আজ ২৯শে মাঘ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ, ১২ই ফেব্রুয়ারি, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ

ডালিমে লুকিয়ে আছে প্রাণশক্তি আর হাজারো উপকারিতা

(আজকের দিনকাল):’আতা গাছে তোতা পাখি, ডালিম গাছে মৌ’ বলে ছড়া কাটেনি এমন কেউ নেই এদেশে। বাংলাদেশের সব জায়গায়ই কম বেশি ডালিম পাওয়া যায়।

ডালিম বা বেদানা কে আমরা চিনি ফল হিসেবে। বাড়ির ছোট থেকে বড় সকলেরই পছন্দের খাবার এটি। ডালিমের বৈজ্ঞানিক নাম Punica granatum এবং ইংরেজিতে বলা হয় Promegranate। হিন্দি, ফার্সি ও পশতু ভাষায় আনার বলা হয়। আজারবাইজানি ভাষায় নার এবং কুর্দি ভাষায় হিনার বলা হয়। নেপালি ও সংস্কৃত ভাষায় একে বলা হয় দারিম। দেশভেদে গোষ্ঠীভেদে ডালিমের নাম ভিন্ন হতে পারে তবে লাল টুকটুকে রুবি পাথরের মতো দানায় ঠাসা এই ফলকে অসংখ্য স্বাস্থ্য উপকারিতার কারণে সুপারফুড বলা হয়।

ইরান ও ইরাক থেকে ডালিমের বিস্তৃত ঘটে। প্রাচীনকালে ককেশাস অঞ্চলে এর চাষ হয় এবং সেখান থেকে ভারত উপমহাদেশে বিস্তার লাভ করে। বর্তমানে তুরস্ক, ইরান, সিরিয়া, স্পেন, আজারবাইজান, আফগানিস্তান, ভারত, পাকিস্তান, বাংলাদেশ, চীন, মিশর, বার্মা প্রভৃতি সহ বিশ্বের অনেক দেশেই এই ফল পাওয়া যায়। এ কারণেই বলা যায় ডালিম বিশ্বব্যাপী বিস্তৃত এবং পরিচিত একটি ফল।

ডালিমে রয়েছে ভিটামিন, বিউটেলিক অ্যাসিড, আরসোলিক অ্যাসিড। এছাড়াও কিছু অ্যালকালীয় দ্রব্য যেমন- সিডোপেরেটাইরিন, পেপরেটাইরিনন, আইসোপেরেটাইরিন, মিথাইলপেরেটাইরিন প্রভৃতি উপাদান রয়েছে। এসব উপাদান থাকার কারণে ডালিম আয়ুর্বেদিক ও ইউনানি চিকিৎসায় ঔষধ তৈরিতে ব্যবহৃত হয়। বিভিন্ন রোগ উপশমে ব্যবহৃত হওয়ায় ডালিমকে কবিরাজি মতে হৃদয়ের শ্রেষ্ঠ হিতকর ফল বলা হয়।

ডালিমের কাঁচা ও শুকনো উভয় খোসা আমাশয় রোগের জন্য উপকারী

ডালিমের যে শুধু দানাটাই ব্যবহার করা হয় তা নয়। ডালিম গাছের শিকড় থেকে শুরু করে বাকল, ফলের খোসা সবই ওষুধ হিসেবে ব্যবহার করা হয়। ডালিমের ফুল রক্তস্রাব নাশক।

অনেকের মতে ডালিম খেলে শরীরের রক্ত বৃদ্ধি পায়। এছাড়া ডালিমে থাকে প্রাকৃতিক ইনসুলিন যা ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে বেশ কার্যকর। ফলে ডায়াবেটিস রোগীদের জন্য ডালিম উপকারী

দুর্ঘটনায় শরীরের কোন অংশ কেটে গেলে, চিড়ে গেলে বা থেঁতলে গিয়ে রক্তপাত হলে সেই ক্ষতস্থানে ডালিম ফুল বা পাতা কচলিয়ে নিয়ে লাগিয়ে দিলে রক্তপাত বন্ধ হয়ে যায়। অর্থাৎ রক্তপাত বন্ধ করতেও ডালিম বেশ উপকারী।

বিভিন্ন জটিল রোগের ওষুধ হিসেবে ডালিম গাছের পাতা, ডাল, শিকড় সব কিছুই ব্যবহার করা হয়

এমন অনেক মানুষই রয়েছে যাদের নাক দিয়ে হঠাৎ করেই রক্ত ঝরে। শিশুদের মাঝে এই জিনিস টা বেশি লক্ষ্য করা যায়। আঘাত, পলিপ বা কোন কারণ ছাড়াই রক্ত পড়া শুরু করে নাক দিয়ে। তখন ডালিম ফুল কচলিয়ে রস বের করে নিয়ে সেই রস শ্বাসের মাধ্যমে নাকে নিলে রক্তপাত বন্ধ হয়ে যায়।

ডালিমের কাঁচা ও শুকনো উভয় খোসা আমাশয় রোগের জন্য উপকারী। ডালিমের খোসা সিদ্ধ করে আমাশয় রোগীরা খেলে ভালো ফলাফল পায়। এজন্য ডালিম খাওয়ার পরও ডালিমের খোসা শুকিয়ে সংরক্ষণ করতে পারেন।

ডালিম গাছের শিকড় থেকে ছাল নিয়ে গুঁড়ো করে তা মধুর সাথে মিশিয়ে সেসব শিশুদের যারা পেট বড় হওয়াসহ পেটের বিভিন্ন পীড়ায় ভুগে তাদের খাওয়ালে তারা এই রোগ থেকে উপশম পায়। এছাড়া ডালিম গাছের শিকড় কৃমিনাশক হিসেবে কাজ করে।

ডালিমে থাকে প্রাকৃতিক ইনসুলিন যা ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে বেশ কার্যকর।

বিভিন্ন জটিল রোগের ওষুধ হিসেবে ডালিম গাছের পাতা, ডাল, শিকড় সব কিছুই ব্যবহার করা হয়

নিজ পুষ্টিগুণে ভরপুর ডালিম যে শুধু ফল হিসেবে খাওয়া যায় তা না। বিভিন্ন জটিল রোগের ওষুধ হিসেবে ডালিম গাছের পাতা, ডাল, শিকড় সব কিছুই ব্যবহার করা হয়। তাই বাড়ির প্রতিটি সদস্যকেই ডালিম খাওয়ানো উচিত।-ডেস্ক

Share

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

     এ ক্যাটাগরীর আরো সংবাদ