা।
হাসপাতালটির নিউনেটাল ইনটেনসিভ কেয়ার ইউনিটে (এনআইসিইউ) ওই ঘটনা ঘটে। শনিবার রাতে নবজাতকের বাবা রাসেল সরকার গণমাধ্যমকর্মীদের এ কথা জানান।
নবজাতকের পরিবারের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, গত ২২ জুন রাসেল ও সোমা দম্পতির নবজাতক শিশুকে শ্বাসকষ্টজনিত জটিলতা নিয়ে সিদ্ধিরগঞ্জের সাইনবোর্ড এলাকার প্রো-অ্যাক্টিভ মেডিকেল কলেজ অ্যান্ড হাসপাতালে আনার পর নবজাতকের শারীরিক অবস্থার অবনতি হয়। এ কারণে তাকে লাইফসাপোর্টে ভর্তির জন্য সুপারিশ করেন চিকিৎসক জাহিদুল হাসান।
লাইফসাপোর্টে নবজাতকের অক্সিজেন সরবরাহের জন্য চিকিৎসক সি-পাপ মেশিন লাগানোর পরামর্শ দেন। আর সেই মেশিন লাগানোর সময় নবজাতকের নাকের পর্দা ও নাকের জোড়া ছিঁড়ে যায়।
এ বিষয়ে নবজাতক শিশুটির বাবা রাসেল সরকার বলেন, আমার বাচ্চাকে এখানে আনার পর লাইফসাপোর্টে নেওয়া হয়। ১ জুলাই বাচ্চাকে লাইফসাপোর্ট থেকে এনআইসিইউতে পাঠান চিকিৎসক জাহিদুল হাসান। বাচ্চার অবস্থা কিছুটা উন্নতি হলে আমার স্ত্রী তাকে বুকের দুধ খাওয়াতে গিয়ে দেখে তার নাকের পর্দা ছেঁড়া। অথচ গত সাত দিন চিকিৎসক কিংবা হাসপাতালের কেউ আমাদের বিষয়টি জানায়নি। আজকে আমরা যখন চলে যাব সিদ্ধান্ত নিই, তখন তারা এ বিষয়ে কোনো সুরাহা না দিয়ে উল্টো আমাদের হাতে ৮৬ হাজার টাকার বিল ধরিয়ে দিয়ে তা পরিশোধ করার জন্য চাপ দেন। পরে অবস্থা বেগতিক দেখে তারা ৩২ হাজার টাকা বিল কম রাখেন। কিন্তু আমি বিল কম দিয়ে কী করব? আমার বাচ্চার যে ক্ষতি হলো তারা সেটি ঠিক করে দিক।
এ বিষয়ে প্রো-অ্যাক্টিভ মেডিকেল কলেজ অ্যান্ড হাসপাতালের ডেপুটি জেনারেল ম্যানেজার (ডিজিএম) মো. রাশিদুল ইসলামের মাধ্যমে এনআইসিইউর দায়িত্বরত চিকিৎসক জাহিদুল হাসানের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি গণমাধ্যমকর্মীদের সঙ্গে কথা বলতে রাজি হননি।
এদিকে ডা. জাহিদুল হাসানের বরাতে হাসপাতালের ডেপুটি জেনারেল ম্যানেজার মো. রাশিদুল ইসলাম বলেন, আসলে বাচ্চাটি খুব মুমূর্ষু অবস্থায় আমাদের এখানে এসেছিল। অপ্রাপ্ত বয়সে জন্ম ও শ্বাসকষ্টসহ নানা শারীরিক জটিলতা ছিল। লাইফসাপোর্টে ভর্তির সময় সি-পাপ মেশিন লাগানোর সময় তার নাকের পর্দা ছিঁড়ে যায়। বাচ্চাদের শরীর অনেক বেশি নরম ও সংবেদনশীল হওয়ায় এই সমস্যাটি হয়েছে। অনেক বাচ্চাদের ক্ষেত্রেই এমনটি হয়। এটি সাধারণত ছয় মাস বয়স থেকে নিজে থেকেই পুনরায় জোড়া লেগে যায়। তবে এমনটি না হলে সেক্ষেত্রে প্লাস্টিক সার্জারির প্রয়োজন পড়ে।
নাকের পর্দা ছিঁড়ে যাওয়ার বিষয়টি গোপন রাখা ও হাসপাতালের বিল পরিশোধের জন্য চাপ দেওয়ার বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, আসলে বাচ্চাটি লাইফসাপোর্টের রোগী ছিল। আমরা তাকে রিকভার করার সর্বাত্মক চেষ্টা করেছি, বিধায় সে কিন্তু এখন অনেকটাই সুস্থ। বিষয়টি গোপন রাখা হয়েছে এমন নয়, হয়তো সঠিক সময়ে তাদের জানানো হয়নি। আমরা ওই নবজাতককে বাঁচানোর দিকে গুরুত্ব দিয়েছি। আর বিল পরিশোধের জন্য চাপ দেওয়া হয়নি। আমরা নবজাতকের বাবার আর্থিক পরিস্থিতি বিবেচনা করে তার বিল থেকে ৩২ হাজার টাকা ছাড়ের ব্যবস্থা করে দিয়েছি। রোগীর অভিভাবক স্বাভাবিকভাবেই হাসপাতাল থেকে বিদায় নিয়েছেন।
Leave a Reply