আজ ২রা মাঘ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ, ১৬ই জানুয়ারি, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ

দুয়ারে সমাগত দুই উৎসব

(আজকের দিনকাল):বাঙালির জীবনের বৃহৎ দুটি উৎসব এবার হাত ধরাধরি করে এসেছে। দীর্ঘ এক মাসের সিয়াম সাধনা শেষ হতে চলেছে। দুয়ারে সমাগত পবিত্র ঈদুল ফিতর। নতুন বাঁকা চাঁদের দেখা পেলেই শুরু হবে ঈদের আনন্দ।

এর দিন কয়েক পরই ১৪ এপ্রিল রবিবার পহেলা বৈশাখ, বাংলা ১৪৩১ সনের শুরু। বাঙালি স্বাগত জানাবে নববর্ষকে। কাছাকাছি সময়ে দুটি বৃহৎ উৎসব হওয়ায় এবার দ্বিগুণ আনন্দ।

পবিত্র ঈদুল ফিতর আগামীকাল বুধবার নাকি পরদিন বৃহস্পতিবার তা জানা যাবে আজই সন্ধ্যায়।

আজ মঙ্গলবার দেশের আকাশে ১৪৪৫ হিজরি সনের শাওয়াল মাসের চাঁদ দেখা গেলে কাল উদযাপিত হবে আনন্দের ঈদ, মুসলিম সম্প্রদায়ের বৃহত্তম ধর্মীয় উৎসব। আর আজ শাওয়ালের চাঁদ দেখা না গেলে বুধবার পবিত্র রমজান মাসের ৩০ দিন পূর্ণ হবে। সে ক্ষেত্রে ঈদ উদযাপিত হবে বৃহস্পতিবার।

শাওয়াল মাসের চাঁদ দেখা এবং ঈদুল ফিতরের তারিখ নির্ধারণের লক্ষ্যে বিধি অনুযায়ী আজ সন্ধ্যায় বৈঠকে বসবে জাতীয় চাঁদ দেখা কমিটি।

বায়তুল মোকাররম জাতীয় মসজিদে ইসলামিক ফাউন্ডেশন দপ্তরে ধর্মমন্ত্রী মো. ফরিদুল হক খানের সভাপতিত্বে এই বৈঠক বসবে। দেশের বিভিন্ন জায়গা থেকে দায়িত্বশীলদের চাঁদ দেখার সংবাদ পাওয়া সাপেক্ষে কমিটি ঈদুল ফিতর উদযাপনের তারিখ ঘোষণা করবে। দেশের আকাশে কোথাও শাওয়াল মাসের চাঁদ দেখা গেলে তা নিচের টেলিফোন ও ফ্যাক্স নম্বরে কিংবা সংশ্লিষ্ট জেলা প্রশাসক বা উপজেলা নির্বাহী অফিসারকে জানানোর অনুরোধ করেছে ইসলামিক ফাউন্ডেশন। টেলিফোন নম্বর : ০২-২২৩৩৮১৭২৫, ০২-৪১০৫০৯১২, ০২-৪১০৫০৯১৬ ও ০২-৪১০৫০৯১৭। ফ্যাক্স নম্বর : ০২-২২৩৩৮৩৩৯৭ ও ০২-৯৫৫৫৯৫১।

ঈদের চাঁদ দেখার নিশ্চিত খবর ছড়িয়ে পড়তেই দেশজুড়ে বাজতে থাকবে জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলামের লেখা ‘ও মন রমজানের ঐ রোজার শেষে এলো খুশির ঈদ’। ১৯৩১ সাল থেকে বাজতে বাজতে গানটি ঈদুল ফিতরের অপরিহার্য আগমনী সংগীতে পরিণত হয়েছে।

রমজানের এক মাস সিয়াম সাধনার পর শাওয়াল মাসের প্রথম দিন জামাতে নামাজ আদায়, শুভেচ্ছা বিনিময় এবং সাধ্যমতো ভালোমন্দ খেয়ে ঈদুল ফিতরের আনন্দ উপভোগ করে সারা বিশ্বের মুসলিমরা। ঈদের দিন সকাল সকাল গোসল করে পরিচ্ছন্ন পোশাক পরে এবং সুগন্ধি মেখে সবাই ঈদগাহে বা মসজিদে যায়। সেখানে সব শ্রেণির মানুষ এককাতারে ঈদের নামাজ আদায় করে। নামাজের পর চলে কোলাকুলি, যা ভ্রাতৃত্বের এক প্রতীক। ঈদগাহ থেকে ফিরে চলে পরিবার, প্রতিবেশী ও আত্মীয়-স্বজন নিয়ে খাওয়াদাওয়ার পালা। চলে স্বজন, বন্ধুদের বাড়ি বা বিনোদনস্থানে বেড়াতে যাওয়া। এভাবে একই সঙ্গে ধর্মীয় ভাবগাম্ভীর্য ও সামাজিক আনন্দ উপভোগের মধ্য দিয়ে উদযাপিত হয় ঈদের দিনটি।

ঈদুল ফিতরের আমেজ শুরু হয় আসলে রমজানের শুরু থেকেই। এবার গ্রীষ্মের দুঃসহ দাবদাহের মধ্যে সাধ্যমতো ঈদের কেনাকাটা সেরেছে সবাই। প্রিয়জনদের সঙ্গে উৎসবের আনন্দ ভাগাভাগি করতে রাজধানীসহ বড় শহরগুলোতে থাকা কয়েক কোটি মানুষ গ্রামের বাড়িতে পৌঁছে গেছে। কেউ কেউ এখনো পথে বা ঘর ছাড়ার প্রস্তুতির মধ্যে।

ঈদের দিনও গ্রীষ্মের খরতাপে পুড়তে হবে নাকি বৃষ্টি নামবে তা নিয়ে প্রশ্ন আছে। যদিও এরই মধ্যে দেশের বিভিন্ন স্থানে বৃষ্টি এবং ঝোড়ো হাওয়ার কারণে দু-এক দিন ধরে তাপমাত্রা বেশ খানিকটা কমে এসেছে। তবে আজ মঙ্গলবার থেকে তাপমাত্রা আবার বাড়তে পারে বলে জানিয়েছে আবহাওয়া অধিদপ্তর। তার পরও ১৩ বা ১৪ এপ্রিলের আগে গরম খুব বেশি না পড়ারই সম্ভাবনা। এমনকি কোথাও কোথাও বয়ে যেতে পারে কালবৈশাখীও।

বাংলা নববর্ষের আয়োজন

এবার ঈদের সঙ্গে যুক্ত হয়েছে নববর্ষের ছুটি। তাই ঈদের পরও কয়েক দিন বাড়িতে থাকতে পারবেন চাকরিজীবীরা। ঈদুল ফিতরের ঘোরাঘুরি, খাওয়াদাওয়া, গল্প-আড্ডার সঙ্গে যুক্ত হবে পহেলা বৈশাখের আনন্দ। এখনো কৃষির ওপর অনেকটাই নির্ভরশীল এ দেশে বাংলা নতুন বছরের গুরুত্ব অপরিসীম। পহেলা বৈশাখে বিভিন্ন সামাজিক-সাংস্কৃতিক সংগঠন দিনভর হরেক রকমের আয়োজন করে থাকে। ব্যক্তি পর্যায়েও উদযাপনের থাকে নানা চেষ্টা।

দেশে পহেলা বৈশাখের প্রধান অনুষ্ঠানটি হবে রমনার বটমূলে ছায়ানটের আয়োজনে। ছায়ানট ১৯৬৭ সাল থেকেই নতুন বাংলা বছরকে স্বাগত জানাতে নববর্ষের সূর্যোদয়ের সময় থেকে এই প্রভাতি সংগীতায়োজন করে আসছে। পাকিস্তান আমলে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের লেখনীসহ বাঙালি সংস্কৃতিকে দমিয়ে রাখতে পাকিস্তানি স্বৈরশাসকদের যে অপতৎপরতা ছিল তার প্রতি বিদ্রোহ হিসেবেই যাত্রা শুরু হয়েছিল ছায়ানটের। দিন দিন ছায়ানটের বর্ষবরণ অনুষ্ঠান পরিণত হয়েছে দেশের বাংলা নববর্ষ উদযাপনের প্রধান আয়োজনে।

অন্যদিকে এবারও মঙ্গল শোভাযাত্রাসহ তিন দিনের বর্ণাঢ্য অনুষ্ঠান আয়োজন করবে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা অনুষদ। চারুকলার বকুলতলায় ১৩ এপ্রিল সন্ধ্যায় হবে চৈত্রসংক্রান্তির অনুষ্ঠান। ‘আমরা তো তিমির বিনাশী’ প্রতিপাদ্য নিয়ে মঙ্গল শোভাযাত্রা শুরু হবে পহেলা বৈশাখ সকাল ৯টায়। তৃতীয় দিন সন্ধ্যায় বকুলতলায় মঞ্চস্থ হবে যাত্রাপালা ‘গঙ্গা থেকে বুড়িগঙ্গা’।

Share

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

     এ ক্যাটাগরীর আরো সংবাদ