আজ ২৩শে আশ্বিন, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ, ৮ই অক্টোবর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ

নির্বাহী আদেশে বিদ্যুতের দাম নির্ধারণ বাতিলের পরামর্শঃস্বচ্ছতা নিশ্চিতের তাগিদ

(আজকের দিনকাল):কোনো ধরনের গণশুনানি ছাড়া সরকারের নির্বাহী আদেশে বিদ্যুৎ-গ্যাসের দাম নির্ধারণ আইন বাতিলের পরামর্শ দিয়েছেন এ খাতের বিশেষজ্ঞরা। তারা বলছেন, এটা একটা কালো আইন। কী কারণে দাম বাড়ানো হচ্ছে, কীভাবে বাড়ানো হচ্ছে, সেটা ভোক্তা জানছে না। এই আইনের মাধ্যমে ভোক্তার অধিকার খর্ব করা হয়েছে। পাশাপাশি বিদ্যুৎ খাতের লুটপাট ও দুর্নীতিকে প্রশ্রয় দেওয়া হয়েছে। এই আইন সংশোধনের মধ্য দিয়ে সদ্য ক্ষমতাচ্যুত সরকার বিচার বিভাগকে নিয়ন্ত্রণ করার চেষ্টা করেছে।

তারা আরও বলছেন, রেগুলেটর হচ্ছে একটি আইনি বডি। সরকার হচ্ছে শাসন বিভাগ। আওয়ামী লীগ সরকার এটা গায়ের জোরে করেছে। এই কারণে বিদ্যুৎ ও জ্বালানি খাতে স্বচ্ছতা নিশ্চিত করতে হলে বর্তমান অন্তর্বর্তীকালীন সরকারকে প্রথমে এই কালো আইন বাতিল করতে হবে; জবাবদিহি নিশ্চিত করতে হবে।

২০২২ সালের ২৮ নভেম্বর বাংলাদেশ এনার্জি রেগুলেটরি কমিশন-বিইআরসি (সংশোধন) আইন, ২০২২-এর খসড়া নীতিগত ও চূড়ান্ত অনুমোদন দেয় মন্ত্রিসভা। পরের মাসে জাতীয় সংসদে এ আইন পাস হয়। সংশোধন করার আগে আইনে বিদ্যুৎ ও জ্বালানির দাম বিইআরসি ৯০ দিন সময় নিয়ে গণশুনানির মাধ্যমে নির্ধারণ করত। সংশোধনের পর সরকারের নির্বাহী আদেশে যে কোনো সময় বিদ্যুৎ ও জ্বালানির দাম নির্ধারণের ক্ষমতা পায়।

জ্বালানি বিশেষজ্ঞ এবং কনজ্যুমারস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ক্যাব) জ্বালানি উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. এম শামসুল আলম বলেন, যে কোনো মূল্য এই আইন বাতিল করতে হবে। সরকারকে (অন্তর্বর্তী) স্বচ্ছতা নিশ্চিত করতে এ কালো আইন বাতিলের কোনো বিকল্প নেই। তিনি বলেন, বিদ্যুৎ উৎপাদন ও বিতরণ কোম্পানিগুলোর সব বোর্ডে সরকারের উচ্চপদস্থ কর্মকর্তারা বসে আছেন। আবার তারাই নির্বাহী আদেশের মাধ্যমে দাম নির্ধারণ করছেন। এই আইন যারা করেছেন, তাদের আইনের আওতায় আনতে হবে। বিদ্যুৎ-জ্বালানির দাম বৃদ্ধির ক্ষেত্রে আগের মতো গণশুনানি করে স্টেকহোল্ডারদের (অংশীজন) সঙ্গে কথা বলে রেগুলেটরি সংস্থার মাধ্যমে বাড়ানোর পরামর্শ দেন তিনি।

সর্বশেষ গত ১৯ ফেব্রুয়ারি বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ মন্ত্রণালয় থেকে নির্বাহী আদেশে বিদ্যুতের নতুন দাম নির্ধারণ করে প্রজ্ঞাপন জারি করা হয়। এ সময় গ্রাহক পর্যায়ে প্রতি ইউনিটের দাম গড়ে সাড়ে ৮ শতাংশ বাড়ানো হয়। ওই সময় সরকারের পক্ষ থেকে বলা হয়, ভর্তুকি কমাতে এই দাম বাড়ানো হচ্ছে। এর আগে ২০২৩ সালে গ্রাহক পর্যায়ে বিদ্যুতের দাম বাড়ানো হয় তিন দফা। ওই বছরের ১২ ও ৩১ জানুয়ারি এবং ২৮ ফেব্রুয়ারি বিদ্যুতের দাম বাড়ানো হয় মোট ১৫ শতাংশ। নির্বাহী আদেশ ছাড়া গত দেড় দশকে এ নিয়ে পাইকারি পর্যায়ে ১২ বার ও খুচরায় ১৪ বার বিদ্যুতের দাম বাড়ানো হয়েছে।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) ভূতত্ত্ব বিভাগের সাবেক চেয়ারম্যান ও জ্বালানি বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক ড. বদরূল ইমাম বলেন, এই ধরনের আইন কখনো থাকা উচিত নয়। বিইআরসিতে গণশুনানি করে যে প্রক্রিয়ায় দাম নির্ধারণ করা হতো, সেটাই ঠিক ছিল। এতে জনগণের কাছে সরকারের জবাবদিহি নিশ্চিত হতো। গণশুনানি বাদ দিয়ে নির্বাহী আদেশে দাম বাড়ানো প্রক্রিয়া খারাপ একটা উদাহরণ। এতে দুর্নীতি ও অনিয়ম উৎসাহিত হবে।

বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) সাবেক অধ্যাপক, জ্বালানি ও টেকসই উন্নয়ন বিশেষজ্ঞ ড. ইজাজ হোসেন বলেন, বিভিন্ন বিষয়ে রিফর্ম (সংস্কার) করার জন্যই সরকারের পরিবর্তন। বিইআরসিতে পাশ কাটিয়ে নির্বাহী আদেশে বিদ্যুতের দাম বাড়ানোর আইন এখনই বাতিল করা প্রয়োজন। কারণ আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে যেসব বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণ করা হয়েছে, তার কোনোটিই ব্যয়ের হিসাবে স্বচ্ছতা নিশ্চিত করা হয়নি। লুটপাট হয়েছে, দুর্নীতি হয়েছে।

তিনি বলেন, ভর্তুকির কথা বলা হয়। ভর্তুকির হিসাবেও গরমিল রয়েছে। আর ভর্তুকি কী পরিমাণ লাগবে, সেটা তো বিইআরসিতে গণশুনানি হলেও বেরিয়ে আসবে। কিন্তু তারা বিইআরসিতে পঙ্গু করে, আইন সংশোধন করে নির্বাহী ক্ষমতা ব্যবহার করেছে এই খাতে দুর্নীতি ঢাকতে। নির্বাহী আদেশে সরকার একপক্ষীয় মূল্য ঠিক করেছে, যা সুশাসনের অন্তরায়।-কালবেলা

Share

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

     এ ক্যাটাগরীর আরো সংবাদ