আজ ৫ই আশ্বিন, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ, ২০শে সেপ্টেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ

ঢামেক মর্গে গুলিবিদ্ধ লাশের সারি, রক্তে ভেজা মেঝে

(আজকের দিনকাল):বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ডাকা সর্বাত্মক অসহযোগের দ্বিতীয় দিন গতকাল সোমবার রাজধানীর যাত্রাবাড়ী, শনির আখড়া, চানখাঁরপুলসহ বিভিন্ন স্থানে গোলাগুলির ঘটনা ঘটেছে। গুলিবিদ্ধ হয়েছেন তিন শতাধিক মানুষ। তাদের মধ্যে শুধু ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের (ঢামেক) জরুরি বিভাগেই চিকিৎসা নিতে আসেন অন্তত ১৫০ জন। তা ছাড়া ৩৬ জনের গুলিবিদ্ধ লাশ মর্গে রয়েছে। রাত সাড়ে ৮টা পর্যন্ত মর্গে সারিবদ্ধভাবে রাখা এসব লাশ দেখা যায়। খবর পেয়ে হাসপাতালে আসেন স্বজনরা। পরে ময়নাতদন্ত ছাড়াই অনেকেই লাশ নিয়ে যান। এ সময় স্বজনের কান্নার রোল ওঠে। একজন আরেকজনকে জড়িয়ে ধরে আহাজারি করেন।

সরেজমিন দেখা যায়, দুপুর ১২টার দিকে পুলিশের ধাওয়া খেয়ে ঢামেকের জরুরি বিভাগে ঢুকে পড়ে প্রায় দুই হাজার মানুষ। তাদের সরিয়ে দিতে রাবার বুলেট, টিয়ার গ্যাসের শেল ও গুলি ছোড়ে পুলিশ। ঘটনাস্থলেই গুলিতে দু’জন নিহত হন। মর্গে দেখা যায় কারও মাথায়, কারও বুকে, কারও হাতে-পায়ে গুলির দাগ। হাসপাতালে আসার পর চিকিৎসকরা কাউকে মৃত ঘোষণা করেন, আবার কাউকে জরুরি চিকিৎসার ব্যবস্থা করেন। অ্যাম্বুলেন্সগুলো রক্তে লাল হয়ে যায়। গুলিবিদ্ধ মানুষের রক্তে ভিজে যায় ঢামেকের পিচঢালা রাস্তা, ফ্লোর ও জরুরি বিভাগ। স্তব্ধ দাঁড়িয়ে এসব দৃশ্য দেখেন শত শত মানুষ। কিছু মানুষ গুলিতে ঝাঁজরা হয়ে যায়। এই বীভৎস চিত্র দেখে দেখে অনেকেই কাঁদছিলেন।
ঢামেকের জরুরি বিভাগের তথ্যমতে, সহিংসতার ঘটনায় গতকাল সকাল থেকে রাত সাড়ে ৯টা পর্যন্ত পাঁচ শতাধিক আহত মানুষ চিকিৎসা নিতে আসেন। ৭০ জন ভর্তি হন। রাতে এ রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত ৩৬ জনের লাশ গ্রহণ করা হয়। গুরুতর আহত অনেকেই চিকিৎসাধীন।
এদিকে ঢামেকে জরুরি বিভাগের গেট দিয়ে আন্দোলনকারীরা ঢুকে পড়লে চারদিকে ছড়িয়ে পড়ে আতঙ্ক। এ সময় অনেক রোগীকে ভয়ে হাসপাতাল ছাড়তে দেখা যায়। হাসপাতালের সামনে পুলিশ যখন গুলি ছুড়ছিল, তখন জরুরি বিভাগে টিকিট কালেক্টরে বসে ছিলেন চার কর্মচারী। তারা বলেন, হাসপাতালে পুলিশ গুলি করবে ভাবিনি।

ঢামেক হাসপাতালের ‘২০০’ ওয়ার্ডে চিকিৎসাধীন মস্তিষ্কের সমস্যা নিয়ে ভর্তি আহমেদ আলী। তিনি বলেন, মুহুর্মুহু গুলি ও টিয়ার শেলের শব্দে গোটা হাসপাতাল কাঁপতে থাকে। রোগীর স্বজনরা এদিক ওদিক ছুটতে শুরু করেন। অনেকেই জীবন বাঁচাতে বেডের নিচে লুকিয়ে ছিলেন।
রাত সাড়ে ৮টার দিকে স্বামীর খোঁজে মর্গে আসেন পারভীন সুলতানা। ১৫ মিনিট পর তিনি স্বামীর লাশ পান। তিনি কাঁদতে কাঁদতে বলেন, ‘আমার স্বামী আবু ইসহাক (৫২) সৌদি আরবে থাকতেন। দেশে ফিরে তাঁকে লাশ হতে হলো। এখন আমার সন্তানের কী হবে।’ ময়নাতদন্ত ছাড়াই লাশ নিয়ে যান তিনি।
ঢামেক হাসপাতাল পরিচালক আসাদুজ্জামান বলেন, অনেককে মৃত অবস্থায় আনা হয়েছে এবং চিকিৎসাধীন অবস্থায় অনেকেই মারা গেছেন। আন্দোলনে এ পর্যন্ত কতজন মারা গেছেন, তার তালিকা করা সম্ভব হয়নি বলে তিনি জানান। -ডেস্ক

Share

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

     এ ক্যাটাগরীর আরো সংবাদ