আজ ২৩শে আশ্বিন, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ, ৮ই অক্টোবর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ

হাইকোর্টের পূর্ণাঙ্গ আদেশ:বেক্সিমকো গ্রুপের সম্পত্তি দেখভালে রিসিভার নিয়োগের নির্দেশ

(আজকের দিনকাল):বেক্সিমকো গ্রুপের সব সম্পত্তি সংযুক্ত করে তা ব্যবস্থাপনায় ৬ মাসের জন্য একজন রিসিভার (সম্পত্তির তত্ত্বাবধায়ক) নিয়োগ দিতে বাংলাদেশ ব্যাংককে নির্দেশ দিয়েছেন হাইকোর্ট। হাইকোর্টের পূর্ণাঙ্গ আদেশটি সম্প্রতি প্রকাশিত হয়েছে। আদেশে বিভিন্ন ব্যাংক থেকে বেক্সিমকো ফার্মাসিউটিক্যালস লিমিটেডের প্রতিষ্ঠাতা সালমান এফ রহমানের নেওয়া অর্থ উদ্ধার করতে ও বিদেশে পাঠানো অর্থ দেশে ফিরিয়ে আনতে বাংলাদেশ ব্যাংককে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। এ বিষয়ে পদক্ষেপ সম্পর্কে বাংলাদেশ ব্যাংককে ৪ সপ্তাহের মধ্যে কমপ্লায়েন্স (প্রতিবেদন) দিতে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।

সালমান এফ রহমান বেক্সিমকো গ্র“পের ভাইস চেয়ারম্যান ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বেসরকারি শিল্প ও বিনিয়োগবিষয়ক উপদেষ্টা ছিলেন। এক রিটের প্রাথমিক শুনানি নিয়ে বিচারপতি একেএম আসাদুজ্জামান ও বিচারপতি মুহম্মদ মাহবুব-উল ইসলামের সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট বেঞ্চ ৫ সেপ্টেম্বর রুলসহ আদেশ দেন।

গত ২৫ বছরে বেক্সিমকো ফার্মাসিউটিক্যালস লিমিটেডসহ সংশ্লিষ্ট কোম্পানির অন্য সব ব্যবসার ক্ষেত্রে পরিশোধের পর ঋণ মওকুফ বিষয়ে তথ্যাদি সরবরাহ করাসহ কয়েকটি বিষয় নিয়ে সুপ্রিমকোর্টের জ্যেষ্ঠ আইনজীবী মাসুদ আর সোবহান আবেদনকারী হয়ে ৪ সেপ্টেম্বর ওই রিটটি করেন। আইনজীবী মাসুদ রেজা সোবহান বৃহস্পতিবার বলেন, হাইকোর্টের পূর্ণাঙ্গ আদেশটি ১৬ সেপ্টেম্বর হাতে পেয়েছেন তিনি।

আদালতের আদেশ থেকে জানা যায়, বেক্সিমকো ফার্মাসিউটিক্যালস লিমিটেড এবং সালমান এফ রহমানের বেক্সিমকো গ্রুপ অব কোম্পানিজের অন্য সব ব্যবসাসংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানের কী পরিমাণ ঋণ অপরিশোধিত আছে, ঋণের বর্তমান অবস্থা ও রিপেমেন্টের (পরিশোধ) তথ্য দিতে এবং বেক্সিমকো গ্র“পের সব সম্পত্তি সংযুক্ত (অ্যাটাচ) করে সেসব ব্যবস্থাপনায় রিসিভার (সম্পত্তির তত্ত্বাবধায়ক) নিয়োগ বিষয়ে রুল দেওয়া হয়েছে। ৪ সপ্তাহের মধ্যে রুলের জবাব দিতে বলা হয়েছে।

আদালতে ৫ সেপ্টেম্বর রিটের পক্ষে জ্যেষ্ঠ আইনজীবী মাসুদ আর সোবহান নিজেই শুনানি করেন। সঙ্গে ছিলেন আইনজীবী ফাতেমা এস চৌধুরী। রাষ্ট্রপক্ষে সেদিন শুনানিতে ছিলেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল রেদওয়ান আহমেদ রানজিব ও সহকারী অ্যাটর্নি জেনারেল মুজাহিদুল ইসলাম শাহীন।

এদিকে বুধবার এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে সিআইডি জানিয়েছে, বেক্সিমকো গ্রুপের মালিকানাধীন ১৭টি প্রতিষ্ঠানে ২০২১ থেকে ২০২৪ সাল পর্যন্ত বিভিন্ন সময়ে মতিঝিল জনতা ব্যাংকের লোকাল শাখা থেকে ৯৩টি এলসি বা বিক্রয় চুক্তির মাধ্যমে পণ্য রপ্তানি করে নির্ধারিত সময় পার হওয়ার পরও রপ্তানিমূল্যের প্রায় ৮৩ মিলিয়ন মার্কিন ডলার দেশে না এনে বিদেশে পাচার করেছে।

এছাড়াও সালমান ও তার স্বার্থসংশ্লিষ্ট কোম্পানি বেক্সিমকো গ্রুপের বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের নামে-বেনামে প্রায় ৩৩ হাজার ৪৭০ কোটি টাকা ঋণ নিয়ে বিদেশে পাচার এবং অন্যান্য আর্থিক অনিয়মের অভিযোগে পৃথক অনুসন্ধান পরিচালনা করছে সিআইডি।

সিআইডির বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, দেশের বিদ্যমান আইন অনুযায়ী, পণ্য রপ্তানির পর রপ্তানিমূল্য ৪ মাসের মধ্যে ফেরত আনার বাধ্যবাধকতা আছে। এটা জানার পরও রপ্তানিমূল্য দেশে না এনে সালমান এফ রহমান রাজনৈতিক প্রভাব খাটিয়ে এ অর্থ বিদেশে পাচার করেছেন। বিদেশে রপ্তানি হওয়া পণ্যের বেশিরভাগই বেক্সিমকো গ্র“পের মালিক সালমান এফ রহমানের ছেলে আহমেদ শায়ান ফজলুর রহমান এবং এ এসএফ রহমানের ছেলে আহমেদ শাহরিয়ার রহমানের যৌথ মালিকানাধীন আর আর গ্লোবাল ট্রেডিং এফজেডই-এর শারজাহ, সংযুক্ত আরব আমিরাত ও সৌদি আরবের ঠিকানায় রপ্তানি করা হয়েছে। সালমান এফ রহমান ও তার সহযোগীরা ব্যক্তিগত প্রভাব খাটিয়ে সংঘবদ্ধ অপরাধী চক্রের সহযোগিতায় বিদেশে অর্থ পাচার করেছেন। এছাড়া জার্মানি, নেদারল্যান্ডস, যুক্তরাজ্য, তুরস্ক, শ্রীলংকাসহ বিভিন্ন দেশে পণ্য রপ্তানির মাধ্যমে রপ্তানিমূল্য দেশে না এনে আসামিরা পরষ্পর যোগসাজশে অর্থ পাচার করেছেন বলে এতে উল্লেখ করা হয়।

এছাড়া জনতা ব্যাংকের এক শাখা থেকে ৩২টি প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে ঋণের নামে বের করেছে ২৭ হাজার কোটি টাকা। এর মধ্যে ১৮ হাজার কোটি টাকাই খেলাপি হয়ে গেছে। -যুগান্তর

Share

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

     এ ক্যাটাগরীর আরো সংবাদ