(আজকের দিনকাল):ঢাকা থেকে ভারতের আগরতলা অভিমুখে বিএনপির তিনটি অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনের ডাকা লং মার্চ কর্মসূচি আগামীকাল বুধবার। দুপুর ২টায় ব্রাহ্মণবাড়িয়ার আখাউড়া স্থলবন্দরের শূন্যরেখার কাছাকাছি গিয়ে থামবে লং মার্চ। এরপর স্থলবন্দর এলাকায় সমাবেশ করা হবে।
সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বলছেন, আগরতলা অভিমুখে লং মার্চে ঢাকাসহ বিভিন্ন এলাকা থেকে অন্তত দুই হাজার গাড়ির বহর আসবে।
সমাবেশে ৩০ থেকে ৪০ হাজার লোক সমাগমের ধারণা করা হচ্ছে। সে অনুযায়ী প্রস্তুতি নেওয়া হচ্ছে।
লং মার্চকে কেন্দ্র করে বুধবার দুপুর পর্যন্ত পণ্য রপ্তানি করা হবে বলে জানিয়েছেন আখাউড়া স্থলবন্দরের ব্যবসায়ীরা। বিশেষ করে দুপুর ১২টার মধ্যে মাছ রপ্তানির শেষ করার চিন্তা করছেন তারা।
তবে যাত্রী পারাপার স্বাভাবিক থাকবে বলে জানিয়েছন সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা।
আয়োজকরা বলছেন, লং মার্চে প্রভুত্ব নয়, বন্ধুত্বের বার্তা দেওয়া হবে। একই সঙ্গে ভারতের আগ্রাসী মনোভাবের প্রতিবাদ জানানো হবে। ভারতীয় গণমাধ্যমে বাংলাদেশ নিয়ে করা মিথ্যাচারের প্রতিবাদও জানানো হবে।
লং মার্চ ঘিরে বিশৃঙ্খলা রোধে কাজ শুরু করেছে প্রশাসন। পুলিশ, বিজিবি, র্যাবসহ আইন-শৃঙ্খলা রক্ষা বাহিনীও পরিস্থিতির ওপর নজর রাখছে। আজ মঙ্গলবার দুপুরে বিএনপি নেতাকর্মীদের সঙ্গে আলোচনায় বসেন ব্রাহ্মণবাড়িয়ার পুলিশ সুপার মোহাম্মদ জাবেদুর রহমান, বিজিবি-৬০ ব্যাটালিয়নের অধিনায়ক লেফটেন্যান্ট কর্নেল এ এম জাবের বিন জব্বার। এ ছাড়া সমাবেশস্থল পরিদর্শন করেন তারা।
এর আগে কর্মসূচি সফল করতে সোমবার সন্ধ্যায় ব্রাহ্মণবাড়িয়ার আখাউড়া সফর করে গেছেন যুবদল, ছাত্রদল ও স্বেচ্ছাসেবক দলের কেন্দ্রীয় নেতারা।
তারা আখাউড়া স্থলবন্দর ও এর আশপাশের এলাকা ঘুরে দেখেন।
স্থলবন্দরের কাস্টমস এলাকায় সাংবাদিকদের সঙ্গে আলোচনা করেন যুবদলের কেন্দ্রীয় সভাপতি মোনায়েম মুন্না। তিনি জানান, লং মার্চ থেকে প্রভুত্ব নয়, বন্ধুত্বের বার্তা দেওয়া হবে।
সাংবাদিকদের তিনি বলেন, ‘লং মার্চ সফল করতে আমরা এখানে এসেছি। আমরা কোথায় কী করব, সেটা দেখতে এসেছি। আলোচনা করে সমাবেশের স্থান নির্ধারণ করা হবে।’
তিনি বলেন, ‘বিএনপি জনগণের দল, বাংলাদেশের স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্বের প্রশ্নে আপোষহীন। বিএনপি চেয়ারপারসন আগেই বলেছেন দেশের বাইরে আমাদের প্রভুত্ব নেই, বন্ধু আছে। বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান বলেছেন, স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্বের প্রশ্নে কোনো আপোষ নয়। লং মার্চ থেকে আমরা ভারতকে এসব বার্তা দিতে চাই।’
এ কর্মসূচি ভারতের আগ্রাসী মনোভাব ও ভারতীয় গণমাধ্যমের মিথ্যাচারের প্রতিবাদ করে তিনি বলেন, ‘আগরতলায় আমাদের সহকারী হাইকমিশনে হামলা হয়েছে। আমরা এরইমধ্যে প্রতিবাদ জানিয়ে ঢাকায় পদযাত্রা করেছি, স্মারকলিপি দিয়েছি। দেশের প্রশ্নে আমরা আপোষহীন থাকতে চাই।’
ভারতের আগরতলায় বাংলাদেশের সহকারি হাই কমিশনারের কার্যালয়ে হামলার প্রতিবাদে ডাকা লং মার্চকে কেন্দ্র করে যুবদল, ছাত্রদল ও স্বেচ্ছাসেবক দল ব্যাপক প্রস্তুতি নিয়েছে। মঙ্গলবার বিকেল থেকে জেলা ও উপজেলা পর্যায়ে মাইকিং করে লং মার্চে যোগদানের আহ্বান করা হয়।
আখাউড়া উপজেলা যুবদলের আহ্বায়ক মো. জাকির হোসেন জানান, লং মার্চ সফল করতে কেন্দ্রীয় ও জেলা নেতৃবৃন্দ ঘুরে গেছেন। তাদের নির্দেশনা অনুযায়ী কাজ করা হচ্ছে। আশা করছি, সফল একটি লং মার্চ শেষে সমাবেশের আয়োজন করা হবে।
জেলা ছাত্রদলের সদস্যসচিব সমীর চক্রবর্তী বলেন, ‘লং মার্চকে কেন্দ্র করে কেন্দ্রীয়ভাবে নির্দেশনা এসেছে। আয়োজনকারী তিন সংগঠনের নেতৃবৃন্দ এলাকা ঘুরে গেছেন। তাদের নির্দেশনা অনুযায়ী আয়োজনকে সফল করতে আমরা প্রস্তুত আছি।’
আখাউড়া উপজেলা বিএনপির সদস্যসচিব মো. খোরশেদ আলম ভূঁইয়া বলেন, ‘আমরা একটি শান্তিপূর্ণ কর্মসূচি পালন করার প্রস্তুতি নিয়েছি। প্রশাসনের সঙ্গে এ নিয়ে আমাদের কথা হয়েছে। শান্তিপূর্ণ কর্মসূচি পালন করতে তারা সহযোগিতা করবেন বলে জানিয়েছেন।’
জেলা বিএনপির সদস্য কবীর আহমেদ ভূঁইয়া বলেন, ‘ভারতের আগ্রাসী মনোভাবের প্রতিবাদে আমাদের এ কর্মসূচি। ইচ্ছে করলে লাখো লোক জমায়েত করা সম্ভব। তবে স্থান অনুযায়ী লোক সমাগমের চিন্তা করা হচ্ছে।’
বিজিবির অধিনায়ক লেফটেন্যান্ট কর্নেল এ এম জাবের বিন জব্বার সাংবাদিকদের বলেন, ‘কর্মসূচি ঘিরে যেন বিশৃঙ্খলা নাহয় সেজন্য আমরা পুলিশকে নিয়ে কাজ করব। আশা করছি, সকলের সহযোগিতায় শান্তিপূর্ণভাবে এ কর্মসূচি পালিত হবে।’
পুলিশ সুপার মোহাম্মদ জাবেদুর রহমান বলেন, ‘শান্তিপূর্ণ কর্মসূচি পালনে শৃঙ্খলা রক্ষায় পুলিশের পক্ষ থেকে সব ধরনের প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছে। অন্তত দুই হাজার গাড়ির পার্কিংয়ের কথা মাথায় রেখে জায়গা নির্ধারণ করা হয়েছে। আশা করছি কর্মসূচি হবে শান্তিপূর্ণ।’-ডেস্ক
Leave a Reply