আজ ২৮শে কার্তিক, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ, ১৩ই নভেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ

খুলনায় নতুন কারাগার নির্মাণ শেষ হয়নি এক যুগেও

(আজকের দিনকাল):এক যুগেও শেষ হয়নি খুলনা জেলা কারাগার নির্মাণ প্রকল্পের কাজ। ২০১১ সালে প্রকল্পটি একনেকে অনুমোদন পেলেও কাজ শুরু হয় ২০১২ সালে। প্রকল্পের ব্যয় প্রথমে ১৪৪ কোটি টাকা থাকলেও কয়েক দফা বেড়ে এটি সর্বশেষ দাঁড়িয়েছে ২৮৮ কোটি টাকায়। সময় ও ব্যয় বাড়লেও কাজ শেষ না হওয়ায় রয়েছে অসন্তোষ। চলতি বছরের জুনে কারাগারের সব কাজ সম্পন্ন করার কথা থাকলেও সেটা আদৌ সম্ভব হবে কি না, তা নিয়ে রয়েছে সন্দেহ।

জানা যায়, ভৈরব নদীর তীরে ১৯০৬ সালে নির্মাণ করা হয় খুলনা জেলা কারাগার। যার ধারণক্ষমতা ৬৭৮ জন বন্দি। বর্তমানে কারাগারে দ্বিগুণ বন্দি রয়েছে। ফলে বর্তমান সরকার খুলনার সিটি বাইপাস সড়কের জয় বাংলা মোড়ের অদূরে প্রায় ৩০ একর জমির ওপর নতুন কারাগার নির্মাণকাজ শুরু করে। কারাগারের মাস্টার প্ল্যান অনুযায়ী চার হাজার বন্দি রাখা যাবে। তবে প্রকল্পের আওতায় আপাতত দুই হাজার বন্দি রাখার অবকাঠামো তৈরি হচ্ছে। এছাড়া কারাগারের ভেতরে বিভিন্ন শ্রেণির বন্দি ব্যারাক, কারারক্ষী কোয়ার্টারসহ এক তলা থেকে ছয় তলা পর্যন্ত ৪৭টি ভবন ও পর্যবেক্ষণ টাওয়ারসহ কংক্রিটের অবকাঠামো রয়েছে ৫২টি। কারাগারের ভেতরে ১৮ ফুট, ১২ ফুট, ৪ ফুটসহ বিভিন্ন উচ্চতার প্রাচীর নির্মাণ হচ্ছে প্রায় সাড়ে পাঁচ কিলোমিটার দৈর্ঘ্যরে। কিশোর ও কিশোরী বন্দিদের জন্য রয়েছে পৃথক ব্যারাক। নারীদের জন্য পৃথক হাসপাতাল, মোটিভেশন সেন্টার ও ওয়ার্কশেড থাকবে।

একইভাবে পুরুষ বন্দিদের জন্য ৫০ শয্যার হাসপাতাল থাকবে। আরও থাকবে কারারক্ষীদের সন্তানদের জন্য স্কুল, বিশাল লাইব্রেরি, ডাইনিং রুম, আধুনিক সেলুন ও লন্ড্রি। কারাগারে শিশুসন্তানসহ নারী বন্দিদের জন্য থাকবে পৃথক ওয়ার্ড ও ডে-কেয়ার সেন্টার। এ ওয়ার্ডটিতে সাধারণ নারী বন্দি থাকতে পারবেন না। সেখানে শিশুদের জন্য লেখাপড়া, খেলাধুলা, বিনোদন ও সংস্কৃতিচর্চার ব্যবস্থা থাকবে। কারাগারে পুরুষ ও নারী বন্দিদের হস্তশিল্পের কাজের জন্য আলাদা আলাদা ওয়ার্কশেড, বিনোদনকেন্দ্র ও নামাজের ঘর থাকবে।

এদিকে দীর্ঘদিনেও কারাগারটির নির্মাণ শেষ না হওয়ায় ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন নাগরিক নেতারা। তাদের দাবি, যে কোনো প্রকল্পের দীর্ঘসূত্রতায় দুর্নীতি যুক্ত থাকে। পাশাপাশি কারাগারটি অতিদ্রুত নির্মাণকাজ সম্পন্ন করে হস্তান্তর করলে বন্দিরা নানা অসুবিধা থেকে পরিত্রাণ পাবে।

কর্তৃপক্ষের দাবি, কাজের অগ্রগতি ৯২ ভাগ। জুনের মধ্যেই কাজ শেষ করা সম্ভব। তবে বাস্তবতা হলো, কারাগারের অনেক কাজই এখন বাকি, যা শেষ করতে আরও সময় লাগবে।

সুশাসনের জন্য নাগরিক (সুজন) খুলনার সভাপতি কুদরত-ই-খুদা বলেন, প্রায় ১৩ বছর পার হলেও জেলা কারাগারের কাজ শেষ হয়নি। একটি সুষ্ঠু রাষ্ট্রে এমন কথা ভাবা যায় না। প্রকল্পের ধীরগতির সঙ্গে দুর্নীতি যুক্ত থাকে। প্রকল্প দীর্ঘায়িত হলে দুর্নীতি বাড়ে।

খুলনা জেলা কারাগারের জেল সুপার মোহাম্মদ রফিকুল কাদের বলেন, সবার প্রত্যাশা প্রকল্পটি দ্রুত বাস্তবায়ন হবে। এটা বাস্তবায়িত হলে কারাগারের বন্দিদের ধারণক্ষমতা বাড়বে। পুরুষ ও মহিলাদের পৃথক হাসপাতাল থাকবে। নতুন কারাগারে স্কুলও আছে, যার মাধ্যমে সবার পড়ালেখার সুযোগ বাড়বে।

খুলনার গণপূর্ত বিভাগ-২-এর নির্বাহী প্রকৌশলী মো. আসাদুজ্জামান বলেন, খুলনা জেলা কারাগার নির্মাণ প্রকল্পটি চলতি বছরের জুনের মধ্যে সব কাজ শেষ করে হস্তান্তর করতে হবে। প্রকল্পের সামগ্রিক অগ্রগতি ৯২ ভাগ। এখন শুধু ফিনিশিং কাজ বাকি রয়েছে।-যুগান্তর

Share

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

     এ ক্যাটাগরীর আরো সংবাদ