(আজকের দিনকাল):গত ২১ জুলাই একটি দৈনিক পত্রিকায় প্রথম পাতার দুটি তাৎপর্যপূর্ণ সংবাদ শিরোনাম দেখে দেশের চলমান পরিস্থিতি বোঝার চেষ্টা করছিলাম। শিরোনাম দুটোর প্রথমটি হলো, ‘বাঙলা কলেজে সংঘর্ষের ঘটনায় দুই মামলা, কবরে থেকেও আসামি শ্রমিক দল নেতা’। দ্বিতীয়টির শিরোনাম হলো, ‘হিরো আলমকে নিয়ে টুইট, জাতিসংঘ প্রতিনিধিকে তলব করে ঢাকার অসন্তোষ’। গেল কয়েকদিন ধরে ১৭ জুলাই অনুষ্ঠিত জাতীয় সংসদের ঢাকা-১৭ আসনের উপনির্বাচন ও নির্বাচন-উত্তর ঘটনাবলি নিয়ে দেশের প্রায় সব সংবাদপত্র বড় বড় শিরোনাম করেছে। এসব শিরোনামে, উপনির্বাচনের ফলাফলের পর্যালোচনা এবং ইউটিউব ও টিকটক করে বগুড়ার প্রত্যন্ত অঞ্চল থেকে উঠে আসা আশরাফুল আলম ওরফে হিরো আলমের ওপর আওয়ামী লীগ কর্মীদের হিংস্র আচরণের সংবাদ জায়গা করে নিয়েছে। উপনির্বাচনের একজন স্বতন্ত্রপ্রার্থী হিসাবে হিরো আলমকে প্রকাশ্য দিবালোকে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর চোখের সামনে নৌকা মার্কা ব্যাজধারী আওয়ামী লীগ কর্মীরা নির্দয়ভাবে যে মারধর করেছে, সে খবর শুধু দেশে নয়, আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যমেও শিরোনাম হয়েছে।
প্রথম শিরোনামের খবর পড়ে অনেকেই বলেছেন, ‘বর্তমান সরকারের পুলিশ আবারও পুরোনো খেলায় মেতেছে। নির্বাচন সামনে রেখে বিরোধী দল দমনে আবারও তৎপর হয়েছে’। তবে আমার মনে হয়েছে, পুলিশের বিরুদ্ধে ঢালাওভাবে এ কথা বলাটা বোধহয় ঠিক হচ্ছে না। খবর পড়ে জানা গেছে, যে মামলায় শ্রমিক দলের মৃত নেতাকে অভিযুক্ত করা হয়েছে, সে মামলার বাদী পুলিশ নয়, সরকারি বাঙলা কলেজের একজন স্টাফ। একথা বলার পর যে জবাব পাওয়া গেছে, তা উপেক্ষাও করা যায় না। ‘যাহা বায়ান্ন তাহাই তিপ্পান্ন’। মামলার বাদী যিনিই হোক না কেন, এসবের পেছনে যে পুলিশের হাত নেই তা বলবে কে? অতীতে বিরোধী দলের প্রতি পুলিশের নির্দয় আচরণ পর্যালোচনা করলেই সব পরিষ্কার হয়ে যাবে। গত জাতীয় নির্বাচনের আগে পুলিশের দেওয়া গায়েবানা ও হয়রানিমূলক মামলার কথা কি মানুষ ভুলে গেছে? তখন এবং তারপরও বিরোধী দলের এমন অনেক মৃত নেতাকর্মীর বিরুদ্ধে পুলিশের দেওয়া মামলার শিরোনাম আমরা খবরের কাগজে দেখেছি। অভিযোগ আছে, পুলিশ কাউকে না কাউকে বাদী সাজিয়ে এসব মামলা করে থাকে। এ মামলার ক্ষেত্রেও যে এরকম কিছু ঘটেনি তা আমরা কীভাবে নিশ্চিত হব? আসলে পুলিশের এ ধরনের কিছু অনাকাঙ্ক্ষিত আচরণের জন্য মানুষের বিশ্বাস এবং আস্থার জায়গাটি নড়বড়ে হয়ে গেছে। টেলিভিশন টকশোগুলোতে দেখি, পুলিশের তৎকালীন মহাপরিদর্শক শহিদুল হককে গত জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে যখন গায়েবানা ও হয়রানিমূলক মামলার কথা জিজ্ঞেস করা হয়, তখন তিনি কিছুটা অপ্রস্তুত হয়ে যান। প্রতিউত্তরে তিনি যা বলেন, তা দর্শকদের সন্তুষ্ট করতে পারে বলে মনে হয় না। ক্ষমতাসীন দলের নীতিনির্ধারকদের অব্যাহত চাপের মুখে পুলিশকে যে এমন অনেক কিছুই করতে হয়, অনেক সময় তার বক্তব্যের মধ্য দিয়ে তা ফুটে উঠেছে। পুলিশের এরূপ সীমাবদ্ধতার কথা তিনি অবশ্য তার লেখা ‘পুলিশ জীবনের স্মৃতি : স্বৈরাচার পতন থেকে জঙ্গি দমন’ বইয়ে অকপটে তুলে ধরেছেন।
Leave a Reply