আজ ৫ই আশ্বিন, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ, ২০শে সেপ্টেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ

৩৬২ থানার কার্যক্রম চালু হয়েছে: পুলিশ হেডকোয়ার্টার্স‌‌‌

(আজকের দিনকাল):দেশের ১১০টি মহানগর থানার মধ্যে ৭০টি এবং রেঞ্জের ৫২৯ থানার মধ্যে ২৯১টিসহ মোট ৩৬১ থানার কার্যক্রম চালু হয়েছে বলে জানিয়েছে পুলিশ সদরদপ্তর। শুক্রবার এক বিজ্ঞপ্তিতে তারা এ তথ্য জানায়। এর মধ্যে ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) ৫০ থানার মধ্যে ৩০টির কার্যক্রম শুক্রবার থেকে সীমিত পরিসরে শুরু হওয়ার তথ্য পাওয়া গেছে।

তবে সংশ্লিষ্ট থানা এলাকায় পুলিশের টহল বন্ধ রয়েছে। গত ৫ আগস্ট শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পর বিক্ষোভকারীদের হামলার কারণে এসব থানার সার্ভার বিকল হয়ে যাওয়ায় জিডি বা মামলা অনলাইনে অন্তর্ভুক্ত হচ্ছে না। পুরোনো পদ্ধতিতেই রেজিস্টার বইয়ে নথিভুক্ত করতে হচ্ছে। সংশ্লিষ্ট থানার ওসিরা বলছেন, থানার কার্যক্রম পুরোপুরি স্বাভাবিক হতে আরও দু-এক দিন সময় লাগবে।

আজ বিকেলে সরেজমিন দেখা যায়, যাত্রাবাড়ী থানার প্রধান ফটকে বাঁশ-দড়ি বেঁধে ব্যারিকেড দিয়ে অন্তত ১৫ জন শিক্ষার্থী ও একজন আনসার সদস্য নিরাপত্তার দায়িত্ব পালন করছেন। থানার ভেতরে ঢুকতে গেলে শিক্ষার্থীরা বাধা দেন। সংবাদকর্মী পরিচয় দেওয়ার পর থানা চত্বরে প্রবেশ করতে দেওয়া হয়। ভেতরে থানা প্রাঙ্গণের ডান পাশে টিনশেডে দেখা যায়, দু’জন শিক্ষার্থী টেবিল-চেয়ার নিয়ে বসে থানার রেজিস্টার খাতায় কয়েকজন সেবাপ্রার্থীর অভিযোগ লিখছেন। জানা গেল, গতকাল পর্যন্ত সেখানে পুলিশ সদস্যরা আসেননি। মাঝেমধ্যে সেনাসদস্যরা আসছেন। টেবিল-চেয়ার পেতে বসে থাকা শিক্ষার্থী মো. আরিয়ান জানান, মানুষ থানায় সেবা নিতে আসছেন। যে কারণে তারা মানুষের অভিযোগ লিখে রাখছেন। গতকাল বিকেল ৪টা পর্যন্ত ২০টি অভিযোগ এসেছে; যার বেশির ভাগই হামলা, মারামারি ও হুমকির ঘটনা।

জানা গেল, যাত্রাবাড়ী থানার কার্যক্রম শুরু হয়নি। যে কারণে শিক্ষার্থীরা মানুষের অভিযোগ পুলিশের রেজিস্টার খাতায় লিখে রাখছেন। শুধু এই থানায় নয়, বাড্ডা, খিলক্ষেত, ভাটারাসহ রাজধানীর যেসব থানায় হামলা, ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগে বেশি ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে, সেসব থানার কার্যক্রম বন্ধ আছে। পুলিশ সদস্যও যাননি এসব থানায়। এ ছাড়া যেসব থানা আংশিক চালু হয়েছে, সেগুলোতেও কর্মরত সবাই আসেনি।

সরেজমিন দেখা যায়, সেনাবাহিনী ও আনসার সদস্যরা নিরাপত্তা দিচ্ছেন থানাগুলোতে। অপরদিকে মিন্টো রোডে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা (ডিবি) কার্যালয়েও সেনাসদস্যরা নিরাপত্তা দিচ্ছেন। ডিবি ও সিটিটিসির কর্মকর্তা-সদস্যরা বৃহস্পতিবার থেকে অফিসে আসা শুরু করেছেন। ডিবি গেট থেকে প্রাপ্ত তথ্যানুযায়ী, যেসব কর্মকর্তা ও সদস্য আসছেন, তারা রেজিস্টার খাতায় উপস্থিতির স্বাক্ষর করছেন। গত বৃহস্পতিবার থেকে গতকাল বিকেল ৫টা পর্যন্ত ৬৩৫ জন ডিবি কর্মকর্তা ও সদস্য এবং সিটিটিসির ১১৮ কর্মকর্তা-সদস্য অফিসে এসেছেন।

গত সোমবার আওয়ামী লীগ সরকার পতনের পর ডিবিসহ ডিএমপির ৫০ থানার কয়েকটি বাদে প্রায় সবক’টির কার্যক্রম বন্ধ ছিল। হামলা-আতঙ্কে পুলিশ সদস্যরা থানা ছেড়ে নিরাপদ স্থানে চলে যান। নবনিযুক্ত আইজিপি ময়নুল ইসলাম গত বুধবার সংবাদ সম্মেলনে ২৪ ঘণ্টার মধ্যে পুলিশ সদস্যদের নিজ নিজ কর্মস্থলে যোগদানের আহ্বান জানান। এর পরও অনেক থানায় পুলিশ সদস্যরা আসেননি। রাজধানীর কোনো সড়কে দেখা যায়নি ট্রাফিক সদস্যদেরও। গতকালও শিক্ষার্থী, বিএনসিসি, স্কাউট সদস্য, আনসার ও ফায়ার সার্ভিসের সদস্যরা রাস্তায় ট্রাফিক নিয়ন্ত্রণ করেছেন।

এদিন বেলা সাড়ে ১১টার দিকে গুলশান থানায় গিয়ে দেখা যায়, প্রধান ফটকে সেনাসদস্যরা নিরাপত্তার দায়িত্বে রয়েছেন। কয়েকজন পুলিশ সদস্য ও সেবাগ্রহীতাকে দেখা যায়। এর মধ্যে এসআই মামুন মিয়া ইউনিফর্ম পরে ছিলেন। বাকি পুলিশ সদস্যরা ছিলেন সাদা পোশাকে। পরিদর্শক (অপারেশন) আমিনুল ইসলাম বলেন, থানার কার্যক্রম চলমান। তবে সেবাগ্রহীতার সংখ্যা কম। ডিউটি অফিসার এসআই মামুন মিয়া জানান, গতকাল সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত তিনটি জিডি হয়েছে। মতিঝিল থানায়ও সকালে ওসিসহ পুলিশ সদস্যরা আসেন। তবে কার্যক্রম শুরু হয়নি। পল্টন থানার গেট তালাবদ্ধ দেখা যায়। শাহবাগ থানার কার্যক্রমও আংশিক শুরু হয়েছে।

হাতিরঝিল থানার নিরাপত্তার দায়িত্বে রয়েছেন সেনাসদস্যরা। ওসিসহ বেশ কয়েকজন সদস্য থানায় গেছেন। ওসি শাহ মো. আওলাদ হোসেন বলেন, বৃহস্পতিবার সন্ধ্যা থেকে থানার কার্যক্রম শুরু হয়েছে। পুলিশ সদস্যরা ইউনিফর্ম পরে অফিস করছেন। রমনা থানার ওসি উপল বড়ুয়া বলেন, তাঁর থানায় কার্যক্রম শুরু হয়েছে। তবে অনেকেই এখনও এ খবর জানেন না। যে কারণে লোকজন সেভাবে সেবার জন্য আসছেন না। যারা আসছেন, তাদের আইনগত সেবা দেওয়া হচ্ছে। গতকাল বিকেল পর্যন্ত একটি জিডি হয়েছে।

অন্যদিকে ডিবি অফিসে কর্মকর্তা ও সদস্যরা উপস্থিত হলেও পুরোপুরি কার্যক্রম শুরু হয়নি। তার পরও কিছু মানুষ সেবা নিতে ডিবি অফিসের সামনে যাচ্ছেন। শাহবাগ থানা বিএনপির নেতা শুক্কুর আলী বিকেল ৫টায় ডিবি অফিসের গেটে আসেন। তিনি জানান, ১৬ জুলাই তিনি পরীবাগ এলাকা থেকে ডিবির হাতে গ্রেপ্তার হন। মিন্টো রোডে ডিবি কার্যালয়ে নেওয়ার পর তাঁর ব্যবহৃত মোবাইল ফোনটি হেফাজতে নেওয়া হয়। তাঁকে আদালতের মাধ্যমে পাঠানো হয় কারাগারে। গত বুধবার তিনি জামিনে ছাড়া পান। তাই ফোনটি নেওয়ার জন্য তিনি ডিবি কার্যালয়ে এসেছেন। তবে সেনাসদস্যরা তাঁকে পরে ডিবিতে যোগাযোগ করতে বলেছেন।

আন্দোলনে গত ১৬ জুলাই নিউমার্কেট এলাকায় গুলিতে নিহত হন শাহ জাহান (২৬) নামে এক তরুণ। তিনি নিউমার্কেটে ফাস্টফুড ব্যবসায়ী ছিলেন। ছেলে হত্যার বিচার চাইতে গতকাল বিকেলে ডিবি কার্যালয়ের যান শাহজাহানের বাবা ঈমান আলী ও মা আয়েশা বেগম। সেনাসদস্যরা তাদের সংশ্লিষ্ট থানায় অভিযোগ দেওয়ার পরামর্শ দেন। পরে ফিরে যান তারা।

বিজিবির নিরাপত্তায় সীমান্তবর্তী ২১টি থানার কার্যক্রম শুরু
বিজিবির রংপুর ও যশোর রিজিয়নের তত্ত্বাবধানে পুলিশের রংপুর রেঞ্জের সীমান্তবর্তী ১১টি থানা এবং খুলনা রেঞ্জের সীমান্তবর্তী ১০টি থানার স্বাভাবিক কার্যক্রম শুরু হয়েছে। গতকাল বিজিবি সদরদপ্তর এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানায়। বিজিবি জানিয়েছে, সীমান্তবর্তী জনপদে শৃঙ্খলা ফিরিয়ে জনমনে আস্থা বৃদ্ধির লক্ষ্যে বিজিবি থানাগুলোতে নিরাপত্তা জোরদার করেছে। গোয়েন্দা নজরদারি বৃদ্ধি করাসহ থানাগুলোয় মোবাইল ও স্ট্যাটিক টহল পরিচালনা করা হচ্ছে।

বিভিন্ন জেলা, উপজেলায় এখনও বন্ধ থানা
ব্যুরো, অফিস ও প্রতিনিধিদের তথ্য জানায়, ঢাকা, চট্টগ্রাম ছাড়া বিভিন্ন জেলা, উপজেলায় এখনও কোনো থানার স্বাভাবিক কার্যক্রম শুরু করা যায়নি। কর্মস্থলে যোগ দেননি অনেক থানার পুলিশ কর্মকর্তারা। এর মধ্যে ১১ দফা দাবি আদায়ে গতকালও বিভিন্ন জেলায় বিক্ষোভ করেছেন পুলিশ সদস্যরা। খুলনায় বিক্ষোভ করেন কেএমপির সব ইউনিটের অফিসার ও সদস্যরা। যশোরের মনিরামপুরে আইনশৃঙ্খলা রক্ষার্থে সেনাবাহিনীর সহায়তায় আনসার ও ফায়ার সার্ভিস সদস্যরা মাঠে নেমেছেন। পুলিশ এখনও কর্মবিরতিতে রয়েছে। নোয়াখালীর ৯ থানার পুলিশ সদস্য ও ট্রাফিক সদস্যরাও কাজে ফেরেননি। ফরিদপুরে থানা পুলিশের কার্যক্রম শুরু করতে ক্ষতিগ্রস্ত থানাগুলো পরিদর্শন শুরু করেছেন পুলিশ কর্মকর্তারা।-সমকাল

Share

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

     এ ক্যাটাগরীর আরো সংবাদ