আজ ২৮শে কার্তিক, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ, ১৩ই নভেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ

কারাগারে মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত কয়েদির মৃত্যু নিয়ে প্রশ্ন, তদন্ত কমিটি গঠন

(আজকের দিনকাল):গাজীপুরের কাশিমপুর কেন্দ্রীয় কারাগারে মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত কয়েদি আমিরুল ইসলামের (৩৪) মৃত্যু নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন তার পরিবার। শুক্রবার দিবাগত রাত সাড়ে ৩টার দিকে কারাগারের ভেতরে আমিরুল আত্মহত্যার চেষ্টা করেন। পরে ওই রাতেই তাকে উদ্ধার করে গাজীপুর শহীদ তাজউদ্দীন আহমেদ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে প্রেরণ করা হয়। একই রাতে হাসপাতালের চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন।

বিষয়টি রহস্যজনক বলে দাবি করছেন মৃত আমিরুলের বড় ভাই নূর গনি কামাল হোসেন। এ ঘটনায় চার সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। কমিটিকে সাত কর্মদিবসের মধ্যে কমিটিকে প্রতিবেদন জমা দিতে বলা হয়েছে।

কামাল হোসেন বলেন, আমার ভাই (আমিরুল ইসলাম ওরফে রাশেদউদ্দীন) ১২-১৩ বছর ধরে জেলে। আত্মহত্যা করলে তো আগেই করত। এখন আমরা ব্যারিস্টার ধরেছি, ঈদের দুই তিন দিন পর তার লগে ওই ব্যারিস্টারের কথা হয়েছে। ব্যারিস্টার তাকে বলেছে, তুমি কোনো চিন্তা কইরো না, এক-দেড় মাসের মধ্যে হয় মুক্তি, না হয় তোমার জামিন করাব।

তিনি আরও বলেন, আমার ভাই অসুস্থ ছিল না। কুরবানি ঈদের পর কারাগার থেকে ছবি পাঠাইছে। সবার লগে হাসে-রসে কথা কইছে। তার মনে কোনো চিন্তায়ও ছিল না। এখন হঠাৎ করে সে আত্মহত্যা করবে এর যুক্তিটা কি? তিনি প্রশ্ন করেন, কারাগারে ফাঁসির আসামিরা যে রুমে বা ব্যবস্থায় থাকে সেখানে ফাঁস দেওয়ার জন্য কোনো দড়ি তো দূরের কথা, একটা সুতাও আটকাতে পারার কথা না। তাই আমারা নিজেরাও বুঝতে পারছি না, আমার ভাই মরলো কিভাবে?

কামাল হোসেন বলেন, হেরা (জেল কর্তৃপক্ষ) যতোই বলতাছে আত্মহত্যা! আমাদের হিসাব হচ্ছে হেরা চক্রান্ত কইরা ভাইয়েরে মাইরা ফালাইছে। কি কারণে হেরা মাইরা ফালাইলো। এখন আমরা বিষয়টা কিভাবে জানতে পারব।

সোমবার দুপুরে আমিরুল ইসলামের বিষয়ে জানতে চাইলে নূর গনি কামাল হোসেন কাছে এসব কথা বলেন।

আমিরুলের ভাগিনা সমির উদ্দিন বলেন, কয়দিন আগেও তার (মামা) সঙ্গে আমার কথা হয়েছে। তাকে কোনো চিন্তিত মনে হয়নি। সে আমার এক বছরের ছোট। তার শরীর স্বাস্থ্য খুবই ভালো ছিল। ১৪ বছর জেল খাটা তার প্রায় শেষ, এখন কেন সে মরতে যাইবো?

আমিরুল ইসলাম নোয়াখালী জেলার হাতিয়া থানার সোনাদিয়া ইউনিয়নের ৪ নম্বর ওয়ার্ডের মধ্যম চেঙ্গা গ্রামের নুরুল ইসলাম চৌকিদারের ছেলে। নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনের একটি মামলায় (স্ত্রীর আত্মহত্যা) ২০১১ সালের ১৩ নভেম্বর নোয়াখালী জেলা কারাগারে পাঠানো হয়। সেখান থাকা অবস্থায় ২০১৪ সালের ২৯ সেপ্টেম্বর নোয়াখালী নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালের বিচারক তাকে মৃত্যুদণ্ড ও ২০ হাজার টাকা জরিমানার আদেশ দেন। পরে তাকে কুমিল্লা কেন্দ্রীয় কারাগারে পাঠানো হয়। সেখান থেকে ২০১৫ সালের ২১ আগস্ট তাকে গাজীপুরের কাশিমপুর কেন্দ্রীয় কারাগারে আনা হয়।

কাশিমপুর হাইসিকিউরিটি কেন্দ্রীয় কারাগারের সিনিয়র জেল সুপার সুব্রত কুমার বালা বলেন, ওই কয়েদি শুক্রবার দিবাগত রাত সাড়ে ৩টার দিকে কারাগারের বিছানার চাদরের অংশ দিয়ে গলায় ফাঁস দিয়ে আত্মহত্যার চেষ্টা করেন। পরে তাকে উদ্ধার করে রাতেই শহীদ তাজউদ্দীন আহমদ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিলে চিকিৎসক মৃত ঘোষণা করেন। পরে কারাবিধি অনুযায়ী মরদেহ স্বজনদের কাছে হস্তান্তর করা হয়। এ ঘটনায় চার সদস্যের একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। সাত কর্মদিবসের মধ্যে কমিটিকে প্রতিবেদন জমা দিতে বলা হয়েছে।

কামাল হোসেন বলেন, কারাগার থেকে আমিরুল ইসলামের মৃত্যুর সংবাদ জানানো হয়। তখন আমাদের হাতে কোনো টাকা-পয়সা ছিল না। কারাগার থেকে জানানো হলো আপনাদের কোনো টাকা-পয়সা লাগবে না। সব ব্যয়ভার কারাগার থেকে বহন করা হবে। পরে কারা কর্তৃপক্ষ হাসপাতালের খরচ, অ্যাম্বুলেন্স ভাড়াসহ সব ব্যয় বহন করেছে। রোববার দুপুরে লাশ বুঝিয়ে দেওয়ার সময় তাদের হাতে নগদ আরও চার হাজার টাকা দিয়ে দিয়েছে। রোববার রাত ১২টার দিকে তারা লাশ নিয়ে গ্রামের বাড়িতে পৌঁছেন এবং ওই রাতেই দাফন সম্পন্ন করা হয়েছে বলে জানান কামাল হোসেন।

গাজীপুর শহীদ তাজউদ্দীন আহমদ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের ফরেনসিক বিভাগের প্রধান মাজহারুল হক বলেন, তার গলায় ও শরীরে আঘাতের চিহ্ন রয়েছে। যেহেতু বন্দি এবং তারা (কারা কর্তৃপক্ষ) বলছে আত্মহত্যা করেছে তাই নিহতের গলার চামড়া এবং ভিসেরা পরীক্ষার জন্য পাঠানো হয়েছে। এগুলোর রিপোর্ট আসলে আমরা একটা প্রতিবেদন দিব। তখনই বলা সম্ভব হবে কিভাবে তার মৃত্যু হয়েছে।

কাশিমপুর হাইসিকিউরিটি কেন্দ্রীয় কারাগারের সিনিয়র জেল সুপার সুব্রত কুমার বালা নিহতের পরিবারের অভিযোগের বিষয়ে বলেন, কি চক্রান্ত হতে পারে। এখানে কার স্বার্থ আছে যে, তাকে মেরে ফেলতে পারে। তাকে সবসময় একটি সেলে বন্দি করে রাখা হতো। তারপরও আমরা একটি তদন্ত কমিটি গঠন করেছি।-ডেস্ক

Share

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

     এ ক্যাটাগরীর আরো সংবাদ