আজ ২১শে আশ্বিন, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ, ৬ই অক্টোবর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ

ঢাকায় গতিমাপক যন্ত্র ছাড়াই চলছে গাড়ি

সিএনজিচালিত একটি অটোরিকশার গতিমাপক মিটার বলে কিছু নেই। ছবি: প্রথম আলো

ঢাকায় ছুটে চলা জীবনে নানা ধরনের ছোট-বড় যানই হচ্ছে এক প্রান্ত থেকে আরেক প্রান্তে যাওয়ার ভরসা। বাস, মিনিবাস বা টেম্পো-লেগুনার মতো কোনো যানে উঠলে শাঁই করে আপনাকে পৌঁছে দেবে গন্তব্যে! কিন্তু সে যানের গতি নিয়ন্ত্রণে রাখার পরিমাপক যন্ত্রটি কি ঠিক আছে? আদৌ আছে কি না, সেটাও দেখার বিষয়।

কারণ, ঢাকা মহানগরের বিভিন্ন সড়কে বেশির ভাগ দুর্ঘটনাই ঘটে যানবাহনের নিয়ন্ত্রণহীন গতির কারণে, বেপরোয়াভাবে গাড়ি চালানোর ফলে।

একটি বাসের ভাঙাচোরা ড্যাশবোর্ড। ছবি: প্রথম আলো

দেখা গেছে, রাজধানীর গণপরিবহনের বেশির ভাগ গাড়ি চলে ‘চোখের আন্দাজে’ বা ‘হাতের মাপে’। কারণ, এ শহরে স্বল্প দূরত্বের জন্য বেশির ভাগ চালক বা সংশ্লিষ্ট লোকজন গতিমাপক মিটারের (স্পিডোমিটার) প্রয়োজন অনুভব করেন না। এ জন্য গাড়িতে এই গতিমাপক মিটার থাকল কি থাকল না, এ নিয়ে তাঁদের তেমন মাথাব্যথাও নেই। কোনো কোনো গাড়িতে তো ড্যাশবোর্ড বলেই কিছু নেই, যেখানে ওই মিটার বসানো থাকে।

গত মঙ্গলবার ৫০টিরও বেশি বাস, মিনিবাস, লেগুনা ও সিএনজিচালিত গাড়ির ড্যাশবোর্ড দেখে ও চালকদের সঙ্গে কথা বলে এই তথ্য জানা যায়। গতিমাপক যন্ত্র না থাকায় চালক জানেন না গাড়িটি কত কিলোমিটার গতিতে চলছে। অথচ প্রচলিত নিয়মে এই মিটার না থাকাটা বেআইনি।

সিএনজিচালিত অটোরিকশার অকেজো গতিমাপক মিটার। ছবি: প্রথম আলো

 

গতি না বুঝে কীভাবে গাড়ি চালান, তা জানতে চাইলে মারফত নামের সিএনজিচালিত অটোরিকশার এক চালক বলেন, ‘আইডিয়ার ওপর চালাই। বারো বছর ধরে চালাচ্ছি।’

অনেক এলাকায় লেখা থাকে ‘গতি নিয়ন্ত্রণ অঞ্চল’ বা ‘সর্বোচ্চ গতি ৪০ কিলোমিটার’। সে ক্ষেত্রে কী করেন? এ ব্যাপারে চালক বলেন, ‘এ রকম থাকলে একটু “হালকা” চালাই আরকি!’

শুধু অটোরিকশার চালক নন, বাস ও লেগুনাচালকদের মুখেও একই কথা।
অর্ক ট্রান্সপোর্টের চালক তহিদুল বলেন, ‘১৮ বছর ধরে গাড়ি চালাই। হাতের আন্দাজ হয়ে গেছে। সে হিসাবেই চালাই। অসুবিধা হয় না।’

সিএনজিচালিত অটোরিকশার অকেজো গতিমাপক মিটার। ছবি: প্রথম আলো

 

গাড়ির গতিনির্দেশক মিটার কাজ করে কি না, জানতে চাইলে আলিফ পরিবহনের এক চালক ড্যাশবোর্ড দেখিয়ে বলেন, ‘এই তেলের মিটারটা চলে। বাকিগুলোর খবর জানি না।’

মতিঝিল-বাড্ডা চলাচলকারী ‘৬ নম্বর বাস’ নামে পরিচিত একটি বাসে উঠে দেখা যায়, ভাঙাচোরা ড্যাশবোর্ড। গতিনির্দেশক মিটার বলেও কিছু নেই।

এগুলো কেন ঠিক করেন না—এমন প্রশ্নের উত্তরে গতিনির্দেশক মিটারের দিকে নির্দেশ করে সুমন নামে ওই গাড়ির চালক বলেন, ‘এটা মালিকের ব্যাপার। আমি জানি না।’

এ অবস্থায় গাড়ি চালাতে গিয়ে দুর্ঘটনায় পড়েছেন কি না—এমন প্রশ্নের উত্তরে বলেন, ‘হ্যাঁ, হয়! এই সেদিন ফার্মগেটে একটা গাড়িতে লাগল। কয়েকজন আহতও হয়।’

সিএনজিচালিত অটোরিকশার অকেজো গতিমাপক মিটার। ছবি: প্রথম আলো

অনেক ক্ষেত্রেই দেখা যায়, চালকেরা জানেনই না যে ড্যাশবোর্ড ও গতিনির্দেশক মিটার কাকে বলে এবং এর প্রয়োজনীয়তা কী।

নিকেতন-ফার্মগেট সড়কপথে চলাচলকারী লেগুনার এক চালক বলেন, ‘এসব বুঝি না ভাই, হাতের মাপে চালাই।’

বাংলাদেশের দ্য মোটর ভেহিকলস অরডিন্যান্স ১৯৮৩-এর আর্টিকেল ৭১-এর ৩ (বি)-তে গাড়ি চালানোর অনুমোদনের কিছু শর্ত দেওয়া আছে। সব ধরনের ‘অনুমোদনের জন্য শর্ত’ অংশে বলা আছে, ‘কোনো অনুমোদিত গাড়ি তার গতির চেয়ে বেশি গতিতে চালায় কি না, তা দেখতে হবে।’

অথচ গতিনির্দেশক মিটার না থাকায় চালকের পক্ষে সর্বোচ্চ বা সর্বনিম্ন গতি মেনে গাড়ি চালানো অসম্ভব।

দ্রুত বেগে বাস চলছে। তবে গতিমাপক মিটার দেখাচ্ছে শূন্য গতি। ছবি: প্রথম আলো

এ বিষয়ে আজ বুধবার সকালে বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষের (বিআরটিএ) উপপরিচালক (এনফোর্সমেন্ট) আ স ম হাসান আল আমিন বলেন, ‘এ ধরনের গাড়ির যাত্রী ও পথচারী উভয়ের জন্য ঝুঁকিপূর্ণ। আমরা প্রতিনিয়ত এ রকম গাড়ির জরিমানা করছি। কালও (সোমবার) চারটি গাড়ি জরিমানা করেছি।’

বিআরটিএর পরিচালক (ইঞ্জিনিয়ারিং উইং) মো. নূরুল ইসলাম বলেন, একটি গাড়ির অবশ্যই গতিমাপক মিটার থাকতে হবে। তিনি বলেন, গতিমাপক মিটার না থাকলে একটি গাড়ি কখনোই রাস্তায় চলার অনুমোদন পেতে পারে না।

Share

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

     এ ক্যাটাগরীর আরো সংবাদ