এদিকে পুলিশ বাদী হয়ে করা নাশকতা মামলার এজাহারে রয়েছে নানা ফাঁকফোকর। আইনজীবীরা মনে করেন, এজাহারের দুর্বল বর্ণনা এবং ভুলভ্রান্তির কারণে এসব মামলা থেকে প্রকৃত নাশকতাকারীরা সহজেই ছাড় পেয়ে যাবে। অনেক মামলা নিয়ে আদালতের জবাবদিহির মুখেও পড়তে পারে পুলিশ।
গ্রেপ্তার বাণিজ্যের অভিযোগ
২১ জুলাই রাতে সারিয়াকান্দির কামাপুর ইউনিয়নের দড়িপাড়ার একটি ওয়াজ মাহফিল থেকে ছয়জনকে আটক করে চন্দনবাইশা ফাঁড়ির পুলিশ। স্থানীয় এক আওয়ামী লীগ নেতার পরামর্শে পুলিশ তাদের আটকের পর থানায় নিয়ে যায়। সেখানে আগের নাশকতা মামলায় চালান করার ভয় দেখিয়ে তাদের রাতভর হুমকি-ধমকি দেওয়া হয়। ভোরে আটক একজনের আত্মীয়ের মাধ্যমে মোটা অঙ্কের টাকা নেন থানার ওসি (তদন্ত) দরুল হুদা। এর পর তাদের এ তথ্য বাইরে প্রকাশ না করার শর্তে ছেড়ে দেওয়া হয়। তবে দরুল হুদা অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, ‘আমরা অভিযান চালাচ্ছি। তবে টাকা নিয়ে কাউকে ছেড়ে দিইনি। এ পর্যন্ত এ থানায় ১৩ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।’
২৩ জুলাই সন্ধ্যায় নন্দীগ্রাম পৌর বিএনপির কোষাধ্যক্ষ শামছুল হক ও পরের দিন ২৪ জুলাই পৌর বিএনপির যুগ্ম সম্পাদক আলতাফ হোসেনকে ওসি আজমগীর হোসাইনের নির্দেশে গ্রেপ্তার করা হয়। পরে দুই নেতাকে পুরোনো নাশকতা মামলায় চালানের হুমকি দিয়ে মোটা অঙ্কের টাকা নিয়ে থানা থেকেই ছেড়ে দেওয়া হয়। গত রোববার দুপুরে নন্দীগ্রাম পৌরসভার ১ নম্বর ওয়ার্ড বিএনপির সভাপতি লোকমান আলীকে আটক করা হয়। এ অভিযানে ছিলেন থানার এএসআই মিন্টু মিয়া ও মামুনুর রশিদ। তবে এই নেতাকে থানা পর্যন্ত যেতে হয়নি। টাকার বিনিময়ে রফা হয়ে গেলে ওসি আজমগীর তাঁকে ছেড়ে দেওয়ার নির্দেশ দেন। নন্দীগ্রামের ওসি আজমগীর হোসাইন বলেন, এখন পর্যন্ত ১৫ জনকে গ্রেপ্তার করেছি। আমরা টাকা নিয়ে আসামি ছেড়েছি– এ তথ্য সঠিক নয়।
আদমদীঘিতে পুলিশ অভিযান চালাচ্ছে ২০২৩ সালে বিস্ফোরকদ্রব্য আইনে করা একটি পুরোনো মামলায়। ১৮ থেকে ২৯ জুলাই পর্যন্ত ১২ দিনে এ মামলায় গ্রেপ্তার হয়ে জেলহাজতে গেছেন ১১ জন। এর বাইরে গ্রেপ্তারের ভয় দেখিয়ে বাণিজ্য করা হয়েছে আরও পাঁচজনের সঙ্গে। পুরোনো মামলায় গ্রেপ্তার নিয়ে ওসি রাজেশ কুমার চক্রবর্তী বলেন, ‘আমি নজর দেওয়ার চেষ্টা করি। কেউ টাকা নেওয়ার অভিযোগ করলে তদন্ত করে ব্যবস্থা নেব।’
মামলায় ফাঁকফোকর
কোটা সংস্কার আন্দোলনে বগুড়া সদর ও শেরপুরে পুলিশের ওপর হামলা হয়। এ ঘটনায় সোমবার পর্যন্ত বগুড়া সদরে ১৪টি এবং শেরপুরে একটি মামলা হয়েছে। এসব মামলার ১০টির বাদী পুলিশ। তবে এসব মামলার এজাহারে নানা ফাঁকফোকর রয়েছে বলে জানিয়েছেন আইনজীবীরা। তারা বলেন, অধিকাংশ মামলায়ই জব্দ তালিকা নগণ্য। হাজার হাজার শিক্ষার্থী লাঠিসোটা নিয়ে হামলা চালানোর বিষয় উল্লেখ করা হলেও তেমন কিছু জব্দ দেখানো হয়নি। অজ্ঞাতনামা আসামির কোনো সীমা নেই। নামধারী আসামিদের পুলিশ কীভাবে সুনির্দিষ্ট করল, এর উল্লেখ নেই। এজাহারে ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগে পুলিশের পক্ষ থেকে বাধা দেওয়ার কথা বলা হলেও সেটা কীভাবে, তা উল্লেখ নেই।
আইনজীবীরা বলেন, একটি বড় ঘটনা ঘটে গেছে, এটি নিশ্চিত। তবে মামলায় পুলিশের অভিযোগ একেবারেই দায়সারা। এটি প্রমাণ করার মতো যথেষ্ট উপাদান এজাহারে নেই। আদালতের জেরা চলাকালে এ অভিযোগ সাজানো বলে প্রতীয়মান হওয়ার যথেষ্ট সুযোগ রয়েছে। প্রায় সব মামলায়ই সুনির্দিষ্ট সাক্ষীর কোনো বর্ণনামূলক বক্তব্য নেই। ক্ষতির পরিমাণ টাকার অঙ্কে উল্লেখ করা হলেও, সেটি কীসের ভিত্তিতে কোন বিশেষজ্ঞ নির্ধারণ করেছেন, সেটার উল্লেখ নেই। পুলিশ শত শত রাউন্ড গুলি ও টিয়ার শেল নিক্ষেপের কথা বললেও এগুলো দিয়ে কী ধরনের প্রতিরোধ গড়ে তুলেছে, তারও উল্লেখ করা হয়নি মামলায়।-সুত্রঃসমকাল
Leave a Reply