আজ ১৮ই অগ্রহায়ণ, ১৪৩০ বঙ্গাব্দ, ৩রা ডিসেম্বর, ২০২৩ খ্রিস্টাব্দ


এডিস নিয়ে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের জরিপ

ঢাকা উত্তরের ৩০ ও দক্ষিণের ৩৫ ওয়ার্ডে মাত্রাতিরিক্ত লার্ভা

(আজকের দিনকাল):ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের (ডিএনসিসি) ৩০টি ওয়ার্ড এবং দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের (ডিএসসিসি) ৩৫টি ওয়ার্ডে এডিস মশার লার্ভার ঘনত্ব ব্রুটো ইনডেক্সে ২০ এর ওপরে অর্থাৎ মাত্রাতিরিক্ত। স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের বর্ষাকালীন জরিপে এ তথ্য উঠে এসেছে। বুধবার বিকালে অধিদপ্তরের সম্মেলন কক্ষে জরিপ ফল প্রকাশ করা হয়।

কোনো এলাকায় এডিস মশার লার্ভার ঘনত্ব হিসাব করা হয় ব্রুটো ইনডেক্সের মাধ্যমে। ব্রুটো ইনডেক্স যদি ২০-এর বেশি হয় তবে তা উচ্চমাত্রার ঝুঁকি। আর হাউজ ইনডেক্স যদি ১০-এর বেশি হয় তবে তা ঝুঁকিপূর্ণ হিসাবে ধরা হয়।

জরিপের তথ্য তুলে ধরেন স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের রোগ নিয়ন্ত্রণ শাখার (সিডিসি) প্রোগ্রাম অপারেশন অ্যাডভাইজর ড. মো. মুশফিকুর রহমান। তিনি জানান, ঢাকা উত্তর ও দক্ষিণ সিটি করপোরেশন এলাকায় মশার ঘনত্ব নিয়ে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের রোগ নিয়ন্ত্রণ শাখা বছরে তিনটি জরিপ করে। জরিপের সময়কে তারা প্রাক-বর্ষা, বর্ষা ও বর্ষা-পরবর্তী হিসাবে উল্লেখ করে। গত ২৫ আগস্ট থেকে ৩ সেপ্টেম্বর (১০ দিন) দুই সিটিতে মশার ঘনত্ব নিয়ে একটি জরিপ চালানো হয়।

সর্বশেষ জরিপে দুই সিটির ৩ হাজার ১৫০ বাড়ি পরিদর্শন করে উপাত্ত সংগ্রহ করা হয়। এ সময় ৬৫৭টি বাসা বাড়িতে এডিস মশার লার্ভা পাওয়া যায়। এর মধ্যে উত্তর সিটির ৪০ ওয়ার্ডে ১ হাজার ৩৩৫টি ও দক্ষিণ সিটির ১ হাজার ৮১৫টি বাড়ি রয়েছে। জরিপে উত্তর সিটির ২৩ দশমিক ৫২ শতাংশ বাড়িতে এডিস মশার লার্ভা মেলে। এই এলাকায় এডিসের লার্ভার গড় ঘনত্ব ২৮ দশমিক ৯১ শতাংশ। এদিকে দক্ষিণ সিটির ৫৯টি ওয়ার্ডে ১ হাজার ৮১৫টি বাড়ি পরিদর্শন করে ৩৪৩টি অর্থাৎ ১৮ দশমিক ৯০ শতাংশ বাসাবাড়িতে মশার লার্ভা মেলে। জরিপ অনুযায়ী, এই সিটিতে এডিস মশার লার্ভার গড় ঘনত্ব ২৫ দশমিক ২৯ শতাংশ।

জরিপের তথ্য বলছে, উত্তর সিটি করপোরেশনের ২৪ নম্বর ওয়ার্ড (তেজগাঁও শিল্প এলাকা, বেগুনবাড়ী, কুনিপাড়া) লার্ভার ঘনত্ব ব্রুটো ইনডেক্স ৬০। ৬ নম্বর ওয়ার্ডে (পল্লবী, বর্ধিত পল্লবী, নতুন পল্লবী সেকশন-৭, মিল্কভিটা রোড, সুজাতনগর, হরুনাবাদ, মল্লিকা হাউজিং আরামবাগ, আরিফাবাদ, ছায়ানীড়, সেকশন-৬, ব্লক-সি, ব্লক-ডি, ব্লক-ই, ব্লক-ট, ব্লক-ঝ, আলুব্দী, দুয়ারীপাড়া, ৬-জ, রূপনগর টিনশেড ও ইস্টার্ন হাউজিংয়ের দ্বিতীয় পর্ব এলাকা) ব্রুটো ইনডেক্স ৪৮ দশমিক ৯।

অন্যদিকে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের ১৯ নম্বর ওয়ার্ডে (মিন্টো রোড, কাকরাইল, সার্কিট হাউজ রোড, সিদ্ধেশ্বরী রোড ও লেন, মগবাজার এলিফ্যান্ট রোড, মগবাজার ইস্পাহানি কলোনি, নিউ ইস্কাটন রোড, ইস্কাটন গার্ডেন রোড, আমিনাবাদ কলোনি ও ইস্টার্ন হাউজিং অ্যাপার্টমেন্ট, বেইলি স্কয়ার ও বেইলি রোড, কাকরাইল, ডি.টি. কলোনি ও পশ্চিম মালিবাগ) ব্রুটো ইনডেক্স ৭৩ দশমিক ৩৩।

২০ নম্বর ওয়ার্ড (সেগুন বাগিচা, তোপখানা রোড, বঙ্গবন্ধু অ্যাভিনিউ ও রেস্ট হাউজ, টি. বি. ক্লিনিক এলাকা, ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল ও আবাসিক এলাকা, হাইকোর্ট স্টাফ কোয়ার্টার ও সোহরাওয়ার্দী উদ্যান, ফুলবাড়িয়া স্টেশন পূর্ব এলাকা, পশ্চিম ফুলবাড়িয়া ও সেক্রেটারিয়েট রোড, আব্দুল গণি রোড ও সচিবালয় স্টাফ কোয়ার্টার, পশ্চিম পুরাতন রেলওয়ে কলোনি, রেলওয়ে হাসপাতাল এলাকা, ইস্টার্ন হাউজিং ও টয়েনবি সার্কুলার রোড, রমনা গ্রিন হাউজ, প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয় ও আবাসিক এলাকা, নজরুল ইসলাম হল, আহসান উল্লাহ হল, তিতুমীর হল, ঢাকা মেডিকেল কলেজ হোস্টেল (ফজলে রাব্বি হল), শেরে বাংলা হল (প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়), সোহরাওয়ার্দী হল (প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়), শহীদুল্লাহ হল (ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়), ফজলুল হক হল, ড. এমএ রশিদ হল, শহীদ স্মৃতি হল, প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রী হল, শাহবাগ (আংশিক) এলাকায় ব্রুটো ইনডেক্স ৭০ পাওয়া গেছে।

ঢাকা উত্তর সিটির যেসব ওয়ার্ডে মাত্রাতিরিক্ত এডিস লার্ভা পাওয়া গেছে সেগুলো হলো-১, ৩ , ৪, ৫, ৬, ৭, ১০, ১২, ১৩, ১৬, ১৭, ১৯, ২১, ২২, ২৩, ২৪, ২৬, ২৭, ২৯, ৩০, ৩১, ৩২, ৩৩, ৩৪, ৩৫, ৩৬, ৩৭, ৩৮, ৩৯ ও ৪১ নম্বর ওয়ার্ড।

আর ঢাকা দক্ষিণ সিটির যেসব ওয়ার্ডে মাত্রাতিরিক্ত এডিস লার্ভা পাওয়া গেছে সেগুলো হলো-১, ২, ৩, ৪, ৬, ৮, ৯, ১৩, ১৪, ১৫, ১৬, ১৮, ১৯, ২০, ২২, ২৩, ২৪, ২৬, ২৭, ২৮, ২৯, ৩০, ৩৪, ৩৬, ৩৭, ৩৯, ৪২, ৪৩, ৪৫, ৪৬, ৫২, ৫৪, ৫৫, ৫৬ ও ৫৯ নম্বর ওয়ার্ড।

স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের অতিরিক্ত মহাপরিচালক অধ্যাপক আহমেদুল কবির বলেন, হাউজ ইনডেক্স বাদ দিলে ৮০ শতাংশই বাড়ির বাইরে পাওয়া গেছে। সমস্যাটি বাসাবাড়ির ভেতরে বলে এড়িয়ে যাওয়া সুযোগ নেই। আমাদের শুধু বাসা-বাড়িতেই আছে ২০ শতাংশের ওপরে। যদি আমরা বেইজমেন্ট, ফ্ল্যাটেড ফ্লোর সব মিলিয়ে ধরে নেই, তাহলে সেটি হবে ৩০ থেকে ৩৫ শতাংশ। সুতরাং ৬৫ শতাংশই কিন্তু বাড়ির বাইরে পাওয়া যাচ্ছে। বাড়ির বাইরে নানা রকম কনটেইনার যেমন প্লাস্টিক কনটেইনার, টায়ার টিউব আছে। ফ্লোরের পানিতে তো খুব সহজে শুকিয়ে ফেলা যায়। সেজন্য সমন্বিত উদ্যোগ খুবই জরুরি।

ডেঙ্গুর টিকা প্রয়োগে নাইট্যাগের পরামর্শ চেয়েছে অধিদপ্তর : অনুষ্ঠানে অধ্যাপক আহমেদুল কবির জানান, ডেঙ্গু টিকা প্রয়োগ নিয়ে জাতীয় টিকা সংক্রান্ত কারিগরি উপদেষ্টা কমিটির (নাইট্যাগ) পরামর্শ চাওয়া হয়েছে। কমিটির সুপারিশ পেলেই টিকা প্রয়োগের বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে। তাছাড়া সম্প্রতি বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা কিউডেঙ্গা টিকা প্রয়োগে ছাড়পত্র দিয়েছে। তবে একটি বয়সসীমার শর্তও দিয়েছে তারা। এই কিউডেঙ্গা টিকা নতুন কিছু নয়। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার পরামর্শ হলো এই টিকা দেওয়া যাবে। তবে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা ছাড়পত্র দিয়েছে বলেই যে এটা আদর্শ টিকা, তা কিন্তু বলা যাবে না।

ডেঙ্গুতে নারীদের বেশি মৃত্যুর কারণ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, বেশ কিছু কারণে নারীদের মৃত্যুর হার বেশি পাচ্ছি। প্রথমত নারী রোগীরা যেকোনো কারণেই হাসপাতালে দেরি করে এসেছেন। আরেকটি বিষয় হলো এ বছর গর্ভবতী মায়ের অনেক বেশি ডেঙ্গু আক্রান্তের ইতিহাস পাওয়া গেছে। তাছাড়া গর্ভবতী মায়েরা ডেঙ্গুতে একটু বেশি ঝুঁকিপূর্ণ থাকেন, যে কারণে এবার ডেঙ্গুতে তাদের অনেক বেশি মৃত্যু হয়েছে।

আরও ১৬ মৃত্যু, হাসপাতালে ভর্তি ২৫৬৪ : গত ২৪ ঘণ্টায় (মঙ্গলবার সকাল থেকে বুধবার সকাল ৮টা পর্যন্ত) সারা দেশে আরও ১৬ জনের মৃত্যু হয়েছে। এ নিয়ে দেশে ডেঙ্গুতে মৃত্যু বেড়ে দাঁড়ালো এক হাজার ৪৬ জনে। এছাড়া গত ২৪ ঘণ্টায় নতুন করে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন দুই হাজার ৫৬৪ জন। স্বাস্থ্য অধিদপ্তর সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে।

অধিদপ্তর জানায়, সরকারি-বেসরকারি হাসপাতালে নতুন ভর্তি রোগীর মধ্যে ঢাকার বাসিন্দা ৭২০ জন ও ঢাকার বাইরের এক হাজার ৮৪৪ জন। আর গত ২৪ ঘণ্টায় মারা যাওয়া ১৬ জনের মধ্যে ঢাকার বাসিন্দা সাতজন ও ঢাকার বাইরের নয়জন।

Share

এ ক্যাটাগরীর আরো সংবাদ

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

     এ ক্যাটাগরীর আরো সংবাদ