আজ ২৩শে আশ্বিন, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ, ৮ই অক্টোবর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ

আসন বণ্টনে বাড়ছে জোটের অপেক্ষা

(আজকের দিনকাল):দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে আগেভাগেই আওয়ামী লীগের সঙ্গে আসন সমঝোতার দাবি ছিল ১৪ দলের শরিকদের। আসন ধরে ভোটের প্রস্তুতি এগিয়ে নিতেই এমন চাওয়া ছিল তাদের। কিন্তু এর ঠিক উলটো অবস্থানে আওয়ামী লীগ। বিএনপিবিহীন নির্বাচনে শুরু থেকেই আসন সমঝোতা নিয়ে কৌশলী ক্ষমতাসীনরা। নির্বাচনের তফশিলের পরে প্রার্থীদের মনোনয়পত্র দাখিলও শেষ হয়েছে। এখন চলছে যাচাই-বাছাইয়ের কাজ। সব মিলিয়ে ভোটেরও বাকি আর মাত্র ১ মাস। এখনো সুরহা হয়নি শরিকদের আসন সমঝোতা। ফলে মাঠে নামা নিয়েও তারা দ্বিধায় আছেন। এবার মাত্র দুটি বাকি রেখে ২৯৮টি সংসদীয় আসনেই দলের প্রার্থী ঘোষণা করেছে আওয়ামী লীগ। এসব প্রার্থী পুরোদমে ভোটের মাঠ চষে বেড়াচ্ছেন।

অন্যদিকে প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ নির্বাচনের লক্ষ্যে দলের স্বতন্ত্র প্রার্থীদের বিষয়ে নমনীয় আওয়ামী লীগ। এতে প্রায় প্রতি আসনেই আওয়ামী লীগেরই এক বা একাধিক স্বতন্ত্র প্রার্থী মাঠে রয়েছেন। কিন্তু অন্ধকারে শরিকরা। নিজেদের মতো মনোনয়নপত্র জমা দিলেও তাদের কতটি বা কোন কোন আসন ছাড়া হবে তা এখনো চূড়ান্ত হয়নি। দফায় দফায় বৈঠক করে এ বিষয়ে তাগাদা দিলেও ফয়সালা আসেনি। ফলে বিষয়গুলো নিয়ে অসন্তুষ্টি রয়েছে ক্ষমতাসীন দলের শরিকদের মধ্যে। তাদের প্রত্যাশা, যত দ্রুত সম্ভব সম্মানজনভাবে আসন সমঝোতা হোক। এক্ষেত্রে আওয়ামী লীগের কাছে গত নির্বাচনের চেয়ে দ্বিগুণ আসনে ছাড়ের দাবিও রেখেছে জোট শরিকরা। তবে আওয়ামী লীগের নীতিনির্ধারণী পর্যায়ের নেতারা বলছেন, শরিক ও জোট নেতাদের সঙ্গে আলোচনা করেই আসনবিন্যাস চূড়ান্ত করা হবে। এক্ষেত্রে ১৭ ডিসেম্বর পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হতে পারে বলেও মনে করেন তারা। ফলে আসন সমঝোতা নিয়ে অপেক্ষা ফুরাচ্ছে না জোট শরিকদের।

নির্বাচনের তফশিল অনুযায়ী, ১৭ ডিসেম্বর প্রার্থিতা প্রত্যাহারের শেষ দিন। তার আগেই সমঝোতা ও আসন ভাগাভাগি পাকা করে ফেলতে হবে। সোমবার আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনার সঙ্গে ১৪ দলের শরিকদের বৈঠক হয়। এতে ১৪ দল ফের জোটগতভাবে নির্বাচনে অংশ নেওয়ার প্রত্যয় ব্যক্ত করলেও আসন সমঝোতা হয়নি। এর পরদিন মঙ্গলবার বিকালে জোটের সমন্বয়ক আমির হোসেন আমুর বাসায় ফের বৈঠক করেন জোটের শীর্ষ করেক নেতা। সেখানে কোন কোন আসনে শরিকরা নৌকা প্রতীকে নির্বাচন করতে চান তা নিয়ে আলোচনা হয়। তবে সেখানেও চূড়ান্ত কিছু হয়নি। বৈঠক থেকে বেরিয়ে জোটের শীর্ষ নেতারা বলেন, আসন ভাগাভাগি যেন জোটের জন্য সম্মানজনক হয়, সেটাই প্রত্যাশা। বর্তমান সংসদে ১৪ দলীয় জোটের ১০টি আসন রয়েছে। সেক্ষেত্রে জোটের প্রত্যাশা, দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে দ্বিগুণ প্রার্থী ছাড় দেওয়া।

মঙ্গলবারের বৈঠক শেষে আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য এবং ১৪ দলীয় জোটের সমন্বয়ক ও মুখপাত্র বর্ষীয়ান রাজনীতিবিদ আমির হোসেন আমু বলেন, জাতীয় পার্টির সঙ্গে হয়তো বুধবার আলাপ হবে। এরপর একটা পর্যায়ে যেতে পারে।

১৪ দলের সঙ্গে আসন সমঝোতার বিষয়ে কোনো অগ্রগতি আছে কিনা বৃহস্পতিবার এ বিষয়ে জানতে চাইলে আমির হোসেন আমু বলেন, না। আর নতুন কোনো তথ্য নেই। জাতীয় পার্টির সঙ্গে আলোচনা হয়েছে কিনা বা কখন আলোচনা হবে, সময় ঠিক হয়েছে কিনা জানতে চাইলে তিনি বলেন, না, আমি কোনো খবর এখনো পাইনি।

এদিকে শরিক দলের নেতাদের সঙ্গে কথা বলে ও দলীয় সূত্রে জানা গেছে, আমির হোসেন আমুর কাছে জাসদ নেতারা ১০টি আসনে ছাড় চেয়েছেন। বর্তমানে দলটির সংসদ-সদস্য আছেন তিনজন। আর ওয়ার্কার্স পার্টির প্রত্যাশা সাতটি আসন। এ সংসদে তাদেরও সংসদ-সদস্য আছেন তিনজন। তরিকত ফেডারেশনের বর্তমানে একজন সংসদ-সদস্য থাকলেও এবার তারা পাঁচটি আসন আশা করছেন। জাতীয় পার্টি (জেপি) পাঁচটি আসন দাবি করলেও বর্তমানে দলটির একজন সংসদ-সদস্য আছেন। সাম্যবাদী দলের কোনো সংসদ-সদস্য না থাকলেও এবার তারা একটি আসন চান। জোটের বাকি শরিক দলের বর্তমান সংসদে প্রতিনিধিত্ব নেই, তবে দু-একটি আসনে হলেও ছাড়ের প্রত্যাশা আছে তাদেরও।

জানা গেছে, জাসদ সভাপতি হাসানুল হক ইনু বর্তমান সংসদ-সদস্য হওয়া কুষ্টিয়া-২ আসনে ছাড় পাচ্ছেন। ঢাকা-৮ থেকে একাধিকবার সংসদ-সদস্য হলেও, ওয়ার্কার্স পার্টির সভাপতি রাশেদ খান মেনন এবার ছাড় পাচ্ছেন বরিশাল-২ বা ৩ আসনে। ওয়ার্কার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক ফজলে হোসেন বাদশা রাজশাহী-২ আসনের সংসদ-সদস্য হলেও অন্য আসনে ছাড় পেতে পারেন। জাসদ সাধারণ সম্পাদক শিরীন আখতারের ফেনীর আসনে ছাড় না পেলেও, সংরক্ষিত মহিলা আসনে এমপি হতে পারেন। এছাড়া জাতীয় পার্টির (জেপি) চেয়ারম্যান আনোয়ার হোসেন মঞ্জুকে পিরোজপুর-২ ও তরিকত ফেডারেশনের সভাপতি নজিবুল বশর মাইজভাণ্ডারী চট্টগ্রাম-২ আসনে ছাড় চান।

এদিকে জোট শরিকদের সঙ্গে আসন বণ্টন নিয়ে এর আগে কখনো এতটা অনিশ্চয়তা হয়নি। বারবার তাগাদা ও নিজেদের অবস্থান স্পষ্ট করে আসন ছাড়ের ব্যাপারে অনুরোধ জানানো হলেও আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে এ বিষয়ে ১৪ দলের মুখপাত্র ও সমন্বয়ক আমির হোসেন আমুর নেতৃত্বে একটি কমিটি করে দেওয়া হয়। আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের, সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য জাহাঙ্গীর কবির নানক, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিমকে এ কমিটিতে রাখা হয়েছে। তাদের জোটের দলগুলোর সঙ্গে কথা বলতে বলা হয়েছে।

১৪ দলের শরিক নেতাদের অনেকেই মনে করেন, এটা মূলত আওয়ামী লীগের কালক্ষেপণের কৌশল। কিন্তু এতে আমরা যে সমস্যায় পড়ছি, তাও তো তাদের দেখতে হবে। আমরা আমাদের নির্বাচনি প্রস্তুতিতে পিছিয়ে পড়ছি। তাছাড়া আওয়ামী লীগ কতটা আসনে ছাড় দেবে, সেখানে তাদের স্বতন্ত্রদের বিষয়ে কি সিদ্ধান্ত নেবে, সেটা এখনই স্পষ্ট করা দরকার। কারণ জোটবদ্ধ হয়ে বা জোটের প্রতীক নিয়ে নির্বাচন করতে গেলে, আসনগুলোর স্থানীয় নেতাকর্মীদের মধ্যে সমন্বয়ের বিষয় রয়েছে। কিন্তু দুঃখজনক হলো ক্ষমতাসীনরা এতে খুব বেশি গুরুত্ব দিচ্ছে না।

এদিকে আসন সমঝোতা নিয়ে আওয়ামী লীগের কালক্ষেপণ এবং নিজেদের নির্বাচনের প্রস্তুতির বিষয়ে আজ কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী কমিটির সভা ডেকেছে ১৪ দলের অন্যতম শরিক জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল জাসদ। বেলা ১১টায় দলের সভাপতি হাসানুল হক ইনুর ন্যাম ভবনের বাসায় এ সভা অনুষ্ঠিত হবে। সভার বিষয়ে জানতে চাইলে জাসদের কেন্দ্রীয় কমিটির এক নেতা বলেন, আসন সমঝোতা নিয়ে আওয়ামী লীগ যে কৌশল নিচ্ছে, তাতে আসলে আমরা সন্তুষ্ট হতে পারছি না। এটা নিয়েই মূলত সভা ডাকা হয়েছে। এ সভাকে ‘হতাশা’র সভাও বলা যেতে পারে।

Share

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

     এ ক্যাটাগরীর আরো সংবাদ