আজ ১১ই মাঘ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ, ২৫শে জানুয়ারি, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ

চাকরিপ্রার্থীদের আটকে রেখে নির্যাতন, ছাত্রলীগের ৬ নেতা-কর্মীর বিরুদ্ধে মামলা

(আজকের দিনকাল):যশোর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (যবিপ্রবি) লিফট অপারেটরের নিয়োগ পরীক্ষা দিতে আসা ১৭ চাকরিপ্রার্থীকে অপহরণের ঘটনায় মামলা করা হয়েছে। এতে বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের ৬ নেতা-কর্মীর নাম উল্লেখসহ অজ্ঞাত আরও ৫ থেকে ৬ জনকে আসামি করা হয়েছে। তবে ঘটনার সঙ্গে জড়িত কাউকে গ্রেপ্তার করতে পারেনি পুলিশ।

বৃহস্পতিবার (৭ ডিসেম্বর) রাতে যশোর কোতয়ালী থানায় আরাফাত হোসেন নামে এক ভুক্তভোগী বাদী হয়ে এ মামলা করেন।

মামলায় বলা হয়, যশোর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে লিফট অপারেটর পদের চাকরি পরীক্ষা দিতে গেলে বেলাল হোসেন, রাফি হাসান, রেদোয়ান হাসান রাফি, রায়হান রাব্বি, শোয়েব, শাহিনুরসহ আরও ৫-৬ জন ছাত্রলীগ নেতা-কর্মী মিলে চাকরিপ্রার্থীদের ধরে শহীদ মসিয়ূর রহমান হলের ভেতরে নিয়ে যায়। সেখানে আটকে রেখে চাকরিপ্রার্থীদের এলোপাথাড়ি মারধর করা হয়। পরে তাদেরকে চোখ বেঁধে যশোর-ঝিনাইদহ মহাসড়কে নিয়ে ছেড়ে দেওয়া হয়।

জানা যায়, সম্প্রতি লিফট অপারেটরের ১২টি পদে জনবল নিয়োগের জন্য বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করে যশোর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। আবেদনপত্র যাচাই-বাছাই শেষে ৩৮ প্রার্থীকে পরীক্ষার জন্য বৃহস্পতিবার ক্যাম্পাসে ডাকা হয়। সকাল ১০টা থেকে চাকরিপ্রার্থীরা ক্যাম্পাসে আসতে থাকেন। সকাল ১০টা থেকে বেলা সাড়ে তিনটা পর্যন্ত তাদের ব্যবহারিক পরীক্ষা নেওয়া হয়। এর মধ্যে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের কাছে খবর আসে প্রার্থীদের মধ্যে অত্যন্ত ১৭ জনকে ক্যাম্পাসের ছাত্র হলে নিয়ে আটকে রাখা হয়। পরে পুলিশ ক্যাম্পাসে পৌঁছালে বিকালে তাদের ছেড়ে দেওয়া হয়। এই ঘটনায় ভুক্তভোগীরা বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের কাছে অভিযোগ দেয়। পরে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন বিষয়টি তদন্তের স্বার্থে সিসি ক্যামেরার হার্ডডিস্ক সংগ্রহ করতে গেলে সেটিও ছিনিয়ে নেন ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীরা। এরপর সন্ধ্যায় আটকে রাখা প্রার্থীদের মধ্যে আরও পাঁচজনের পরীক্ষা নেওয়া হয়। এ পর্যন্ত ৩৮ প্রার্থীর ২৬ জন পরীক্ষা দিতে পেরেছেন।

এদিকে বৃহস্পতিবার রাত ২টার দিকে আসামিদের গ্রেপ্তারের জন্য পুলিশ বিশ্ববিদ্যালয়ের শহীদ মসিয়ূর রহমান ছাত্র হলে অভিযান চালাতে যায়। এ সময় ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীরা অভিযানের খবর পেয়ে হলের মূল ফটকে তালা ঝুলিয়ে ভেতরে সমবেত হয়ে ‘জয় বাংলা, জয় বঙ্গবন্ধু’ শ্লোগান দিতে থাকে।

বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের সভাপতি সোহেল রানা বলেন, আমি বিষয়টি সাংবাদিকদের মাধ্যমে শুনেছি। আমার কোনো কর্মী কাউকে আটকে রাখেনি। যেসব কক্ষের কথা বলা হচ্ছে, সেখানে আমার প্রতিপক্ষের এক নেতার অনুসারীরা থাকে।

যশোর কোতোয়ালি থানার ওসি আব্দুর রাজ্জাক বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়ে চাকরি প্রার্থীদের আটকে রাখার ঘটনায় এক প্রার্থী ৬ জনকে আসামি করে মামলা করেছেন। আসামিদের গ্রেপ্তারের জন্য রাতেই বিশ্ববিদ্যালয়ের হলে অভিযান চালানো হয়। কিন্তু কাউকে আটক করা যায়নি।

যশোর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য আনোয়ার হোসেন বলেন, চাকরির পরীক্ষা দিতে এলে ১৭ প্রার্থীকে আটকে রাখে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। ছাত্র হলের যে কক্ষগুলোতে প্রার্থীদের আটকে রাখা হয়, সেসব কক্ষে ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীরা থাকে। ক্যাম্পাসে পুলিশ ডাকা হলে বিকালে তাদের ছেড়ে দেওয়া হয়। এ ঘটনায় অপহরণ ও সিসিটিভি ক্যামেরার হার্ডডিস্ক ছিনতাইয়ের ঘটনার অপরাধে মামলা করা হবে। একই সঙ্গে একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হবে। আগামী রোববার বিশ্ববিদ্যালয় রিজেন্ড বোর্ডের বৈঠক রয়েছে। বৈঠকে বিষয়টি উত্থাপন করা হবে। তারপরই মামলা ও তদন্ত কমিটি হবে।

Share

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

     এ ক্যাটাগরীর আরো সংবাদ