আজ ২১শে আশ্বিন, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ, ৬ই অক্টোবর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ

পাহাড়ের মাঠ-প্রান্তরে সূর্যমুখীর হাসি

(আজকের দিনকাল):রাঙামাটির পাহাড়ের মাঠ-প্রান্তরে চাষাবাদ হচ্ছে মূল্যবান ভোজ্যতেল সূর্যমুখী। দেখা দিয়েছে বাম্পার ফলনের সম্ভাবনা। জেলার ১৬৫ হেক্টর ফসলের মাঠজুড়ে এখন সূর্যমুখীর হাসি। ফসলের মাঠ-প্রান্তরজুড়ে ছিটিয়েছে হলুদ রঙের আভা। অনেক লোকজন যাচ্ছেন সূর্যমুখীর ফসল দেখতে। আনন্দ উপভোগ করছেন সূর্যমুখীর সঙ্গে নিজেদের ছবি তোলে।

এদিকে পুষ্টিগুণ সম্পন্ন মূল্যবান ভোজ্য তেলের সূর্যমুখী চাষাবাদে কাঙ্ক্ষিত ফলনে মুখে হাসি ফুটেছে কিষান-কিষানির।

রাঙামাটি পার্বত্য জেলা পরিষদের পৃষ্ঠপোষকতায় ও কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের সহায়তায় রাঙামাটির বিভিন্ন পাহাড়ি এলাকায় ব্যাপকহারে সূর্যমুখীর চাষাবাদ হচ্ছে। শুরুতে পরীক্ষামূলক চাষেই এর বিপুল সাফল্য এনেছে কিষান-কিষাণিদের। চলতি বছর জেলার সদর উপজেলা, নানিয়ারচর, কাউখালী, লংগদু, বাঘাইছড়িসহ বিভিন্ন উপজেলায় সূর্যমুখীর চাষাবাদ হচ্ছে বলে জানিয়েছে কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর।

সরেজমিন দেখা যায়, জেলার কাউখালী উপজেলার ঘাগড়া ইউনিয়নের রাঙ্গীপাড়া ও পানছড়ি এলাকায় অনেকে সূর্যমুখীর চাষাবাদ করেছেন। পাহাড়ের মাঠ-প্রান্তরজুড়ে এখন শোভা পাচ্ছে এসব সূর্যমুখী ফসলের হাসি। ফলনে ফসলের স্বপ্ন বুনছেন কিষান-কিষাণি। সূর্যমুখীর আনন্দ উপভোগ করতে যাচ্ছেন আশেপাশের মানুষ। তুলছেন ছবি।

রাঙ্গীপাড়ার কিষান সুজন চাকমা ও তার স্ত্রী কিষাণি ননাবী চাকমা বলেন, এবারই তারা প্রথম ৫০ শতক জমির মাঠে পরীক্ষামূলকভাবে সূর্যমুখীর চাষ করেছেন। বিনা মূল্যে বীজ সরবরাহ দিয়েছে কৃষি বিভাগ। শুরুতেই ফসলের কাঙ্ক্ষিত ফলন তাদেরকে ভবিষ্যৎ স্বপ্ন দেখাচ্ছে। মাত্র তিন হাজার টাকা ব্যয়ে তাদের সূর্যমুখীর ফসল ২০-২৫ হাজার টাকা আয়ের সম্ভাবনা রয়েছে বলে ধারণা করা হচ্ছে। পরীক্ষামূলক চাষে এ ধরনের সম্ভাবনা দেখে সামনের বছর আরও ব্যাপক আকারে সূর্যমুখীর চাষাবাদ করবেন। তবে এক্ষেত্রে সেচের পানির ব্যবস্থা দরকার বলে জানান তারা।

ঘাগড়া ইউনিয়ন পরিষদের ৪নং ওয়ার্ড সদস্য মুনিন্দ্র তালুকদার বলেন, আগ্রহী কৃষকদের প্রয়োজনীয় সহযোগিতা দেওয়া হলে তাদের এলাকায় সূর্যমুখী চাষাবাদে বিপুল কৃষি উৎপাদনের সম্ভাবনা আছে। সেচের পানির অভাবে প্রতিবছর শুষ্ক মৌসুমে বিস্তর চাষযোগ্য জমি পতিত অবস্থায় পড়ে থাকে। সেচের পানির ব্যবস্থা করা গেলে সেসব জমি চাষাবাদে কৃষি উৎপাদনের মাধ্যমে এলাকার অর্থনৈতিক উন্নয়ন গড়ে উঠবে। সেখানে সড়ক যোগাযোগ ব্যবস্থা থাকায় বাজারজাতের সুবিধাও রয়েছে। দরকার শুধু সেচের পানির ব্যবস্থা।

রাঙামাটি কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক (শস্য) আপ্রু মারমা জানান, সূর্যমুখী চাষে চলতি বছরে রাঙামাটি জেলায় ১৬৫ হেক্টর জমিতে সূর্যমুখীর চাষাবাদ হয়েছে। এর উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা ৪৯৬ টন। যার সম্ভাব্য ভোজ্য তেল উৎপাদন হতে পারে ১৯৮ টন। বর্তমান বাজারমূল্য হিসাবে প্রতি লিটার ৪০০ টাকা দরে এসব মূল্যবান ভোজ্যতেল বিক্রি হবে প্রায় সাড়ে ৮ কোটি টাকা।

তিনি জানান, জেলায় ২০২২-২৩ সালে ২৭ হেক্টর জমিতে সূর্যমুখী চাষাবাদ করে উৎপাদন হয়েছিল ৬৭ টন। তার আগের বছর ২১-২২ সালে ১৫ হেক্টর জমিতে সূর্যমুখী চাষাবাদ করে উৎপাদন হয় ৩৭ টন। চলতি বছর রাঙামাটি পার্বত্য জেলা পরিষদ থেকে ২০০ হেক্টর জমিতে প্রণোদনা দেওয়া হয়েছে এক হাজার কৃষককে। তবে চাষাবাদ হয় ১৩৩ হেক্টর জমিতে। এর বাইরে নিজ উদ্যোগে আরও ৩২ হেক্টর জমিতে সূর্যমুখীর চাষাবাদ করেন কৃষক।

Share

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

     এ ক্যাটাগরীর আরো সংবাদ