আজ ১লা চৈত্র, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ, ১৫ই মার্চ, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ

কুষ্টিয়া-২ আসনের সাবেক এমপি কামারুল আরেফিনের সন্ত্রাসী কার্যকলাপ: এক অনুসন্ধানী প্রতিবেদন

(আজকের দিনকাল):কুষ্টিয়া-২ (মিরপুর-ভেড়ামারা) আসনের আওয়ামী লীগের সাবেক সংসদ সদস্য কামারুল আরেফিনের বিরুদ্ধে নানা অপরাধের অভিযোগ ওঠার পর থেকেই তিনি পলাতক অবস্থায় রয়েছেন। তার সময়কালে আওয়ামী লীগের রাজনৈতিক ক্ষমতার অপব্যবহার ও সন্ত্রাসী বাহিনী দিয়ে ক্ষমতার প্রদর্শন তার জনপ্রতিনিধিত্বের ভাবমূর্তিকে প্রশ্নবিদ্ধ করেছে। তার বিরুদ্ধে একাধিক হত্যা মামলা চলমান রয়েছে। যদিও এতদিন এসব বিষয়ে কেউ প্রকাশ্যে কথা বলার সাহস করেননি, তবে এখন এলাকাবাসী মুখ খুলতে শুরু করেছে।

ঘটনাক্রমঃ

প্রথমত, এলাকাবাসীর বক্তব্য অনুযায়ী, কামারুল আরেফিন সন্ত্রাসী বাহিনী দিয়ে তার ক্ষমতা ধরে রেখেছিলেন। নির্বাচনী প্রচারণা থেকে শুরু করে নানা অনুষ্ঠানে ক্ষমতা প্রদর্শন করতেন। এর অংশ হিসেবে, ভিন্ন মতাবলম্বীদের উপর বিভিন্ন ধরণের হুমকি প্রদান ও সহিংসতার ঘটনা ঘটিয়ে থাকেন। এ বিষয়গুলো দীর্ঘদিন ধরে এলাকায় আতঙ্কের পরিবেশ তৈরি করেছিলো।

মূল অভিযোগসমূহঃ

১. হত্যা মামলা ও অপরাধমূলক কার্যকলাপ: কামারুল আরেফিনের বিরুদ্ধে একাধিক হত্যা মামলা রয়েছে।২০০৯ সালে জমিজমা সংক্রান্ত বিরোধের জের ধরে সদরপুর ইউনিয়নের চৌধুরীপাড়া গ্রামের আকবর চৌধুরী হত্যা মামলার এজাহার ভুক্ত আসামী কামারুল আরেফিন,মামলাটি আদালতে বিচারাধীন। কিন্তু আওয়ামীলীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক হানিফের আস্থাভাজন হওয়ার ক্ষমতার অপব্যবহার করে পুলিশ প্রশাসনকে ম্যানেজ করে হত্যা মামলার চার্জশিট থেকে নাম বাদ করান। কিন্তু মামলার বাদী তোফাজ্জল হোসেন চার্জশিটের বিরুদ্ধে নারাজি পিটিশন আদালতে দাখিল করেন।
অপর দিকে, আমলা বাজারে যুবলীগ কর্মী শাহাবুদ্দিন আহমেদ ওরফে শাহিন খুনের ঘটনায় করা হত্যা মামলার প্রধান আসামি কামারুল আরেফিন থানায় গিয়ে আত্মসমর্পণ করে। এই দিন বিকেলেই তাঁকে কুষ্টিয়া আদালতের মাধ্যমে জেলা কারাগারে পাঠান।

১৮ জুন ২০১৭ সালে আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে মিরপুর উপজেলার আমলা বাজারে আওয়ামী লীগের দুপক্ষের সংঘর্ষে যুবলীগের কর্মী শাহাবুদ্দিন আহমেদ নিহত হন। এতে আরও তিনজন গুরুতর আহত হয়ে ঢাকাসহ বিভিন্ন হাসপাতালে চিকিৎসা নেন। কামারুল আরেফিন এবং উপজেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ও আমলা ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান আনোয়ারুল ইসলামের কর্মী-সমর্থকদের মধ্যে ওই সংঘর্ষ হয়।

আনোয়ারুল ইসলাম বাদী হয়ে মিরপুর থানায় ৪০ জনের নাম উল্লেখ করে হত্যা ও বোমা বিস্ফোরণের অভিযোগে মামলা করেন। এতে অজ্ঞাত আরও ১৫-২০ জনকে আসামি করা হয়েছে। মামলায় কামারুল আরেফিন প্রধান আসামি।

মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা পরিদর্শক আজিজুর রহমানকে দিয়ে চাপ সৃষ্টি করে মামলা তুলে নিতে।

এছাড়াও সন্ত্রাস, টেন্ডারবাজী, দখলদারি, চাঁদাবাজিসহ অসংখ্য অপকর্মের অভিযোগ রয়েছে তার বিরুদ্ধে।

প্রত্যক্ষদর্শীদের মতে, তার সন্ত্রাসী বাহিনী প্রভাবশালী স্থানীয় বাসিন্দাদের উপর নির্যাতন চালিয়েছে এবং তাদের সম্পত্তি দখল করেছে।

২. রাজনৈতিক ক্ষমতার অপব্যবহার: একাধিক সাক্ষী জানিয়েছেন, কামারুল আরেফিন রাজনৈতিক ক্ষমতার অপব্যবহার করে নিজস্ব স্বার্থে কাজ করেছেন। তার বিপক্ষের মতবিরোধীদের উপর সন্ত্রাসী আক্রমণের মাধ্যমে রাজনৈতিক দমনের চেষ্টা চালানো হয়েছে।

৩. সন্ত্রাসী বাহিনীর অপব্যবহার: বিশেষ সূত্রে জানা গেছে, কামারুল আরেফিনের অধীনস্থ সন্ত্রাসী বাহিনী বিভিন্ন ধরণের অপরাধমূলক কর্মকাণ্ডে সম্পৃক্ত ছিল। এতে সাধারণ মানুষের মনে ভীতির সৃষ্টি হয়েছিলো।

কামারুল আরেফিনের অধীনস্থ সন্ত্রাসী বাহিনী পতন শুরু যেভাবেঃ

০৭ ডিসেম্বর, ২০১৪ মিরপুরে পুলিশের সাথে বন্দুকযুদ্ধে চরমপন্থী সংগঠন পূর্ববাংলা কমিউনিস্ট পার্টির (এমএল লাল পতাকা) আঞ্চলিক নেতা এনামূল হক (৩৫) নিহত হয়। ভোর রাত সোয়া ৩টার দিকে মিরপুর উপজেলার ভাঙা বটতলায় জনৈক শহিদুলের ইটভাটার কাছে এ বন্দুকযুদ্ধের ঘটনা ঘটে। পুলিশ ঘটনাস্থল থেকে অস্ত্র ও গুলি উদ্ধার করে। তৎকালিক
মিরপুর থানার ওসি কাজি জালাল উদ্দিন জানান, রাত ৩টার দিকে কতিপয় চরমপন্থী শহিদুলের ইটভাটায় চাঁদা নিতে আসে।

এ খবরে মিরপুর থানা ও জেলা গোয়েন্দা পুলিশের একটি যৌথ দল আগে থেকেই সেখানে ওত পেতে ছিল। সাত-আটজন চরমপন্থী সেখানে পৌছালে পুলিশ তাদেরকে ঘিরে নেয়। উপস্থিতি টের পেয়ে এ সময় তারা পুলিশকে লক্ষ্য করে গুলি চালায়। পুলিশও পাল্টা গুলি চালায়।

আধ ঘণ্টাব্যাপী এ বন্দুকযুদ্ধের এক পর্যায়ে চরমপন্থীরা পিছু হটে পালিয়ে যায়। পুলিশ ঘটনাস্থলে তল্লাশি করে গুলিবিদ্ধ এনামুলকে ও একটি শাটার গান, চার রাউন্ড বন্দুকের গুলি, পাঁচ রাউন্ড গুলির খোসা উদ্ধার করে। পরে হাসপাতালে নিলে ডাক্তার এনামূল হককে মৃত ঘোষণা করে। এ ঘটনায় ডিবি পুলিশের এসআই মাসুদসহ দুই পুলিশ সদস্য আহত হয়।

কুষ্টিয়া গোয়েন্দা পুলিশের ওসি পারভেজ ইসলাম জানান, নিহত চরমপন্থী নেতা এনামূল হক মিরপুরের মালিহাদ ইউনিয়নের আসাননগরের রবিউল ইসলামের ছেলে। তার বিরুদ্ধে কুষ্টিয়া, মেহেরপুর, চুয়াডাঙ্গা ও আলমডাঙ্গার বিভিন্ন থানায় অন্তত ৭টি হত্যাসহ মোট ২৪ মামলা রয়েছে। এর মধ্যে দুটি মামলায় সে ২৪ বছরের সাজাপ্রাপ্ত পলাতক আসামি ছিল।

১৫ আগষ্ট ভেড়ামারায় চরমপন্থি সন্ত্রাসীদের গুলিতে কলেজ শিক্ষক বান্দা ফাত্তাহ মোহন নিহত হয়। গুলিবিদ্ধ ভেড়ামারা উপজেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সম্পাদক মেহেরুল আলম পরে ঢাকায় চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যায়। তার মৃত্যুর পর থেকে ভেড়ামারা উপজেলায় মাহবুবুল আলম হানিফের রাজনীতিতে একক আধিপত্য চলে আসে। কারন ঐ সময় চরমপন্থি শীর্ষ নেতা আনোয়ার ছিলেন হানিফের নিজস্ব বাহিনী। আর হানিফের সহযোগী সন্ত্রাসী ছিলেন কামারুল আরেফিন। এদের দুইজনকে ভেড়ামারায় নেতৃত্ব দিতেন রানা ও মাদক ব্যবসায়ী মুসফেক। ১৫ আগষ্টের পূর্বে নেতা মেহেরুল মারার জন্য চরমপন্থি শীর্ষ নেতা আনোয়ার এর নেতৃত্বে সন্ত্রাসী দল অস্ত্র শস্ত্র নিয়ে রাতে মাদক ব্যবসায়ী মুসফেক এর বাড়ীতে সেলটার নেয়। এদিন মেহেরুলকে হত্যা করার দায়িত্বে নেতৃত্ব দেন চরমপন্থি মোতালেব, সেকেন্ড ইন কমান্ডার ছিলেন দৌলতপুর উপজেলার চরমপন্থি সোনা। মেহেরুল বাসা থেকে বের হলে পিছু নেন চরমপন্থির সোর্স। খবর পেয়ে সন্ত্রাসী দল অস্ত্র শস্ত্র নিয়ে বেরিয়ে পড়ে কিন্তু হঠাৎ গাড়ী পরিবর্তন করে মাইক্রোবাসে করে ঢাকা চলে যায় নেতা মেহেরুল। সে দিন মেহেরুলকে হত্যা চেষ্টা পরিকল্পনা ব্যর্থ হয় সন্ত্রাসীদের । ঢাকা থেকে শীর্ষ নেতা আনোয়ার ফোনে মোতালেবকে নির্দেশে দিলে মাদক ব্যবসায়ী মুসফেকের বাড়ীতে অস্ত্র রেখে চলে যায় সন্ত্রাসীরা।
পানি উন্নয়ন বোর্ড টেন্ডারের ১০% হারে মোটা অংকের নগদ টাকা পায় চরমপন্থির নেতা আনোয়ার। টাকা ভাগাভাগি নিয়ে আনোয়ার ও কামারুল আরেফিনের চরম দ্বন্দ্ব সৃষ্টি হয়। আরেক নেতা নওদা আজমপুর গ্রামের আরিফ মিমাংসার চেষ্টা করেন ঢাকা মিরপুরে ১০ নম্বারে। কোন সুরাহা না হলে বিষয়টা হানিফের কাছে চলে যায়। কামারুল আরেফিন নেতা হানিফের বাসায় গিয়ে কোটি টাকা দেওয়ার কথা স্বীকার করে আনোয়ারকে মারার পরিকল্পনা করে। তা না হলে বিপদ হবে দুজনের। যে পরিকল্পনা সেই কাজ, প্রশাসনকে দিয়ে ধরিয়ে দিলেন চরমপন্থির শীর্ষ নেতা আনোয়ার ওরফে কালা আনোয়ারকে। বন্দুকযুদ্ধে নিহত হলো আনোয়ার, ফাঁকা হয়ে গেল পথের কাটা। কামারুল আরেফিন বনে গেলেন মিরপুরের শীর্ষ চরমপন্থির নেতা। হানিফের আস্থাভাজন হওয়াতে একের পর এক মিরপুর উপজেলা আওয়ামী লীগের রাজনৈতিক পদে আসিন হলেন। পর্যায়ক্রমে সদরপুর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান, উপজেলা চেয়ারম্যান ও কুষ্টিয়া -২ (মিরপুর- ভেড়ামারা)আসনের এমপি হলেন।

কামারুল বাহিনীর সদস্যদের ১ কোটি টাকার ভাগ নিয়ে নিজেদের মধ্যে দ্বন্দ্বের বলি হয়ে যেসব সন্ত্রাসীরা কতিথ বন্দুকযুদ্ধে যারা নিহত হনঃ-১.আনোয়ার ওরফে কালা আনোয়ার মালিথা,২.মকিম মালিথা,৩.পলাশ মালিথা, ৪. গত ১ আগষ্ট মিরপুরের সদরপুরে সন্ত্রাসীরা গুলি করে হত্যা করে যুবলীগ নেতা টিপু মালিথাকে,৫. এনামুল হক,৬.মোতালেব,৭.সম্রাট, ৮.কাকিলাদহ গ্রামের চরমপন্থির শীর্ষ নেতা আবু তালেব এর ভাই আব্বাস ,৯.চকের সিদ্দিক বাহিনীর প্রধান সিদ্দিক ।

এদিকে,চরমপন্থি নেতা চকের ছইরদ্দীনের ছেলে আসান প্রথমে পিস্তল সহ পুলিশ আটক করে। কুষ্টিয়া আদালতে সোপর্দ করে পুলিশ । জেলা কারাগার থেকে জামিনে মুক্ত হয়ে । কামারুল আরেফিনের সহযোগী হিসেবে আসান ও নওদাকুর্শা ক্যানেল পাড়া গ্রামের চরমপন্থি নেতা লতিফ সহ পুনুরায় তাসের রাজত্ব কায়েম করেন। আসানের চাচাতো দুলাভাই হওয়ার সুবাদে অস্ত্রের দায়িত্ব পান লতিফ। আসানের সঙ্গে দ্বন্দ্বে প্রায় ৩০ টি আগ্নেয়াস্ত্র নিয়ে মাঠ থেকে পালিয়ে যায় লতিফ। পরে লতিফ কৌশলে আসানকে মেরে গুম করে ফেলে। আজও তার লাশ উদ্ধার করতে পারেনি মিরপুর থানা পুলিশ। আসান হত্যা মামলায় ফেসে যান,বাঁশ বাড়ীয়ার কোরবান আলী,চকের মারফত আলী। কারন হিসেবে জানা যায় মারফত আলী আসানের সহযোগী সদস্য ছিলেন। দুজন জামিনে আছেন।মামলাটি আদালতে বিচারাধীন। অস্ত্র নিয়ে যাওয়ার পর থেকে লতিফ আত্তগোপনে চলে যান। বর্তমানে ঢাকা সাভার এলাকার আশে পাশে ভাড়াটিয়া হিসেবে বসবাস করছেন বলে জানা গেছে। মাঝে মধ্যে এলাকায় রাতে দেখা গেলেও দিনে তাকে দেখা যাই না বলে এলাকাবাসীরা জানিয়েছেন।
কামারুলের আরেক সহযোগী পার্শ্ববর্তী দৌলতপুর উপজেলার ইউসুফপুর গ্রামের খোকা সর্দারের ছেলে সোনা সর্দার (৪০) কে আড়িয়া ইউনিয়নের লালনগর বাজারে প্রতিপক্ষ সন্ত্রাসীরা গুলি করে হত্যা করে।

অপরদিকে,মিরপুরে পুলিশের সাথে বন্দুকযুদ্ধে পূর্ব বাংলা কমিউনিস্ট পার্টি এম এল এম জনযুদ্ধের নেতা পলাশ মালিথা নিহত।
রাত দেড়টার দিকে কুষ্টিয়া-মেহেরপুর সড়কের মিরপুরের ভাঙ্গা বটতৈলে এই বন্দুকযুদ্ধের ঘটনা ঘটে।

পুলিশ জানায়, চরমপন্থী সন্ত্রাসীরা সড়কে গাছ ফেলে ডাকাতির চেষ্টা চালাচ্ছে এমন সংবাদ পেয়ে পুলিশ অভিযানে গেলে দু’ পক্ষের আধঘণ্টার বন্দুকযুদ্ধ হয়। সে সময় পলাশ মালিথা গুলিবিদ্ধ হয়। হাসপাতালে নেয়া হলে চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন।

পলাশের বিরুদ্ধে ৪টি হত্যা মামলা রয়েছে। অভিযানে পুলিশ ১ টি শার্টারগান ও ৩ রাউন্ড গুলি উদ্ধার করেছে।

কামারুল আরেফিন ওরফে ফাটাকেষ্টর আন্ডারওয়ার্ল্ডের সেকেন্ড ইন কমান্ডার হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন চরমপন্থী সন্ত্রাসী আশরাফুল। আর সহযোগী হিসেবে ছিলেন সন্ত্রাসী এনামুল। দুজন এক সঙ্গে জেল থেকে জামিনে মুক্তি পেয়ে কামারুল আরেফিন ওরফে ফাটাকেষ্টর নেতৃত্ব যান। সঙ্গে পান আরেক চরমপন্থী সন্ত্রাসী একাধিক মামলার আসামি কচুবাড়ী বাজারের রহমতের ছেলে মোসলেম। সন্ত্রাসী মোসলেম এর পিতা রহমত ছিলেন সদরপুর ইউনিয়নের মেহেরনগর গ্রামের বাসীন্দা। তৎকালীন চরমপন্থী শীর্ষ সন্ত্রাসী সিরাজ বাহিনীর সদস্য। সিরাজ বাহিনীর হাতে গুলিতে নিহত হন একই গ্রামে আইনাল ও পাগলা গ্রামের মারফত। এই ঘটনার পর প্রতিপক্ষরা রহমতের বাড়ী ভেঙ্গে দেয়। উঠে আসেন খয়েরপুর ফার্মে রোডে। খয়েরপুরের অহিদুলের সাথে মোসলেম এর সুসম্পর্ক গড়ে উঠে। এলাকায় ত্রাসের রাজত্ব কায়েম করেন। সেই সুবাদে রাজনীতিতে যুবলীগ নেতা বনে যান আশরাফুল। অবৈধ ভাবে গড়ে তুলেন সাম্রাজ্য।

আশরাফুল
এদের দলে যোগদেন নওদা পাড়ার সন্ত্রাসী জিয়া,

জিয়া

চৌধুরী পাড়ার সন্ত্রাসী শাহিন,শ্রীরামপুরের সন্ত্রাসী
আব্বাস,

আব্বাস

মিটন গ্রামের উজ্জ্বল ওরফে খ্যাপা শাহ,

উজ্জ্বল কুর্শা গ্রামের চরমপন্থী সন্ত্রাসী কালু বাহিনীর প্রধান কালু ও সেকেন্ড কমান্ডার আজগার, ইশালমারী গ্রামের সন্ত্রাসী জহুরুল,মালিহাদ গ্রামের আকুব্বার ওরফে তুতা।

বাদল

কচুবাড়ীয় গ্রামের আইনুল হক এর ছেলে রাশেদুল হক ওরফে বাদল প্রমুখ।
সর্বশেষ ইউপি নির্বাচনে নৌকার বিরোধীতা করে চেয়ারম্যান পদে জয়ী হওয়ার পর আরো বেপরোয়া হয়ে উঠেছেন।

বেশ কিছু দিন পরে কামারুল আরেফিন সাথে যুবলীগের বহিষ্কৃত সাধারণ সম্পাদক ও সদরপুর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান আশরাফুলের সাথে দ্বন্দ্ব সৃষ্টি হলে কৌশলে গত ২০ জুলাই ২০২২ সালে প্রশাসনকে দিয়ে চেয়ারম্যান আশরাফুল ইসলামের মালিকানাধীন ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান আশরাফুল টেড্রার্সে ও সাগরখালী এগ্রো ইন্ডাস্ট্রিজ নামে প্রতিষ্ঠানে পরিদর্শন করে নকল সিগারেট তৈরির কারখানার সন্ধান পায়। অভিযানের সময় কারখানায় স্থাপিত সিগারেট তৈরির মেশিন ও ব্রিটিশ আমেরিকান টোব্যাকো কোম্পানির ডারবি এবং বেনসন নামের সিগারেটের বিপুল সংখ্যক মোড়ক, তিন বস্তা তৈরিকৃত সিগারেট শলাকা ও সিগারেট তৈরির সংশ্লিষ্ট নমুনার আলামত পায়। র‌্যাব ও পুলিশ এবং কাস্টমসের একটি দল আশরাফুল চেয়ারম্যানের আন্ডারওয়ার্ল্ড কু- কর্মের সন্ধান পায়।
এ সময় ফেনসিডিল, মদ, সরকারি চাল, টিসিবির তেল-ডালসহ নকল পণ্য তৈরির মেশিনপত্র জব্দ করা হয়। পরে কারখানাটি সিলগালা করে দেওয়া হয়।

এ ঘটনায় কুষ্টিয়া কাস্টমসের সহকারী রাজস্ব কর্মকর্তা মোহাম্মদ আফজাল বাদী হয়ে মিরপুর থানায় একটি মামলা করে।
তাদের সঙ্গে র‌্যাব ও পুলিশের একটি দল সহযোগিতা করে। অভিযানের খবর পেয়ে পালিয়ে যায় চেয়ারম্যানসহ সেখানকার কর্মচারীরা।

অভিযানের সময় উপস্থিত ছিলেন পুলিশের এমন একজন কর্মকর্তা বলেন,‘ সদর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান যুবলীগ নেতা আশরাফুল ইসলাম সর্বশেষ ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে বিদ্রোহী প্রার্থী হিসেবে জয়ী হন। ঠিকাদারি ব্যবসা করেন তিনি।

এর আড়ালে সিগারেট তৈরির জন্য সদরপুর এলাকায় মাঠের মধ্যে গোডাউন তৈরি করেন। চারিদিকে প্রচীরবেষ্টিত এ কারখানায় বাইরের লোকজনের তেমন কোন নজর ছিলো না। এছাড়া আশরাফুল সন্ত্রাসী প্রকৃতির লোক হওয়ায় ভয়ে কেউ এদিকে আসত না।

এর থেকে কামারুল আরেফিন সাথে যুবলীগের বহিষ্কৃত সাধারণ সম্পাদক ও চেয়ারম্যান আশরাফুল ইসলামের দ্বন্দ্বে সৃষ্টি হয়। নিজেকে বাঁচাতে রাজনৈতিক দল পরিবর্তন করে জাসদ ইনু গ্রুপে যোগদান দেন। কামারুল আরেফিন দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে সতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে ইনুকে পরাজিত করে নির্বাচিত হলে আশরাফুল, মোসলেম ও নিমতলার ইমরুলকে মৃত্যু দন্ড ঘোষণা করেন। সেই সঙ্গে ১ লক্ষ টাকা পুরুষকারের ঘোষণা দেন।

প্রভাব এবং বর্তমান পরিস্থিতি

কামারুল ২০১১ সালে সদরপুর ইউনিয়ন থেকে নির্বাচন করে চেয়ারম্যান নির্বাচিত হন। কিন্তু সরকারের গোয়েন্দা সংস্থার প্রতিবেদনে উঠে আসে বাংলাদেশে সন্ত্রাসী চেয়ারম্যানদের তালিকা নাম। যা প্রথম সারির জাতীয় দৈনিক পত্রিকায় ছাপা হয়। এরপর আর পিছন ফিরে তাকাতে হয়নি। ২০১৪ সালে ইউপি চেয়ারম্যানের পদ ছেড়ে মিরপুর উপজেলা চেয়ারম্যান পদে নির্বাচন করে জয়ী হন। ২০১৮ সালে এসেও একই পদে জয়ী হন তিনি। তিনি বিভিন্ন সময়ে মিরপুর উপজেলা আওয়ামী লীগ ও কুষ্টিয়া জেলা আওয়ামী লীগের বিভিন্ন পদে দায়িত্ব পালন করেন। দ্বাদশ জাতীয় সংসদের নির্বাচনে অংশ নিতে কুষ্টিয়ার মিরপুর উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান কামারুল আরেফিন পদত্যাগ করেছিলেন। গত ৭ জানুয়ারি দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে স্বতন্ত্র থেকে কুষ্টিয়া-২ আসনে ইনুকে হারিয়ে সংসদ সদস্য হয়েছিলেন কামারুল আরেফিন।

এদিকে তার দেশত্যাগের বিষয়টিতে ক্ষোভ জানিয়েছেন কুষ্টিয়ার বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষ। তারা বলছেন, সরকার পতনের পর কামারুল আরেফিন দৌলতপুর সীমান্ত দিয়ে অবৈধভাবে তার কয়েকজন সহযোগীসহ ভারতে পালিয়ে যান। তারা পালিয়ে যাওয়ায় প্রশাসনের ভূমিকা প্রশ্নবিদ্ধ হচ্ছে। হত্যা, সন্ত্রাস, টেন্ডারবাজী, দখলদারি, চাঁদাবাজিসহ অসংখ্য অপকর্মের অভিযোগ রয়েছে তার বিরুদ্ধে। ইন্টারপোলের মাধ্যমে তাকে ও তার সহযোগীদের দেশে এনে বিচারের মুখোমুখি করার দাবি জানাচ্ছি।

ছাত্র-জনতার আন্দোলনে ৫ আগস্ট সরকার পতনের পর কুষ্টিয়া-২ (মিরপুর-ভেড়ামারা) আসনের সাবেক সংসদ সদস্য ও মিরপুর উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক কামারুল আরেফিন অবৈধভাবে ভারতে পালিয়ে যান।

এরপর তাকে কলকাতার মারকুইস স্ট্রিটের একটি ফার্মেসিতে দেখা গেছে। গত (১৩ অক্টোবর) রাত থেকে এমন একটি ভিডিও ও বেশকিছু ছবি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়ে।

এদিকে তার দেশত্যাগের বিষয়টিতে ক্ষোভ জানিয়েছেন কুষ্টিয়ার বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষ। তারা বলছেন, সরকার পতনের পর কামারুল আরেফিন দৌলতপুর সীমান্ত দিয়ে অবৈধভাবে তার কয়েকজন সহযোগীসহ ভারতে পালিয়ে যান। তারা পালিয়ে যাওয়ায় প্রশাসনের ভূমিকা প্রশ্নবিদ্ধ হচ্ছে। হত্যা, সন্ত্রাস, টেন্ডারবাজী, দখলদারি, চাঁদাবাজিসহ অসংখ্য অপকর্মের অভিযোগ রয়েছে তার বিরুদ্ধে। ইন্টারপোলের মাধ্যমে তাকে ও তার সহযোগীদের দেশে এনে বিচারের মুখোমুখি করার দাবি জানাচ্ছি।

স্থানীয়দের অভিযোগ, কুষ্টিয়া-২ (মিরপুর-ভেড়ামারা) আসনের সাবেক এমপি কামারুল আরেফিন অনিয়ম দুর্নীতির ও সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডের মাধ্যমে হাজার হাজার কোটি টাকার মালিক হয়েছেন। দেশ-বিদেশে অবৈধ সম্পদের পাহাড় গড়েছেন। তিনি কুষ্টিয়ায় টেন্ডারবাজি, মাদক ব্যবসায়, অবৈধভাবে বালু উত্তোলন, নদীর জায়গায় মাছ চাষ ও চাঁদাবাজি নিয়ন্ত্রণ করতেন। অসংখ্য মানুষকে নির্যাতন-নিপীড়ন করেছেন সন্ত্রাসী বাহিনীর এই গডফাদার। আমরা তাদের বিচার চাই। তাদের সকল অপরাধ সুষ্ঠু তদন্ত করা হোক। ইন্টারপোলের মাধ্যমে তাকে দেশে ফিরিয়ে এনে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানাচ্ছি। তাদের অত্যাচারে অসংখ্য মানুষ ঘরছাড়া, অনেক মানুষ শান্তিতে ঘুমাতে পারেনি।

জানা গেছে, ৫ আগস্ট শেখ হাসিনা পদত্যাগ ও দেশত্যাগের খবরে কুষ্টিয়ার বিভিন্ন জায়গায় বিক্ষুব্ধ জনতার ঢল নামে। আনন্দ উল্লাসে ফেটে পড়ে। এ সময় দুর্বৃত্তরা কুষ্টিয়া মডেল থানা, শহরের পিটিআই রোডের হানিফে বাড়ি, হানিফ ভাই কুষ্টিয়া সদর উপজেলার চেয়ারম্যান আতাউর রহমান আতার বাড়ি ও মিরপুর ভেড়ামারার সাবেক এমপি কামারুল আরেফিনের বাড়িতে ভাঙচুর, অগ্নিসংযোগ ও লুটপাট করে। এছাড়া জেলা ও থানা পর্যায়ে আওয়ামী লীগের বিভিন্ন কার্যালয়, বিভিন্ন নেতাকর্মীর বাড়িতে হামলা, ভাংচুর লুটপাট করা হয়।

ছাত্র-জনতা আন্দোলনের মুখে সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার পদত্যাগ ও দেশত্যাগের পরই এলাকা ছেড়ে আত্মগোপনে চলে গেছে কুষ্টিয়ার আওয়ামী লীগ ও অঙ্গ সংগঠনগুলোর নেতারা। এ বিষয়ে কথা বলার জন্য তাদের সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করলেও তাদের পাওয়া যায়নি।

কামারুল আরেফিনের অনুপস্থিতিতে এলাকায় রাজনৈতিক পরিস্থিতি ধীরে ধীরে স্থিতিশীল হচ্ছে। তার অপকর্মের বিরুদ্ধে জনসাধারণ এখন সোচ্চার হতে শুরু করেছে। আইনশৃঙ্খলা বাহিনী এখন তার বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিতে শুরু করেছে, তবে তার অবস্থান সম্পর্কে এখনও বিস্তারিত কিছু জানা যায়নি।

প্রসঙ্গত, কুষ্টিয়ায় বৈষম্যবিরোধী ছাত্র-জনতা আন্দোলনে মাথায় গুলি করে বাবলু ফারাজী (৫৮) নামে এক হকারকে হত্যা মামলায় কামারুল আরেফিনকে আসামি করা হয়েছে। মামলায় সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামালকে নির্দেশদাতারা আসামি করা হয়েছে। ১৯ আগস্ট নিহত বাবলুর ছেলে সুজন মাহমুদ বাদী হয়ে সিনিয়র জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট মাহমুদা সুলতানার আদালতে মামলাটি করেন।

এই মামলায় কুষ্টিয়ার সদ্য সাবেক তিন সংসদ সদস্য, কুষ্টিয়ার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার পলাশ কান্তি নাথ, কুষ্টিয়া মডেল থানার ওসি মাহফুজুল হকসহ আওয়ামী লীগ, যুবলীগ, ছাত্রলীগ, স্বেচ্ছাসেবক লীগ নেতাকর্মী ও জনপ্রতিনিধিসহ মোট ১২৬ জনের নাম উল্লেখ করা হয়েছে। মামলায় অজ্ঞাত আসামি করা হয়েছে আরও ৪০/৫০ জনকে।

সমাপ্তি

এই প্রতিবেদন তৈরিতে এলাকার বিভিন্ন মানুষের সাক্ষাৎকার এবং সংবাদ মাধ্যমের তথ্য ব্যবহার করা হয়েছে। কামারুল আরেফিনের বিরুদ্ধে তদন্ত চালিয়ে সঠিক তথ্য প্রকাশ করা জরুরি, যাতে সাধারণ মানুষ তাদের ন্যায্য অধিকার পেতে পারেন। আইন ও বিচার বিভাগের সুদৃষ্টি প্রয়োজন, যাতে ভবিষ্যতে কেউ ক্ষমতার অপব্যবহার করে সমাজে আতঙ্কের পরিবেশ সৃষ্টি করতে না পারে।

উল্লেখ: এই প্রতিবেদনটি একটি অনুসন্ধানী কাজের ভিত্তি মাত্র। যথাযথ তদন্ত এবং সাক্ষ্যপ্রমাণ ছাড়া কোনো অভিযোগ চূড়ান্ত বিবেচনা করা উচিত নয়।

Share

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

     এ ক্যাটাগরীর আরো সংবাদ