আজ ২৩শে আশ্বিন, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ, ৮ই অক্টোবর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ

তারুণ্যশক্তি বির্নিমাণ করুক এক নূতন বাংলাদেশ

(আজকের দিনকাল):কবি বলিয়াছেন- ‘বিশ্বজোড়া পাঠশালা মোর,/ সবার আমি ছাত্র,/ নানান ভাবের নতুন জিনিস,/ শিখছি দিবারাত্র’। কবি সুনির্মলের এই পঙ্ক্তিমালার মতো আমাদের দূষিত হইয়া উঠা চারপাশ যেন সুনির্মল করিয়া তুলিতেছেন আমাদের ‘জেন-জি’। আমাদের ছাত্রছাত্রীরা। তাহারা কেবল ছাত্র নহেন, আমরাও তাহাদের ছাত্র। তাহারা শিখাইতেছেন কী করিয়া বিশৃঙ্খলাকে শৃঙ্খলার মধ্যে আনা যায়। তাহারা দেখাইতেছেন, কীভাবে অন্যায়-অনিয়ম-অনাচারের বিপরীতে কুসুমকানন কর্ষণ করা যায়।

দুই দিন পার হইয়া গিয়াছে দেশে এখনো অন্তর্বর্তীকালীন সরকার গঠিত হয় নাই। এমতাবস্থায়, দেশের বিভিন্ন স্থানে আইনশৃঙ্খলার অবনতি ঠেকাইতে ও ট্রাফিক নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থায় নিজেদের উজাড় করিয়া মেলিয়া ধরিয়াছেন আমাদের ছাত্রছাত্রীরা। রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন মোড়ে শিক্ষার্থীদের ট্রাফিকের দায়িত্ব পালন করিতে দেখা গিয়াছে। গতকাল বুধবার সকাল হইতে দেশের প্রায় সকল শহরের বিভিন্ন স্থানে এই কর্মসূচি শুরু হয়। গতকাল সকাল হইতে রাজধানীর প্রায় সকল ব্যস্ততম সিগন্যাল ও সড়কে মুখে বাঁশি লইয়া অত্যন্ত দায়িত্বের সহিত ট্রাফিক সামলাইতে দেখা গিয়াছে শিক্ষার্থীদের। ঢাকায় গণভবনের সামনে, শিয়া মসজিদ মোড়ে, টিএসসি এলাকা, ইসিবি, ধানমন্ডি, কলাবাগান, বিজয় সরণি, ফার্মগেট, মিরপুর ১০ নম্বর, মিরপুর ১২ ও কাওরান বাজারসহ বিভিন্ন এলাকায় তাহাদের ট্রাফিক ব্যবস্থা নিয়ন্ত্রণ ও পরিচ্ছন্নতার কাজ করিতে দেখা গিয়াছে। সিগন্যালগুলিতে শিক্ষার্থীরা পালা করিয়া দায়িত্ব পালন করিতেছেন। কেবল ঢাকায় নহে, নোয়াখালী, কুড়িগ্রাম, নরসিংদী, জামালপুর, নড়াইল, ফরিদপুর, পাবনা, গাইবান্ধা, রাজবাড়ী, নাটোর, ঝিনাইদহ, মুন্সীগঞ্জ, নারায়ণগঞ্জ, সিলেটেও একই কার্যক্রম পরিচালনা করিতেছে স্কুল, কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয় ও মাদ্রাসায় পড়ুয়া শিক্ষার্থীরা। ইহার পাশাপাশি তাহারা পরিচালনা করিতেছেন পরিচ্ছন্নতার অভিযান। সবুজের অভিযানে রবীন্দ্রনাথ যেমন বলিয়াছেন-চিরযুবা তুই যে চিরজীবী,/ জীর্ণ জরা ঝরিয়ে দিয়ে/ প্রাণ অফুরান ছড়িয়ে দেদার দিবি।/ সবুজ নেশায় ভোর করেছি ধরা,/ ঝড়ের মেঘে তোরি তড়িৎ ভরা’। কবি ইহার শুরুতেই বলিয়াছেন, ‘ওরে নবীন, ওরে আমার কাঁচা,… আধমরাদের ঘা মেরে তুই বাঁচা’।

চলিতেছে সবুজের অভিযান। এই সবুজ নবীন শিক্ষার্থীরাই আধমরাদের ঘা মারিয়া জাগাইয়া তুলিতেছেন, দেখাইয়া দিতেছেন কীভাবে ক্রাইসিস ম্যানেজমেন্ট করিতে হয়, কীভাবে সংস্কার করিতে হয় প্রতিটি অন্দরে-অলিন্দে। আমাদের এই সবুজেরা জেন-জি। বলা হইত বাংলাদেশ হইবে স্মার্ট বাংলাদেশ। চৌকশ মাতৃভূমি। নব্বইয়ের দশকের শেষ তিন বৎসর এবং ২০০০ সাল হইতে ২০১২ সাল পর্যন্ত যাহাদের জন্ম, সেই ‘জেনারেশন জেড’ বা ‘জেন-জি’ আমাদের দেখাইয়া দিতেছে কাহাকে বলে নূতন সূর্যোদয়। তাহারা যখন যাহা করিতে হইবে, প্রত্যুৎপন্নমতিত্বের সহিত তাহাই করিতেছেন। বহু জায়গায় তাহারা লুট হওয়া মালামাল ফেরত দেওয়ার আহ্বানও জানাইতেছেন। কোথাও কোথাও পরিচ্ছন্নতা কার্যক্রমে শহর জুড়িয়া ছড়াইয়া-ছিটাইয়া থাকা ইটপাটকেল, আগুনে ভস্মীভূত বিভিন্ন কাঠামো হইতে আবর্জনা অপসারণ করিতেছেন শিক্ষার্থীরা। ইহা ছাড়াও সড়কে পড়িয়া থাকা গাড়ির টায়ার, সাইনবোর্ড ও ব্যানার অপসারণ করিয়া ঝাড়ু ও বেলচা দিয়া রাস্তার পাশের ময়লা, ফুটপাতে পড়িয়া থাকা আবর্জনাও পরিষ্কার করিতেছেন তাহারা। কালো ব্যাগে ক্ষতিকর উপাদান ও সাদা ব্যাগে ময়লা-আবর্জনা ভরিয়া পৌরসভার ময়লার স্তূপে ফেলা হইতেছে।

বাস্তবিক অর্থে, আমাদের মতো এত ঘনবসতিপূর্ণ দেশে এমন একটি গণ-আন্দোলন শেষে আইনশৃঙ্খলা রক্ষা করা সহজ কাজ নহে। ঘোলা পানিতে অনেক দুষ্কৃতীই ল অ্যান্ড অর্ডার ভাঙিতে তৎপর থাকে। আর সেইখানেই আমাদের শিক্ষার্থীরা সেনাবাহিনীর পাশাপাশি শৃঙ্খলা ফিরাইবার দায়িত্ব কাঁধে তুলিয়া লইয়াছেন। এই শিক্ষার্থীদের ছাত্র আমরা। তাহারাই আমাদের শিখাক কীভাবে সদাচারী, সত্যভাষী, সহনশীল হইতে হয়। দেশপ্রেম, সততা, নৈতিকতা বোধে দীপ্ত এই তারুণ্যশক্তি বির্নিমাণ করুক এক নূতন বাংলাদেশ।-ডেস্ক

Share

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

     এ ক্যাটাগরীর আরো সংবাদ