(আজকের দিনকাল):নির্বাচনের মাঠ নিয়ন্ত্রণে নিতে আবারও রাজধানীতে শীর্ষ সন্ত্রাসীদের তত্পরতা বেড়ে গেছে। এসব শীর্ষ সন্ত্রাসী জামিনে বেরিয়ে আন্ডারওয়ার্ল্ডে তাদের পুরোনো আধিপত্য ফিরে পেতে মরিয়া হয়ে উঠেছে। নতুন গ্রুপ গঠন করে একেক এলাকা একেক জনের নিয়ন্ত্রণে রাখার ঘোষণা দিয়েছে।
রাজধানীর বাড্ডা, খিলগাঁও, শাজাহানপুর, মতিঝিল, গুলশান, সবুজবাগ, মিরপুর, মোহাম্মদপুর, আদাবর, তেজগাঁও, মহাখালী ও পল্লবী এলাকায় চিহ্নিত সন্ত্রাসীদের দাপট বেড়ে গেছে। আবার বিদেশে আত্মগোপনে থাকা শীর্ষ সন্ত্রাসীরাও দেশে ফেরার চেষ্টা করছে। এদের মধ্যে মিরপুরের শাহাদত, রামপুরার জিসান, পল্লবীর মোক্তার, বাড্ডার মেহেদি, গুলশানের সাখাওয়াত হোসেন চঞ্চল, মোহাম্মদপুরে কালা মনির ও শাজাহানপুরের ফ্রিডম মানিক দেশের দাগী চিহ্নিত সন্ত্রাসী গ্রুপগুলোর সঙ্গে যোগাযোগ রক্ষা করছে। বিদেশ থেকে তারা মোবাইল ফোনে এসব সন্ত্রাসীর সঙ্গে কথোপকথন চালাচ্ছে।
সম্প্রতি ২৩ শীর্ষ সন্ত্রাসীর অন্যতম খোরশেদ আলম রাসু ওরফে ফ্রিডম রাসুর জামিনে মুক্ত হওয়া নিয়ে গোটা রাজধানীতে ব্যাপক চাঞ্চল্যের সৃষ্টি হয়েছে। এর আগে কারাবন্দি আরেক শীর্ষ সন্ত্রাসী সানজিদুল ইসলাম ইমনের সেকেন্ড ইন কমান্ড তারেক সাঈদ মামুনের জামিন এবং পরবর্তীকালে তেজগাঁও শিল্পাঞ্চল এলাকায় তার ওপর হামলার ঘটনা আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে ভাবিয়ে তুলেছে। প্রায় ২৫ বছর আগের আন্ডারওয়ার্ল্ডের আধিপত্যের রেষারেষির জের ধরেই মামুনের ওপর হামলা চালানো হয়েছে। মোহাম্মদপুরের কারাবন্দি শীর্ষ সন্ত্রাসী পিচ্চি হেলাল ও মোহাম্মদপুরের আরেকটি সন্ত্রাসী গ্রুপের যোগসাজশে এই হামলা চালানো হয়। সন্ত্রাসীদের হামলার ঘটনায় ভুবন চন্দ্র শীল নামে একজন আইনজীবী গুলিবিদ্ধ হয়ে এখন জীবন মৃত্যুর সন্ধিক্ষণে।
এর আগে গত বছরের ২৪ মার্চ শাজাহানপুরে মতিঝিল থানা আওয়ামী লীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক জাহিদুল ইসলাম টিপুকে গুলি করে হত্যার সময় রিকশারোহী কলেজছাত্রী প্রীতি নিহত হন। দুবাইয়ে আত্মগোপনে থাকা ২৩ শীর্ষ সন্ত্রাসীর অন্যতম জিসান আহমেদ মন্টি ওরফে জিসানের পরিকল্পনায় টিপুকে হত্যা করা হয়। এই কিলিং মিশনে মতিঝিলের আন্ডারওয়ার্ল্ডের কিলার গ্রুপের অন্তত ১৫ জন ভাড়াটিয়া কিলারকে ব্যবহার করা হয়েছিল।
এ ব্যাপারে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ কমিশনার খন্দকার গোলাম ফারুক বলেন, জামিনে শীর্ষ সন্ত্রাসীরা বেরিয়ে আসার পর তারা যদি অপরাধের সঙ্গে জড়িয়ে পড়েন, তাহলে পুলিশ তাদের গ্রেফতার করবে। জামিন পাওয়া এসব সন্ত্রাসীর ব্যাপারে পুলিশ খোঁজখবর নিচ্ছে। অপরাধের সঙ্গে যুক্ত হওয়ার তথ্য পেলেই তাদের গ্রেফতার করা হচ্ছে।
একজন গোয়েন্দা কর্মকর্তা জানান, দেড় যুগ ধরে আমেরিকায় অবস্থানকারী মেহেদী গুলশান, মহাখালী, বাড্ডা ও ভাটারা এলাকার আন্ডারওয়ার্ল্ড নিয়ন্ত্রণ করছে। গত ১৫ বছরে মেহেদী গ্রুপের হাতে এই এলাকায় ১৪টি খুনের ঘটনা ঘটেছে। মেহেদী গ্রুপের সঙ্গে মালয়েশিয়ায় অবস্থানকারী ডালিম-রবিন গ্রুপের সখ্য রয়েছে। এই ডালিম-রবিন গ্রুপের সঙ্গে বনানী ও মহাখালী এলাকার আত্মগোপনকারী শীর্ষ সন্ত্রাসী সুন্দরী সোহেল গ্রুপের ক্যাডার বাহিনীর ওঠাবসা রয়েছে। বাড্ডা থানা পুলিশের কাছে মেহেদী নামটি ‘মোস্ট ওয়ান্টেড’ তালিকার এক নম্বরে।
পুলিশের গোয়েন্দা রিপোর্টে বলা হয়েছে, বাড্ডা ও গুলশান এলাকার আন্ডারওয়ার্ল্ড নিয়ন্ত্রণে নিতে মেহেদি ও যুক্তরাষ্ট্রে আত্মগোপনকারী অপর শীর্ষ সন্ত্রাসী সাখাওয়াত হোসেন চঞ্চল এক হয়ে গেছে। সম্প্রতি রাজধানীর গুলশান-১ এর গুলশান শপিং কমপ্লেক্স ঘিরে চঞ্চল-মেহেদী গ্রুপের ক্যাডার বাহিনী প্রকাশ্যে মহড়া দিয়েছে। এই গ্রুপের সেকেন্ড ইন কমান্ড দুলাল, দীপু, বাবুল, অলি, মানিক, মান্নান, সাঈদ, রিয়াদ, রুবেল ও তপন সক্রিয়।
গত সোমবার রাত সাড়ে ৯টার দিকে তেজগাঁও শিল্পাঞ্চলের বিজি প্রেসের সামনে জামিনে বেরিয়ে আসা তারিক সাঈদ মামুন নামে এক সন্ত্রাসীকে কুপিয়ে গুরুতর আহত করে প্রতিপক্ষ গ্রুপের সন্ত্রাসীরা। কলাবাগানের শীর্ষ সন্ত্রাসী কারাবন্দি সানজিদুল ইসলাম ইমন ওরফে ইমনের ডান হাত মামুন ১৯৯৭ সালে খিলখেতে হারিস আহমেদ ও জোসেফের বড় ভাই সাঈদ আহমেদ টিপু হত্যা মামলা, ১৯৯৪ সালে জিগাতলায় খায়রুল হত্যা ও ১৯৯৭ সালে গুলশান ট্রাম্প ক্লাবে চিত্রনায়ক সোহেল চৌধুরী হত্যা মামলার চার্জশিটভুক্ত আসামি। এর মধ্যে সোহেল চৌধুরী হত্যা মামলায় ১৯৯৮ সালে মামুন গ্রেফতার হন। ঐ মামলায় ২৫ বছর কারাবন্দি থাকার পর এক মাস আগে হাইকোর্টের জামিনে তিনি মুক্তি পান। টিপু হত্যার প্রতিশোধ নিতেই মামুনকে সরিয়ে দেওয়ার পরিকল্পনা নেয় মোহাম্মদপুর কেন্দ্রিক একটি সন্ত্রাসী গ্রুপ। কারাবন্দি শীর্ষ সন্ত্রাসী পিচ্চি হেলালের সঙ্গে মোহাম্মদপুরের ঐ সন্ত্রাসী গ্রুপটির যোগাযোগ রয়েছে।
এদিকে গত ১১ মে রমনা থানায় এক ব্যক্তি জিডি করেন। জিডির এক স্থানে বলা হয়েছে, ‘সুব্রত বাইন ওরফে ফতেহ আলী আমার কাছে দুটি ফ্ল্যাট চেয়েছে। এরপর থেকে বেশ কয়েকটি মোবাইল ফোন নম্বর থেকে কল করে সুব্রত বাইন পরিচয় দিয়ে আমাকে ভয়ভীতি দেখানো হয়েছে। আমি যদি সুব্রত বাইনের পাঠানো ব্যক্তির কাছে ফ্ল্যাট না লিখে দিই, তাহলে সুব্রত বাইন আমাকে প্রাণে মেরে ফেলবে।’ জানা গেছে, ২৩ শীর্ষ সন্ত্রাসীর অন্যতম সুব্রত বাইন ভারতের পশ্চিমবঙ্গের বশিরহাটে অবস্থান করে রাজধানীর মগবাজার, মৌচাক ও মালিবাগ এলাকা নিয়ন্ত্রণ করছে।
মিরপুর এলাকায় শাহাদত বাহিনী দীর্ঘ দিন পর আবারও নড়েচড়ে বসেছে। দুবাই থেকে শাহাদত মিরপুর এলাকায় তার ক্যাডার বাহিনী পরিচালনা করছে। পল্লবী এলাকায় ভারতে আত্মগোপনকারী সন্ত্রাসী মোক্তার তাদের চিহ্নিত সন্ত্রাসী বাহিনীকে মাঠে নামিয়েছে।
গোয়েন্দা সংস্থার একজন কর্মকর্তা বলেন, ইতিমধ্যে ভয়ংকর সন্ত্রাসীরা কে কোথায় আছে খোঁজ নেওয়া শুরু হয়েছে। অনেকে জেলে থাকা সন্ত্রাসীদের সঙ্গে যোগাযোগ করার চেষ্টা করছে। তবে পাড়া-মহল্লায় গড়ে উঠেছে অনেকগুলো উঠতি সন্ত্রাসী গ্রুপ। এরাই বিদেশে আত্মগোপনে থাকা শীর্ষ সন্ত্রাসীদের নাম ব্যবহার করে এলাকায় ভয়-ভীতি প্রদর্শন করছে। এসব উঠতি মাস্তান বাহিনীর একটি তালিকাও করা হচ্ছে।-ডেস্ক
Leave a Reply